ফেসবুকে আলাপ। সেই আলাপ থেকে বন্ধুত্ব। বারাসতের দম্পতির সঙ্গে কাকদ্বীপের যুবকের এই ঘনিষ্ঠতাই বিপদ ডেকে আনল। বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বারাসতের গৃহবধূকে দুবাইতে নিয়ে গিয়ে পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে পাসপোর্টও। স্ত্রীকে ফিরে পেতে বিদেশ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বামী।
কয়েক মাস আগে বারাসতের বাসিন্দা সায়ক চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয়েছিল কাকদ্বীপের যুবক মিঠুন বাগের। সেই আলাপের সূত্রেই মিঠুন দুবাইয়ে নার্সের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় বলে অভিযোগ। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিঠুন।
বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের ধারে আবাসনে থাকেন চক্রবর্তী দম্পতি। সায়ক শেয়ার বাজারে কাজ করেন। শেয়ারের ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়েছিলেন তিনি। ফলে সংসার চালানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ দিকে ছেলে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়ে। ছেলের স্কুলের খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন সায়ক ও তানিয়া। এই আর্থিক টানাটানির মাঝেই সায়ক-তানিয়ার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় মিঠুন বাগের। সায়ক বলেন, ‘মিঠুন আমার স্ত্রীকে কাতারে নার্সের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এ জন্য আমার থেকে তিন লক্ষ টাকাও নিয়েছিলেন। এরপর মিঠুনই এক এজেন্সির মাধ্যমে তানিয়াকে কাতারে নিয়ে যান। আমরা ভেবেছিলাম মিঠুন বাগ ওই এজেন্সির একজন দালাল।’ সায়ক জানিয়েছেন, প্রথমে কাতারে নার্সের চাকরি দিলেও, পরে তানিয়াকে কাতার থেকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তানিয়াকে দুবাইতে নার্সের চাকরি না দিয়ে লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাতে রাজি না হওয়ায় তানিয়ার উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারও শুরু হয়েছে।
এ সবই দিন কয়েক আগে বাড়িতে ভিডিয়ো কল করে তানিয়া জানিয়েছেন সায়ককে। তানিয়া স্বামীকে জানান, মিঠু একজন জালিয়াত। তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কোনও উপায়ে এখন দেশে ফিরতে মরিয়া তানিয়া। মায়ের এই খবর শুনে উৎকন্ঠায় তানিয়া একমাত্র ছেলে ১৩ বছরের ঋষিতও। সায়ক জানালেন, ছেলে খুবই কান্নাকাটি করছে।
স্ত্রীকে ফিরে পেতে ইতিমধ্যেই বিদেশমন্ত্রক চিঠি লিখেছেন সায়ক। চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও। যোগাযোগ করেছেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে। বারাসত এবং কাকদ্বীপেও অভিযোগ দায়ের করেছেন সায়ক চক্রবর্তী। সায়ক জানালেন, প্রশাসনের তরফে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বারাসতের বাড়িতে ছেলেক পাশে নিয়ে সায়ক বললেন, ‘আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট, অন্যান্য পরিচয়পত্র-সহ যাবতীয় নথি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা ভীষণই চিন্তায় আছি।’
যোগাযোগ করা হয়েছিল মিঠুন বাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওদের ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল। বন্ধুত্বও ছিল। কিন্তু সামনাসামনি কোনওদিন দেখা হয়নি। তানিয়া কোথায় কাজে গিয়েছেন, সেই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
Source: Ei Samay