মাত্র কয়েক দশক আগের কথা। বারাসতের উপর দিয়ে গেলে একটি মিষ্টির দোকানে অবশ্যই দাঁড়াতেন উত্তম কুমার ও কিশোর কুমার। মিষ্টিমুখ করতেন, দোকানের মালিকের সঙ্গে খানিক খোশগল্প করতেন, তারপর আবার গন্তব্যে রওনা দিতেন। শনিবার বারাসতের সেই মিষ্টির দোকান ভস্মীভূত হয়ে গেল। মুছে গেল ১৫৬ বছরের স্মৃতি।
ওই মিষ্টির দোকানের নাম রাধা মিষ্টান্ন ভান্ডার। বারাসতের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই নাম। সেই দোকান শনিবার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এদিন ভোরে হঠাৎই ওই মিষ্টির দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন স্থানীয়রা। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় দমকলে। কিন্তু নিমেষের মধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে আগুন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোটা দোকানটি আগুনের গ্রাসে চলে যায়। দমকলের কর্মীরা শত চেষ্টাতেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। তবে দমকল ও পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
কিন্তু কেন ওই দোকানে আগুন লাগল বা কীভাবে আগুন লাগল, তা নিয়ে একেবারেই আগ্রহী নয় এলাকাবাসী। বরং ১৫৬ বছরের স্মৃতি যে অগ্নিগর্ভে চলে গেল, তা নিয়েই মূহ্যমান তারা। লোকমুখে প্রচলিত, বারাসতের উপর দিয়ে গেলে উত্তম কুমার ও কিশোর কুমারের মতো নামী ব্যক্তিত্বরা এই রাধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে আসতেন। শত ব্যস্ততা থাকুক, একবার দোকানের মিষ্টি না চেখে যেতেন না। ফলে এই দোকান নিয়ে এলাকার মানুষের গর্বেরও সীমা ছিল না। আত্মীয়দের বাড়ি গেলে বা কোনও অনুষ্ঠানে এই দোকানের মিষ্টি খাইয়ে এলাকার মানুষ যে কতবার আত্মসুখ লাভ করেছে, তার হিসেব নেই। রাধা মিষ্টান্ন ভান্ডার এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, বারাসতের দক্ষিণপাড়ার মুখে সেই মিষ্টির দোকানের নামে বাস স্টপও রয়েছে। কয়েক ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ড সেই ঐতিহাসিক দোকান ভস্মীভূত করে দিল, এই নিয়ে মন খারাপ বারাসতের মানুষের।
Source: Sanbadpratidin