Showing posts with label pradip gram. Show all posts
Showing posts with label pradip gram. Show all posts

Monday, November 9, 2020

চিনা আলোর সামগ্রীকে টেক্কা দিচ্ছে বারাসতের এই ‘প্রদীপ গ্রাম’

 দিওয়ালির আলোর বাজার ছেয়ে গিয়েছে চিনা সামগ্রীতে। রং বেরঙের টুনি বাল্ব, এলইডি আলোর পসরা সাজিয়ে বসছে দোকানদার। কালীপুজো হোক কিংবা দিওয়ালি মণ্ডপ থেকে ঘর আলোকসজ্জাতেও থাবা বসিয়েছে সস্তার এসব চিনা আলো। এসেছে প্লাস্টিকেরতৈরি প্রদীপও। কিন্তু বারাসাত থেকে একটু দূরে চালতাবেড়িয়া। আর এখানেই মাটির তৈরি হাতে গড়া প্রদীপ আর পিলসুজ এখনও সমান তালে টক্কর দিচ্ছে বাজারে।


এই গ্রামের কুটির শিল্পের মোটামুটি গোটা পশ্চিমবঙ্গে বেশ নামডাক আছে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এখানকার হাতে তৈরি মাটির জিনিস রফতানি হয়।


যদিও তৃতীয় পক্ষের ব্যবসায়ীরা এখানকার হরেক কিসিমের প্রদীপ কিনে নিয়ে তারাই পাইকারি দরে বিক্রি করে বাজারে। কুটির শিল্পীরা তাদের হাতে তৈরি জিনিসগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করে বানান। 


দু’হাতের দশ আঙুলের জাদুতে হরেক রকমের মাটির প্রদীপ তৈরি করেন এই পুরুষ থেকে মহিলা সকলে। বারাসত থেকে একটু বেড়িয়ে যশোর রোড হয়ে যেতে দু’পাশে চোখে পড়বে মাটির বিভিন্ন মূর্তি, পট, বিশেষ করে পিলসুজ আর প্রদীপ তৈরির কাজ চলছে। 


শুধু জাতীয় সড়কের দু'পাশেই এই এলাকার ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের মতো ছেয়ে গিয়েছে মাটির প্রদীপ তৈরির শিল্পে। সারা বছরের চব্বিশ ঘণ্টায় এখানে প্রদীপ তৈরির কাজ চলে। করোনা মহামারীর জন্যে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।


এই সময় চালতাবেড়িয়ায় এই প্রদীপের গ্রামে প্রথম দু'সপ্তাহ প্রদীপ রফতানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল এখানকার শিল্পীদের। এরপর পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে নিজেরাই শিল্পীদের কাছ থেকে মাটির জিনিস নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী পঙ্কজ পাল।


নতুন প্রজন্মের কিছু ছেলে মেয়েরা এই পেশায় আসতে চাইছিল না। গত বছর পর্যন্ত এমনটাই ছিল। তবে এই বছর অনেকে কাজ চলে যাওয়াতে এবং পরিবারে আর্থিক সঙ্কট শুরু হওয়াতে তারা এই কুটির শিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।


বছর ষাটের জয়দেব পাল বলেন, 'করোনা মহামারী হোক বা বছরের অন্যান্য সময় কুটির শিল্পীদের বাইরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেই কাজ করলেই রোজগার হয়, এতে করোনারও ভয় নেই উপার্জনও ভালো হয়। যার ফলে এখন গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে মাটির জিনিস বানানোর আগ্রহ হচ্ছে।


হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে সকলে এই মাটির জিনিস তৈরি করেন। একটি পিলসুজের উপরে এক সঙ্গে পাঁচ, সাত, নয়, একুশ, একান্নটি প্রদীপও তৈরি হচ্ছে। একান্নটি প্রদীপ থাকলে নাম, 'একান্ন দিয়া।' বাজার ধরতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রদীপের আদল। থাকছে বিভিন্ন কারুকাজ, সুক্ষ থেকে সুক্ষ কাজ যত্ন সহকারে করেন এখানকার শিল্পীরা। 


স্বামীর সঙ্গে প্রদীপ বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন তসলিমা বিবি। বললেন, '১০’বছর ধরে এই কাজ করছি। আমার মতো অনেকেই প্রদীপ তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।' কারখানা মালিক কামাল ইসলাম বলেন, 'এলাকার মানুষ রোজগার করছেন, আমাদের ব্যবসাও বেড়েছে আগের থেকে অনেক।'


বাপ ঠাকুরদার সময় থেকে চলে আসা শিল্পের ধরণও আগের অনেক বদলেছে। মানুষ বিভিন্ন ধরণের মাটির কারুকার্যের জিনিস দিয়ে ঘর সাজাতেও এখন পছন্দ করে। এসবের কথা মাথায় রেখে সেই মতন জিনিস করেন শিল্পীরা। চালতাবেড়িয়ার কুটির শিল্পীরা মনে করেন মাটির প্রদীপ এর সঙ্গে প্লাস্টিক বা চিনা আলোর পাল্লা দিয়ে পারবে না।


কারণ শিল্পীরা মনে করেন, পুজো-আচ্চার ক্ষেত্রে ভক্তিভাব প্রকাশে মাটি প্রদীপকে এখনও বেশী গুরুত্ব দেন মানুষ। তবে চিনা মালের সঙ্গে পাল্লা দিতে দামের উপরে রাশ টানতেই হচ্ছে এটাই মূল সমস্যা।


এখানকার মানুষের মাটির সঙ্গে কারবার তার জন্যে এখানে সকলে মা মনসার পুজো করেন। মূর্তি পূজার থেকে তারা বিশ্বাস করেন ঘট পুজায়। মাটির ঘটে দেবদেবীর ছবি এঁকে পুজো করা হয়। শিল্পীরা সকলে ২০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে বেতনে কাজ করেন।


কাজের মান অনুযায়ী কারও একদিনের রোজগার দুশো থেকে তিনশো টাকা। প্রদীপ তৈরির পাশাপাশি দিওয়ালির জন্য লক্ষ্মী-গণেশ মূর্তিও গড়ছেন অনেকে। কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, গুজরাত, অসম, পটনায় চলে যাচ্ছে এখানকার লক্ষ্মী-গণেশ। 

বাইরের রাজ্যেও বেশ চাহিদা রয়েছে এখানকার মাটির জিনিসের। এই গ্রামের শিল্পীরা মনে করেন চিনা সামগ্রী বর্জনের ডাক নয়, প্রতিযোগিতায় নেমে চিনা সামগ্রীকেই হারাবে তাদের হাতে তৈরি মাটির প্রদীপ।



Source: Indian Express