একেবারে কার্বন কপি! বিশ্বকাঁপানো ক্যারাটে গ্র্যান্ডমাস্টার একের পর পর ‘কাতা’ প্রদর্শন করছেন। আর অবলীলায় তা কপি করছে এক শিশুকন্যা। বয়স কত আর হবে? মেরেকেটে সাত বছর। গুছিয়ে কথাও বলতে পারে না। কিন্তু ক্যারাটের সাদা পোশাকে জ্বলজ্বল করছে কালো বন্ধনী।
হ্যাঁ, গোটা বিশ্বকে অবাক করে মাত্র সাত বছরেই ব্ল্যাক বেল্ট হৃদয়পুরের ফ্লোরা দাস। আজ, শনিবার কলকাতার আইসিসিআর হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্লোরার সঙ্গে জুড়বে ব্ল্যাক বেল্ট বন্ধনী। ব্ল্যাক বেল্ট পাবে ফ্লোরার দিদিও। ১৪ বছরের আদৃতা। পাবে তেরো বছরের রূপাঞ্জনা পাল। সবার নজর অবশ্য ফ্লোরার দিকে। কারণ এত কম বয়সে কেউ এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়নি। এমনটাই জানালেন ফ্লোরার প্রশিক্ষক সুভাষ মিত্র। বললেন, “৩৮ বছর ধরে ক্যারাটে শেখাচ্ছি। কিন্তু এত কম বয়সে কেউ এমন পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি।” ফ্লোরার সৌরভ অবশ্য মে মাসে থেকেই ছড়াতে শুরু করেছে। নেপালে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় সাতটি দেশের প্রতিযোগীদের টপকে ব্যক্তিগত বিভাগে সোনা পেয়েছে ফ্লোরা। ফ্লোরার লড়াই বা ‘কুমিতে’ মুগ্ধ করেছে পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টারদেরও। শুক্রবারও ফ্লোরায় মুগ্ধ হলেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা বিশ্বখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার সনি পিল্লে। বললেন, “এই মেয়ে অনেকদূর যাবে। বাংলা তথা ভারতের ক্যারাটে মানচিত্রে বিপ্লব এনে দেবে।”
ফ্লোরার মা পল্লী দাস অবশ্য অতকিছু ভাবছেন না। তিনি খুশি অন্য কারণে। জানালেন, নারী নিগ্রহের ব্যাপারে বারাসত একাধিকবার খবরের শিরোনামে এসেছে। রাজীব দাস-কাণ্ড, কামদুনি-কাণ্ড। মেয়েরা ক্যারাটে শেখায় অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করছি।” ফ্লোরার বাবা পুলক দাসের ট্যুরিজমের ব্যবসা। বাইরে বাইরে থাকতে হয়। কিন্তু একদিনের জন্যও মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়নি পল্লীর। জানালেন, “জ্যাকি শ্রফ, অজয় দেবগন, অক্ষয় কুমারের অ্যাকশন খুব ভাল লাগত। তাই মেয়েদের চাঁপাডালি যুবক সংঘ ক্লাবের ক্যারাটে ক্লাসে ভর্তি করি। ফ্লোরার বয়স তখন আড়াই বছর। বড় মেয়ে আদৃতার এগারো। মাত্র পাঁচ বছরেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গিয়েছে দুই মেয়ে।” ফ্লোরাকে নিয়ে অবশ্য মাঝেমধ্যে সমস্যা হচ্ছে! সারাক্ষণই শ্যাডো করছে। যখন তখন হাত-পা চলছে। দিদি, বাবা-মা কেউ বাদ নেই। বাধ্য হয়েই বিছানার উপর দু’টি বালিশ ঝুলিয়ে দিয়েছেন পল্লীদেবী। ওগুলোর সঙ্গে চলছে লড়াই।
আজ, শনিবার প্রায় একজন গ্র্যান্ডমাস্টার ও তিনজন প্রশিক্ষকের উপস্থিতিতে ফ্লোরাকে ব্ল্যাক বেল্ট দেওয়া হবে। আরও অনেকেই পাবেন এই বিশেষ শংসাপত্র। কিন্তু সবার নজর থাকবে ফ্লোরার দিকে। জানালেন ‘সাঁতরাগাছি আর্ট অফ লাইফ’-এর সম্পাদক মৌসুমী মজুমদার। ‘অল ইন্ডিয়া শোটোকান ক্যারাটে ডু স্কুল’-র সঙ্গে জোট বেঁধে আইসিসিআরে তিনদিনের ক্যারাটে ট্রেনিংয়ের আয়োজন করেছেন মৌসুমীরা। জানালেন, “মেয়েদের সেলফ ডিফেন্স শেখাতে ফ্লোরা রোল মডেল হয়ে উঠছে।”
Source: Sanbad Pratidin