Monday, November 9, 2020

চলমান সিঁড়ি, ফুটব্রিজ সংস্কারে ভোল বদলাচ্ছে বারাসত স্টেশন

 যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে লক্ষ রেখে সংস্কার করা হচ্ছে ফুট ওভারব্রিজের, তৈরি হচ্ছে চলমান সিঁড়ি, প্রবীণদের জন্য লিফট। যাত্রীরা রোদ-জলে অসুবিধায় যাতে না পড়েন, তার জন্য যে সব জায়গায় ছাউনি ছিল না, সেখানে তৈরি হচ্ছে ছাউনি। স্টেশন চত্বর ঘিরে দেওয়া হচ্ছে গার্ডরেল দিয়ে। এ ছাড়াও, দেওয়ালে লাগানো হচ্ছে কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, মনীষীদের ছবি। দীর্ঘদিন লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে শিয়ালদহের ধাঁচে এ ভাবেই সেজে উঠছে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বারাসত জংশন স্টেশন। রেল সূত্রের খবর, বারাসত স্টেশনকে আগেই মডেল স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বার স্টেশনের নানা পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে জোরকদমে। আগামী বুধবার থেকে ট্রেন চলাচল ফের শুরু হলে নতুন পরিকাঠামোর কয়েকটির সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।



এত দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনে ভিড় নেই বললেই চলে। তাই সুষ্ঠু ভাবে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী। তিনি আরও বলেন, ‘‘চলমান সিঁড়ি, বয়স্কদের জন্য লিফট বসানো ছাড়াও অকারণ স্টেশনে ঢুকে পড়ার প্রবণতা আটকাতে বারাসত স্টেশন গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে।’’


রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদমের পরে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বারাসতই একমাত্র জংশন স্টেশন যেখানে চলমান সিঁড়ি তৈরি হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ওই স্টেশনের এক আধিকারিক জানান, জংশন হিসেবে বারাসত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। শিয়ালদহ থেকে এসে এখান থেকেই বনগাঁ এবং বসিরহাটের লাইন ভাগ হয়ে যায়। ফলে এই স্টেশনে যাত্রীদের চাপও বেশি থাকে। তাই চলমান সিঁড়ি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


বারাসত স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, অবৈধ নির্মাণ ভেঙে লোহার গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে গোটা স্টেশন চত্বর। এক নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত চলমান সিঁড়ি তৈরির কাজও প্রায় শেষ। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, অসচেতন ভাবে লাইন পারাপারের জন্য দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। সেই সমস্যার সমাধানে গার্ডরেল দিয়ে স্টেশনের চার দিক ঘিরে ফেলা হচ্ছে। তবে স্টেশনের এ-পার থেকে ও-পারে যাওয়ার জন্য পুরনো ফুটব্রিজটিই ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে।


রেল সূত্রের খবর, স্টেশনের সর্বত্র ছাউনি না থাকায় বৃষ্টি হলেই ভিজতে হত অনেক যাত্রীকে। সেই সমস্যা থেকে বাঁচতে পুরো স্টেশনে ছাউনি নির্মাণের কাজও চলছে। বারাসত স্টেশনটি শুধুমাত্র সাজিয়ে তুলতেই ৫ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল। এর বাইরে রয়েছে নির্মাণের খরচ। কিছু দিনের মধ্যেই সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে।


এই কাজের প্রশংসা করছেন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। বারাসত কলেজের ছাত্র রাজা দে বলেন, ‘‘স্টেশন চত্বর ঘিরে দেওয়ায় অকারণে লোকের আনাগোনা, স্টেশনে বসে আড্ডা দেওয়া কমবে। ফুটব্রিজ ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমবে।’’


Source: Ananda Bazar

চিনা আলোর সামগ্রীকে টেক্কা দিচ্ছে বারাসতের এই ‘প্রদীপ গ্রাম’

 দিওয়ালির আলোর বাজার ছেয়ে গিয়েছে চিনা সামগ্রীতে। রং বেরঙের টুনি বাল্ব, এলইডি আলোর পসরা সাজিয়ে বসছে দোকানদার। কালীপুজো হোক কিংবা দিওয়ালি মণ্ডপ থেকে ঘর আলোকসজ্জাতেও থাবা বসিয়েছে সস্তার এসব চিনা আলো। এসেছে প্লাস্টিকেরতৈরি প্রদীপও। কিন্তু বারাসাত থেকে একটু দূরে চালতাবেড়িয়া। আর এখানেই মাটির তৈরি হাতে গড়া প্রদীপ আর পিলসুজ এখনও সমান তালে টক্কর দিচ্ছে বাজারে।


এই গ্রামের কুটির শিল্পের মোটামুটি গোটা পশ্চিমবঙ্গে বেশ নামডাক আছে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এখানকার হাতে তৈরি মাটির জিনিস রফতানি হয়।


যদিও তৃতীয় পক্ষের ব্যবসায়ীরা এখানকার হরেক কিসিমের প্রদীপ কিনে নিয়ে তারাই পাইকারি দরে বিক্রি করে বাজারে। কুটির শিল্পীরা তাদের হাতে তৈরি জিনিসগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করে বানান। 


দু’হাতের দশ আঙুলের জাদুতে হরেক রকমের মাটির প্রদীপ তৈরি করেন এই পুরুষ থেকে মহিলা সকলে। বারাসত থেকে একটু বেড়িয়ে যশোর রোড হয়ে যেতে দু’পাশে চোখে পড়বে মাটির বিভিন্ন মূর্তি, পট, বিশেষ করে পিলসুজ আর প্রদীপ তৈরির কাজ চলছে। 


শুধু জাতীয় সড়কের দু'পাশেই এই এলাকার ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের মতো ছেয়ে গিয়েছে মাটির প্রদীপ তৈরির শিল্পে। সারা বছরের চব্বিশ ঘণ্টায় এখানে প্রদীপ তৈরির কাজ চলে। করোনা মহামারীর জন্যে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।


এই সময় চালতাবেড়িয়ায় এই প্রদীপের গ্রামে প্রথম দু'সপ্তাহ প্রদীপ রফতানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল এখানকার শিল্পীদের। এরপর পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে নিজেরাই শিল্পীদের কাছ থেকে মাটির জিনিস নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী পঙ্কজ পাল।


নতুন প্রজন্মের কিছু ছেলে মেয়েরা এই পেশায় আসতে চাইছিল না। গত বছর পর্যন্ত এমনটাই ছিল। তবে এই বছর অনেকে কাজ চলে যাওয়াতে এবং পরিবারে আর্থিক সঙ্কট শুরু হওয়াতে তারা এই কুটির শিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।


বছর ষাটের জয়দেব পাল বলেন, 'করোনা মহামারী হোক বা বছরের অন্যান্য সময় কুটির শিল্পীদের বাইরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেই কাজ করলেই রোজগার হয়, এতে করোনারও ভয় নেই উপার্জনও ভালো হয়। যার ফলে এখন গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে মাটির জিনিস বানানোর আগ্রহ হচ্ছে।


হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে সকলে এই মাটির জিনিস তৈরি করেন। একটি পিলসুজের উপরে এক সঙ্গে পাঁচ, সাত, নয়, একুশ, একান্নটি প্রদীপও তৈরি হচ্ছে। একান্নটি প্রদীপ থাকলে নাম, 'একান্ন দিয়া।' বাজার ধরতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রদীপের আদল। থাকছে বিভিন্ন কারুকাজ, সুক্ষ থেকে সুক্ষ কাজ যত্ন সহকারে করেন এখানকার শিল্পীরা। 


স্বামীর সঙ্গে প্রদীপ বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন তসলিমা বিবি। বললেন, '১০’বছর ধরে এই কাজ করছি। আমার মতো অনেকেই প্রদীপ তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।' কারখানা মালিক কামাল ইসলাম বলেন, 'এলাকার মানুষ রোজগার করছেন, আমাদের ব্যবসাও বেড়েছে আগের থেকে অনেক।'


বাপ ঠাকুরদার সময় থেকে চলে আসা শিল্পের ধরণও আগের অনেক বদলেছে। মানুষ বিভিন্ন ধরণের মাটির কারুকার্যের জিনিস দিয়ে ঘর সাজাতেও এখন পছন্দ করে। এসবের কথা মাথায় রেখে সেই মতন জিনিস করেন শিল্পীরা। চালতাবেড়িয়ার কুটির শিল্পীরা মনে করেন মাটির প্রদীপ এর সঙ্গে প্লাস্টিক বা চিনা আলোর পাল্লা দিয়ে পারবে না।


কারণ শিল্পীরা মনে করেন, পুজো-আচ্চার ক্ষেত্রে ভক্তিভাব প্রকাশে মাটি প্রদীপকে এখনও বেশী গুরুত্ব দেন মানুষ। তবে চিনা মালের সঙ্গে পাল্লা দিতে দামের উপরে রাশ টানতেই হচ্ছে এটাই মূল সমস্যা।


এখানকার মানুষের মাটির সঙ্গে কারবার তার জন্যে এখানে সকলে মা মনসার পুজো করেন। মূর্তি পূজার থেকে তারা বিশ্বাস করেন ঘট পুজায়। মাটির ঘটে দেবদেবীর ছবি এঁকে পুজো করা হয়। শিল্পীরা সকলে ২০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে বেতনে কাজ করেন।


কাজের মান অনুযায়ী কারও একদিনের রোজগার দুশো থেকে তিনশো টাকা। প্রদীপ তৈরির পাশাপাশি দিওয়ালির জন্য লক্ষ্মী-গণেশ মূর্তিও গড়ছেন অনেকে। কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, গুজরাত, অসম, পটনায় চলে যাচ্ছে এখানকার লক্ষ্মী-গণেশ। 

বাইরের রাজ্যেও বেশ চাহিদা রয়েছে এখানকার মাটির জিনিসের। এই গ্রামের শিল্পীরা মনে করেন চিনা সামগ্রী বর্জনের ডাক নয়, প্রতিযোগিতায় নেমে চিনা সামগ্রীকেই হারাবে তাদের হাতে তৈরি মাটির প্রদীপ।



Source: Indian Express 

Thursday, October 22, 2020

বারাসতের বাড়ির পুজোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী!‌ ষষ্ঠীতে অপেক্ষা করছে চমক

 বৃহ‌স্পতিবার সকালে বারাসতেও হাজির হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে সশরীরে নয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বারাসত পুরসভার ৩০ নং ওয়ার্ডের নিশীথ রায়চৌধুরীর বাড়ির পুজো উদ্বোধন করবেন তিনি। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রকাশিত উদ্বোধন পত্রিকার লেখক ও টেলিকম বিভাগের অবসর প্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার নিশীথ রায়চৌধুরীর কথায় কর্মজীবনে তিনি অপটিক্যাল ফাইবার বিছিয়ে ছিলেন তিনি। আবার তিনিও রামকৃষ্ণ বিবেকান্দেরও ভক্ত। নরেন্দ্র মোদিও ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও বিবেকান্দকে আদর্শ করেছেন। ফলে কর্মজীবনে বিছানো সেই অপট্যিকাল ফাইবারের সাহায্যে আসা ইন্টারনেট দিয়েই তাঁর বাড়ির পুজোর উদ্বোধন করবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।


২৩০ বছর আগে তাঁদের সপ্তম পুরুষ সর্বেশ্বর রায় এই পুজো শুরু করেন। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় দশভূজার পুজো আজও হয়ে আসছে বলে জানান নিশীথ রায়চৌধুরী। বাংলাদেশে বর্তমানে ভাটদি বাবু বাড়ির পুজো হিসাবে সবাই জানে সেই পুজোটিকে। দেশভাগের পর তাঁদের কয়েক জন বংশধর এই দেশে চলে আসেন। ১৯৫৪ সালে অন্যদের মত নিশীথ রায়চৌধুরীও চলে আসেন। পড়াশোনার পর মেধাবী নিশীথ রায়চৌধুরী টেলিকম বিভাগে চাকরি পান। আর্থিক সাচ্ছন্দ ফিরলে ১৯৯২ সাল থেকে বাড়িতে শুরু করেন দেবী দুর্গার পুজো। পারিবারিক পুজোর রীতিনীতি এই দেশে পুজোয় স্বপরিবারে সবাই সামিল হন। সেই অর্থে এই পুজোর কোনও উদ্বোধন কোন বছরই হয়নি। এই বছর করোনা অতিমারির জন্য পুজোর আয়োজন অত্যন্ত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এবছর আর আসছেন না বলে জানান তিনি। আর তারই মধ্যে চমকে দেওয়ার মত যোগাযোগ এনে দেন পাড়ার কয়েকজন। দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাড়ির পুজো ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেম। আক্ষরিক অর্থে এবারই প্রথম তাঁদের বাড়ির পুজো উদ্বোধন হবে। তাও আবার প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে। তাতেই উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যরা। ইতিমধ্যে দিল্লী থেকে টেকনিক্যাল টিম চলে এসেছে তাঁদের বাড়িতে। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধনের ট্রায়াল রানও শুরু হয়ে গেছে। এই বাড়ির কন্যা সুপর্ণা গাঙ্গুলীদের নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। কারন ছোট করে আয়োজন করা পুজো দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সারা দেশ দেখবে। তাই চারিদিকে আলপনা দেওয়া ও নান্দনিক ভাবে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত তাঁরা।

সুত্রঃ নিউজ ১৮ বাংলা 


Monday, October 5, 2020

এবছর জৌলুসহীন বারাসাতের কালীপুজোও

 করোনাসুরের দাপটে এবছর যেমন দুর্গা পুজোর যেমন মন মরা, অন্যান্য বছরের মতো জাঁকজমক আরম্ভর নেই ঠিক তেমনই কলকাতার দুর্গাপুজোর মতো এবছরের বারাসাতের কালীপুজোও অন্যান্য বারের মতো জমকালো না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুজো কমিটিগুলি।


জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বারাসত পুরসভার সঙ্গে বারাসাতের বিগ বাজেটের পুজো কমিটিগুলির দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এবার খোলামেলা মণ্ডপ করা হবে। জমকালো পুজো প্যান্ডেল চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাইয়ের প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সেই টাকায় শহরের দুঃস্থদের সাহায্য ও গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা।


বারাসতের কালীপুজোর সুনাম শুধু এই বাংলা নয়, ওপার বাংলা সহ গোটা দেশে রয়েছে। বেশ কয়েকটি পুজো কমিটির বাজেট কোটির উপরে। তাই প্রত্যেক বছরই দুর্গাপুজোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় কালী পূজার প্রস্তুতিও। কিন্তু এবছর পরিস্থিতি ভিন্ন,তাই একদিকে নজরকাড়া পুজো মন্ডপ, আলোকসজ্জা ও দর্শক টানার যে লড়াই, তা থেকে এবার বিরত থাকছে বারাসাতের প্রথম সারির কালীপুজোর কর্মকর্তারা। বারাসত পুরসভার প্রশাসক জানান, এ শহরের তিনটি বড় পুজো কমিটির কর্মকর্তারা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীতে রয়েছেন। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে আগের মতো পুজো হওয়া সম্ভব নয়। তাই বড় পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আর কেউ আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করবে না।

সুত্রঃ Bengali One India 

Wednesday, September 16, 2020

আইনজীবী রজত দে হত্যাকাণ্ডে যাবজ্জীবন স্ত্রী অনিন্দিতার, রায় ঘোষণা বারাসত আদালতের

 আইনজীবী রজত দে (Rajat Dey) হত্যাকাণ্ডে সাজা ঘোষণা করল বারাসত আদালত। সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে দোষী অনিন্দিতা পালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। যদিও রজতের স্ত্রীর সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়েছিলেন নিহত আইনজীবীর পরিবার। তবে আদালতের রায়ে খুশি তাঁরা। 


গত ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে নিউটাউনের ডিবি ব্লকের ফ্ল্যাটে আইনজীবী রজত দে’র অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। আইনজীবীর বাবা দাবি করেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাঁর আইনজীবী পুত্রবধূ অনিন্দিতা পাল (Anindita Paul)। সে-ই রজতকে পরিকল্পনামাফিক খুন করিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওই বৃদ্ধ। যদিও অনিন্দিতা সেই দাবি খারিজ করে দেয়। প্রথমে জানায়, স্বামীর মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা। পরে আবারও নিজের বয়ান বদল করে। জানায়, তার স্বামী রজত আত্মঘাতী হয়েছেন। তদন্তে নেমে পুলিশ অনিন্দিতাকে গ্রেপ্তার করে। হাই কোর্টে তার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ঘটনার জল গড়ায় সর্বোচ্চ আদালতেও। সুপ্রিম কোর্ট থেকেও জামিন পায় অনিন্দিতা। তাই আপাতত জেলের বাইরেই ছিল সে।


এদিকে, মূল মামলাটি বারাসত আদালতে (Barasat Court) চলছিল। একাধিক সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়। সোমবার মামলার শুনানি চলাকালীন পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারক। তারপরই তিনি জানিয়ে দেন, দুর্ঘটনা কিংবা আত্মহত্যা নয়। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে রজতকে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় রজতের স্ত্রী অনিন্দিতাকেই দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। অনিন্দিতার চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছিলেন নিহতের পরিজনেরা। বুধবার সকালে বারাসত আদালতের বাইরেও প্রচুর মানুষ সেই একই দাবি জানান। তবে বিচারক সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে অনিন্দিতার যাবজ্জীবন সাজার কথাই ঘোষণা করেন। যেহেতু অনিন্দিতার সন্তান অনেকটাই ছোট, সেকথা মাথায় রেখে এই রায় দেওয়া হয়েছে। রায় শুনে এদিনও এজলাসে ফের কান্নায় ভেঙে পড়ে অনিন্দিতা। সে বলে, “আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বিশ্বাস করব ফাঁসানো হয়েছে।” 

Source: Sanbad Pratidin


Sunday, August 23, 2020

দীর্ঘ অপেক্ষায় সাফল্য, ১২০০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ মেরুর শব্দতরঙ্গ শুনলেন বারাসতের শ্রোতা

 মেরু অভিযানের উদ্দেশ্য শুধুই যে দুর্গম অঞ্চল জয়ের বিজয় নিশানা ওড়ানো, তা তো নয়। সেখানকার প্রকৃতি, আবহাওয়া বুঝতে অভিযাত্রী বিজ্ঞানীরা রীতিমতো তাঁবু খাঁটিয়ে সেখানে দিন কাটান। বরফ মোড়া জমিতে শরীর সূঁচ ফোটানোর মতো ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে বছরের পর বছর চলে পরীক্ষা। সেসব গবেষণা কতদূর এগোল, তা জানাতে প্রতি বছর একদিন করে রেডিও সিগন্যালের (Radio Signal) মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্প্রচার করেন বৈজ্ঞানিকরা। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। ব্যতিক্রম অন্য একটি ঘটনা। সুদূর দক্ষিণ মেরু থেকে সেই প্রচারিত সেই শব্দতরঙ্গ এসে পৌঁছল বারাসতে। দীর্ঘ চেষ্টার পর এখানকার হ্যাম রেডিও অপারেটর বাবুল গুপ্ত প্রথমবার শুনতে পেলেন অ্যান্টার্কটিকার শব্দ। আর তাতেই উচ্ছ্বসিত তিনি।


বাবুল গুপ্তর এই সাফল্য কিন্তু সহজে আসেনি। তার কারণ বিবিধ। প্রথমত ভৌগলিক দিক থেকে ভারতের অবস্থান এই দক্ষিণ মেরুর (South Pole) এই বৈজ্ঞানিক ক্যাম্প সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিপরীতে। ফলে সেখান থেকে সম্প্রচারিত রেডিও সিগন্যাল শুনতে পাওয়াটা দুর্লভ। এছাড়া বহু বছর ধরে অপেক্ষার পরও রেডিও সিগন্যাল ধরা দেয় না। তাই তো মেরুপ্রদেশ থেকে এই সম্প্রচার শোনার জন্য বছরের পর বছর ধরে মানুষজন অপেক্ষা করে থাকেন। কবে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ধরা দেবে সেই শব্দতরঙ্গ। 


সেভাবেই জীবনের অনেকগুলো বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন বাবুল গুপ্ত। কিন্তু আশা ছাড়েননি। তিনি নিজে একজন হ্যাম রেডিও অপারেটর। আর তাতে তাঁর নিজের কৃতিত্বও তো কম নয়। পৃথিবীর সব ক’টি দেশের সঙ্গে স্রেফ রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের বিরল কাজের নজির রয়েছে বারাসতের বাবুল গুপ্তর। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সাম্মানিক সদস্য তাই জানতেন, তাঁর এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান একদিন হবেই, আসবেই সাফল্য।


সাফল্য এলও। গত ৮ তারিখ, দক্ষিণ মেরুর LRA 36 ক্যাম্প, যা আর্জেন্টিনায় এলাকায় অবস্থিত, সেখান থেকে রেডিও সিগন্যাল মারফত শব্দতরঙ্গে এসে পৌঁছল বারাসতে। বাবুল গুপ্ত সেখান থেকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনে, তা রেকর্ড করে রাখেন। তিনি যে শুনতে পেয়েছেন, তার প্রমাণ স্বরূপ রেকর্ডিং ইমেলে পাঠিয়ে দেন LRA 36 ক্যাম্পে। উত্তরও দেন দক্ষিণ মেরুতে অবস্থানকারী বৈজ্ঞানিক দল। তাঁদের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান যে ১২হাজার কিলোমিটার দূর থেকে কেউ শুনতে পেয়েছেন, তা জেনে তাঁরা আপ্লুত। আর এই দুর্লভ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ LRA 36 বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে বাবুল গুপ্তকে দেওয়া হল সার্টিফিকেট।

Source: Sanbad Pratidin

Thursday, August 20, 2020

লালারসের পরীক্ষা হবে বারাসত হাসপাতালে

স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদন দেওয়ায় লালারসের নমুনা পরীক্ষা এ বার বারাসত জেলা হাসপাতালেও করা যাবে। তার জন্য সেখানে প্রাথমিক পরিকাঠামোও তৈরি হয়ে গিয়েছে। অগস্ট থেকেই পরীক্ষার কাজ শুরু করা যাবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, এর ফলে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্টও দ্রুত মিলবে, পাশাপাশি দৈনিক অনেক বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। কলকাতার পরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। কিন্তু দৈনিক পরীক্ষা এখানে অনেক কম হচ্ছে বলেই অভিযোগ। 


উত্তর ২৪ পরগনায় বর্তমানে লালারস পরীক্ষা হচ্ছে শুধুমাত্র সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “দিন কয়েক আগে অনুমোদন এসেছে। তার পরেই পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে যন্ত্রপাতিও এসে যাবে।” এখানে পরীক্ষা শুরু হলে বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা এবং বনগাঁ মহকুমার লোকজনও লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন। তখন লালারস সংগ্রহের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। রিপোর্ট দ্রুত জানা গেলে স্বাস্থ্য দফতর তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ করতে পারবে বলেই মনে করা হচ্ছে।


(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)


Source: Anandabazar

Wednesday, August 5, 2020

পাত্রী ‘করোনা’, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্বিতীয় বিয়ে সারলেন এই বৃদ্ধ!

 ঘরে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে সাক্ষী রেখে দ্বিতীয়বার বিবাহ সারলেন বারাসতের (Barasat) এক রাজনৈতিক কর্মী। বাধা দেওয়া তো দূর, লকডাউনের (Lockdown) নিয়ম মেনে ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু মানুষ শামিলও হন সেই বিয়েতে। কারণ, পাত্রী যে ‘করোনা’। ব্যাপারটা কী?



করোনা (Corona Virus) আতঙ্কে কাঁটা প্রত্যেকে। স্রেফ ভয় থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অমানবিক আচরণ করছেন করোনা রোগী ও করোনায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে। কোথাও বাড়ি ছাড়া করা হচ্ছে আক্রান্তদের। কোথাও একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে রোগীকে দূরে সরিয়ে রেখে তো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, এটাই সকলকে বোঝাতে চেয়েছিলেন বারাসাতের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কালী রুদ্র। চেয়েছিলেন অভিনব কিছু করতে। আর সেই কারণেই ‘করোনা’কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।


নির্দিষ্ট সময়ে বর বেশে বেশ কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে করোনা ভাইরাসের রূপক এক মূর্তিকে মালা পরিয়ে দেন ওই বৃদ্ধ। বেলপাতা ও মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বিবাহের আচার। তাঁর কথায়, “রোগকে আটকাতে হবে। রোগীকে দূরে সরিয়ে, সমাজ ছাড়া করে কোনওদিনও রোগের মোকাবিলা সম্ভব নয়। এটাই সকলকে বোঝাতে চাই।” কালীবাবুর এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই সারা ফেলে দিয়েছে বারাসতের বনমালীপুরে। অনেকেই বুঝতে শুরু করেছেন। নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।

Source: Sanbadpratidin

সম্প্রীতির বাংলা, বারাসাতে রামের পুজো করলেন মুসলিমরা!

 সব অপেক্ষার অবসান। ধূমধাম করে অযোধ্যায় হয়ে গেল রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে সামনে থেকে উপস্থিত থাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর হাতে দিয়েই হয়ে শিলান্যাস। অনুষ্ঠানের সময় নিজের বক্তৃতায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে রাম মন্দির আন্দোলনের তুলনা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বুধবার তিনি বিশ্বজুড়ে রামের প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। ভারত তথা বিশ্ব, এমনকী মুসলিম প্রধান দেশেও রামায়ণের অস্তিত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। আর সেখানেই যেন সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিল বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ।


বুধবার অযোধ্যায় যখন ধূমধামের সঙ্গে চলছে ভূমিপুজো, তখন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের নতুনপল্লিতে হিন্দু মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষই একযোগে রামের পুজো করলেন। তাঁদের কথায়, রাম কোনও বিশেষ ধর্মের প্রতিভূ নন। রাজা হিসেবে রামচন্দ্রের প্রধান ধর্ম হল দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। নতুনপল্লির স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব আহমেদ খানের নেতৃত্বে আয়োজিত হয়েছিল ওই পুজো। অবশ্য রাজীব আহমেদ খান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিজেপি সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি। ফলে এর সঙ্গে বিজেপির নাম জুড়ে গেলেও হিন্দু-মুসলিম একযোগে রাম পুজো করছে, বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষও।


শুধু রাজীব আহমেদ খানই নন, বিজেপি কর্মী মোহম্মদ বাবলু মোল্লা ও রহিম মণ্ডলদের পাশাপাশি বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বীও এই পুজোয় যোগদান করেছিলেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার এ এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই।


এদিন নিজের ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'রাম ঐক্যের প্রতীক। যেভাবে ভগবান রামের জন্যে জয় পেতে সকলে একসঙ্গে এত বছর ধরে চেষ্টা করেছেন, যেভাবে সকলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে গান্ধীজির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই আজ দেশবাসীর প্রচেষ্টায় রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হল।'


অপরদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সরাসরি রাম মন্দির প্রসঙ্গে কিছু না বললেও ট্যুইটে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে লেখেন, 'হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান -একে অপরের ভাই-ভাই! আমার ভারত মহান, মহান আমার হিন্দুস্তান! আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখব।' রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর আবহে সেই সম্প্রীতির ছবিটাই যেন ফুটে উঠল। হয়ত তা একটি জায়গাতেই, কিন্তু সেটারও প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য।


Source: Ei Samay

Thursday, July 30, 2020

করোনায় আয় বন্ধ, বাদ্যযন্ত্র ছেড়ে দুধ বিক্রিতে শিল্পী

 গানবাজনাই ছিল ধ্যানজ্ঞান। প্রথাগত শিক্ষা সে ভাবে না পেলেও অধ্যাবসায়ের জোরে বারাসতের হৃদয়পুরের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায় রীতিমতো নামকরা শিল্পী। পার্কাশন বাজান। তবলা, কঙ্গো-সহ একাধিক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে জানেন। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কলকাতা, মুম্বইয়ের নামজাদা গায়ক-গায়িকাদের সঙ্গে বাজিয়েছেন। সঙ্গীতের সূত্রে বিদেশেও গিয়েছেন তিনি। কয়েক মাস আগেও জলসায় চুটিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন। কিন্তু করোনার কারণে শহরতলির সফল এই সঙ্গীতশিল্পীর জীবন ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে। লকডাউন তাঁকে বাধ্য করল পেশা বদলাতে। পেটের টানে গৌরাঙ্গ এখন দুধ বিক্রি করেন।


বারাসতের পশ্চিম হৃদয়পুর হরিহরপুর এলাকায় থাকেন গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায়। সুযোগ পেয়েছেন মহম্মদ আজিজ, বিনোদ রাঠোর থেকে বাপ্পি লাহিড়ির অনুষ্ঠানে বাজানোর। কলকাতায় শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরী থেকে হালফিলের শিল্পীদের সঙ্গেও বাজানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। কিন্তু পরিস্থিতিতে জলসা-সহ সব রেকর্ডিং বন্ধ। ফলে কাজ হারিয়েছেন গৌরাঙ্গ। মাস তিনেক বসেই ছিলেন। কিন্তু এই ভাবে সংসার চলবে না। ছেলের পড়াশোনোর খরচও রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই পেশা বদলের সিদ্ধান্ত। শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতায় এখন তিনি দুধ বিক্রির ব্যাবসায়।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বর্ষীয়ান শিল্পী শিবাজি চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'শিল্পীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। গৌরাঙ্গবাবু একা নন, ওঁর মতো আরও অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন অন্য রাস্তা খুঁজে নিতে। তবে উনি তো তাও অন্য কাজের সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু বহু শিল্পী এমন শারীরিক অবস্থায় বা বয়সে পৌঁছে গিয়েছেন, যাঁদের পক্ষে অন্য কাজেও যাওয়া সম্ভব নয়।' শিবাজির আশঙ্কা, 'মানুষের পেটে খাবার থাকলে তবেই তাঁরা বিনোদনের কথা ভাবেন। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার একেবারে শেষ পর্যায়ে শিল্পজগৎ পুরোনো গতি ফিরে পাবে। তার আগে নয়। তত দিন পর্যন্ত বহু শিল্পীকে মারাত্মক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।' তাঁর আবেদন, গৌরাঙ্গর মতো বা তাঁর চেয়েও দুঃস্থ শিল্পীদের বিপিএল কার্ডের আওতায় এনে বিনামূল্যে খাবারটুকু পৌঁছে দেওয়া গেলে ভালো।



তবে শিবাজি যে মারাত্মক দুঃস্থ শিল্পীদের কথা ভেবে আশঙ্কায় রয়েছেন, গৌরাঙ্গ এখনও তেমন সাফাই কর্মী অবস্থায় পড়েননি। বদলে তিনি জলাঞ্জলি দিয়েছেন তাঁর স্বপ্নের জায়গাটা। ভোর সাড়ে চারটেয় সাইকেল নিয়ে ছুটতে হয় বারাসত থেকে মধ্যমগ্রাম। প্যাকেটের দুধ নিয়ে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করেন। এক শুভাকাঙ্ক্ষী নিজের দোকান ছেড়ে দিয়েছেন তাঁকে। বেলার দিকে গৌরাঙ্গ সেখানে দই, লস্যি, পনির বিক্রি করেন। গৌরাঙ্গ বলেন, 'কলকাতা, মুম্বইয়ে ফাংশন বন্ধ। টুকটাক কিছু কাজ হয়, কিন্তু পারিশ্রমিক কম। সাড়ে তিন মাস বসেই ছিলাম। ফলে সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছে। বন্ধুর পরামর্শে পেশা বদল করে ফেললাম।' আপাতত তালবাদ্য নয়, ডেয়ারি প্রোডাক্টাই তাঁর এবং পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আর তাই রাতে এখনও ঘুমোতে পারছেন তিনি। যে ঘুমের ভিতর স্বপ্নে এখনও দেখতে পাচ্ছেন, সেই সব মঞ্চ, সেই সব জলসা- আলোর রোশনাইয়ে যেখানে এখনও শোনা যাচ্ছে গান, এখনও পড়ছে হাততালি। শুধু অতীতের নয়, গৌরাঙ্গ চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে আছেন ভভিষ্যতের সেই সোনালি স্বপ্নের দিনগুলোর দিকে।

Source: Ei Samay