রাস্তার দু’ধারে কাশফুলের বন আর আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ৷ তার মধ্যে দিয়েই ছুটে চলেছে বাস৷
বাসের জানলা দিয়ে আবাক দৃষ্টিতে এই অপরূপ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে এক দল কুঁচোকাঁচা৷ “কী সুন্দর মেঘ…”৷ “রাস্তার পাশেও কত প্যান্ডেল..”৷ “দারুণ মজা হচ্ছে!”
হবেই তো৷ কারণ ওদের জগৎ চার দেওয়ালের মধ্যে৷ সারা বছর কুড়ি ফুট উচু পাঁচিলে ঘেরা হোমের মধ্যেই ওদের দিনরাত একাকার৷ সারা বছরই পড়শোনা, খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে মেতে থাকলেও পুজোর সময় ঢাকে কাঠি পড়তেই ওদেরও মন কেমন করে৷ পুজো মণ্ডপের থেকে ভেসে আসা মাইকের আওয়াজ ওদের কানেও আসে৷ রাতভর রাস্তা দিয়ে গাড়ির আওয়াজ আর মানুষের গুঞ্জন শুনে ওরাও বুঝতে পারে সবাই ঠাকুর দেখতে যাচ্ছে৷ কারও বয়স ছয়, কারও দশ, কারও আবার ষোলো৷ ওরা উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কিশলয় ও মধ্যমগ্রামের নিজলয় হোমের আবাসিক৷ দুর্গাপুজোর সময় হোমের বড় বড় পাঁচিলের বাইরের জগৎটা যে একেবারে অন্যরকম সেটা তারা জানে৷ দেখার ইচ্ছেও খুব৷ কিন্তু প্রতিবছরই আইনের বেড়াজাল বাধা হয়ে দাঁড়ায় ওদের সামনে৷ তবে এবারের পুজোয় যেন সব পালটে গেল৷
অষ্টমীর সকালে উঠেই স্নান করে প্রত্যেকে সেজেগুজে ‘রেডি’৷ দুপুরে খাওয়া দাওয়া, তার পর বড় বাসে চেপে বেড়িয়ে পড়া৷ ঠাকুর দেখতে৷ কাছে পিঠে নয়, দূরে৷ বারাসত ও মধ্যমগ্রাম ছেড়ে দু’ধারে কাশ ফুলের মহড়ার মধ্যে দিয়ে সেই বাস ওদের নিয়ে গেল সুদূর বনগাঁয়৷ কিশলয় ও নিজলয় হোমের আবাসিকদের এবছরের পুজোকে এমনই রঙিন করে তুলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ৷ এই দুই হোমের আবাসিকদের বাসে করে হাবড়া ও বনগাঁর পুজো দেখানোর আয়োজন করে তারা৷ প্রায় দু’শোর বেশি কুঁচোকাঁচাদের, দুই ভাগে অষ্টমী ও নবমীর দিন প্রথমে জেলা পুলিশ লাইনে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷ তারপর বাসে করে পুজো পরিক্রমা৷ সঙ্গে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ দুই হোমের আধিকারিকরা৷
কিশলয় হোমের সুপার মলয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে কয়েকবছর বাচ্চাদের নিয়ে বারাসতের কয়েকটা পুজো দেখানো হয়েছে৷ ওদের নিরাপত্তার ব্যাপার থাকে৷ তাই বেশি দূরে কোথাও যাওয়া যায় না৷ তবে বাসে করে ওদের ঠাকুর দেখতে যাওয়া এই প্রথম৷ জেলা পুলিশের জন্যই এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব হয়েছে৷ বাচ্চারা খুব আনন্দ করেছে৷” অষ্টমী ও নবমীতে হাবড়া ও বনগাঁর বিভিন্ন প্যান্ডেল ঘুরে দেখে এই কুঁচোকাঁচারা৷ উত্তর ২৪ পরগনায় দুর্গাপুজোয় বিখ্যাত বনগাঁর বড় বড় পুজো দেখে একেবারে তাক লেগে যায় তাদের৷
কেউ বলল, “এত বড় প্যান্ডেল, এত বড় ঠাকুর আগে দেখিনি কখনও৷” আবার কেউ বলে, “বাসের থেকে আকাশটা কত সুন্দর লাগছিল, আমাদের হোম থেকে তো এত সুন্দর লাগে না৷” জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “হোমের ছেলে ও মেয়েরা তো পুজোর সময় এই সুযোগটা পায় না৷ তাই আমরা চেয়েছিলাম ওদের পুজোটা একটু ভাল করে দেখাতে৷ পুলিশের যে সামাজির দায়িত্ব সেটাই একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে আমরা পালন করার চেষ্টা করেছি৷ বাচ্চারা যে আনন্দ করেছে এটাই আমাদের প্রাপ্তি৷”
Source: Sanbad Pratidin