Showing posts with label Hatipukur Park. Show all posts
Showing posts with label Hatipukur Park. Show all posts

Monday, July 9, 2018

নতুন রূপে সেজে উঠছে বারাসতের হাতিপুকুর

বারাসতের হাতিপুকুর। নামটার সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। একটু পিছন ফিরে দেখা যাক। বাংলায় তখন রাজ্যপাট সামলাচ্ছেন নবাব সিরাজদৌল্লা। নবাবের মসনদ মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি। মুর্শিদাবাদ থেকে মাঝে মধ্যেই কলকাতায় আসতেন সিরাজ। সঙ্গে থাকত সৈন্য সামন্ত। পথে পড়ত বারাসত। দীর্ঘ যাত্রাপথের ক্লান্তি কাটাতে এই বারাসতেই জিরিয়ে নিতেন নবাব। নবাবের হাতি-ঘোড়াদের জল খাওয়াতে কাছারি ময়দান এবং হেস্টিংস ভিলার কাছে বারাসতেই একটি পুকুর খনন করেন সিরাজদৌল্লা। নবাবের হাতি এই পুকুরের জল খেত বলে পুকুরটির নামই হয়ে যায় হাতিপুকুর। এই হাতিপুকুর থেকে মিনিট পাঁচেক দূরে হেস্টিংস ভিলা। তারও একটা ইতিহাস রয়েছে।



ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের আনন্দ-ফুর্তির জন্য কলকাতার কাছেই বারাসতকে বেছেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। ব্রিটিশ কর্তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য বাড়ি বানায় কোম্পানি। আজও বারাসতে এলে চোখে পড়বে হেস্টিংস ভিলা। সেই হেস্টিংস ভিলার উত্তর পশ্চিমের ফাঁকা মাঠে ঘোড়দৌড় শুরু করে ইংরেজরা। ভারতবর্ষে ব্রিটিশরা প্রথম ঘোড়দৌড় এই বারাসতেই শুরু করে। ইংরেজ আমলের ঘোড়দৌড়ের মাঠের সামান্য অংশই এখন বাতাসতের কাছারি ময়দান। এই হেস্টিংস ভিলা ও হাতিপুকুর ঘিরে তাই ইতিহাসের অন্ত নেই। দুর্ভাগ্যের বর্তমান প্রজন্মের জন্য সেই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার কোনও তাগিদ সেভাবে চোখে পড়েনি। তবে দেরিতে হলেও বর্তমানে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে হাতিপুকুরে।


এর আগেও অবশ্য একবার ছোটখাটো সংস্কার হয়েছিল। তা বাম আমলে। কেন ছিল সেই সংস্কার? কাছারি মাঠের খুব কাছেই এই হাতিপুকুর। হাতিপুকুরের মাঝখানে রয়েছে একটি দ্বীপ। বাম আমলে হাতিপুকুরকে ঘিরে একটি পার্ক বানানো হয়। তার পরে অবশ্য ইতিহাস প্রসিদ্ধ পুকুরটির সেভাবে সংস্কার হয়নি। রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত হাতিপুকুর সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। পুকুর থেকে কচুরিপানা সাফ করে বোটিং চালুর চেষ্টা হয়েছিল। পার্কটির কিছুটা সৌন্দর্যায়নেও বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছিল। কিন্তু ধারাবাহিক নজরদারির অভাবে ফের হতশ্রী চেহারায় ফিরে যায় হাতিপুকুর। বোট দু’টি পড়ে থেকে থেকেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সংস্কারের অভাবে ফের কচুরিপানায় ভরে উঠেছে হাতিপুকুর। পুকুর লাগোয়া পার্কটি জঙ্গলের চেহারা নেয়। ক্রমে ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গাটি সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে নেশাড়ুদের আড্ডার ঠেক। নিত্য মদ, জুয়ার আসর বসতে শুরু করে হাতিপুকুরে।


দীর্ঘ কয়েক দশক এ ভাবেই কাটে। পরিস্থিতি এতটাই হাতের বাইরে চলে যায় যে, হাতিপুকুরকে ফিরে পাওয়ার আশাও ছেডে় দেন সকলে। পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু হাতিপুকুরের সংস্কারে আটকে না থেকে তৈরি হচ্ছে একটি বিনোদন পার্ক। বারাসতের সাংসদ কাকলী ঘোষদস্তিদার সাংসদ কোটার টাকা বরাদ্দ করেছেন হাতিপুকুরের সংস্কারে।


২০১১ ক্ষমতায় আসার পর জেলা সফরে বারাসতে এসে মুখ্যমন্ত্রী ইতিহাস প্রসিদ্ধ হাতিপুকুর সংস্কার করে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলেন। এর পরেই হাতিপুকুর সংস্কারে উদ্যোগ নেন বারাসতের সাংসদ কাকলী ঘোষদস্তিদার। সাংসদ কোটার তহবিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা দেন। ২০১৬ সালে এলাকাটি ৩৪ বছরের লিজ নেয় বারাসত পুরসভা। সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ করে পুরসভাও।


হাতিপুকুরের চারধার বাধানো হয়। তবে তার পর কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি ফের সংস্কারের কাজে হাত লাগায় বারাসত পুরসভা। রাজ্য সরকারের গ্রিন সিটি প্রকল্পের আওতায় হাতিপুকুর এবং সংলগ্ন পার্কটির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। পুকুরের চারিদিকের পাড় বাধানোর কাজ তো আগেই শেষ হয়েছে। পাড়ের চার ধারে সবুজায়নে হাত লাগানো হয়েছে। হাতিপুকুরের মাঝে রয়েছে একটা দ্বীপ। দ্বীপে যাওয়ার জন্য একটি সেতুও আছে। এই দ্বীপে বহু প্রাচীন একটি শিরীষ গাছ ছিল। গাছটি মরে গিয়েছে। তবে প্রাচীন গাছের কান্ডটি উপড়ে ফেলা হচ্ছে না।


কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্ন হল জবরদখলকারী হকারদের কী হবে? বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘দ্রুত গতিতে সংস্কারের কাজ চলছে। হাতিপুকুরের সামনে কিছু হকার বসে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তাই তিনি কর্মতীর্থ চালু করেছেন। বারাসতের কর্মতীর্থে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’


পুনর্বাসন জট কেটে গিয়েছে। এখন জোরকদমে চলছে কাজ। আপাতত পুকুরের চারপাশে পায়ে হাঁটার রাস্তা যেমন থাকছে তেমনি ফুল এবং বাহারি গাছ লাগানো হবে। পুকুরকে ঘিরে বসার ব্যবস্থাও থাকবে। শিশুদের মনোরঞ্জনের হাজারো বন্দোবস্ত থাকবে পার্কে। হাতিপুকুর পার্কের ভিতরেই গড়ে তোলা হবে একটি কমিউনিটি হল। থাকবে আর্ট গ্যালারি। সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতের কাজ দেখা যাবে।


চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এমন একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গা স্রেফ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। বর্তমানে তা নতুন করে সেজে উঠছে। দ্বীপের মধ্যে বহু প্রাচীন শিরীষ গাছটি কাটা হবে না।’ ইতিহাসকে ধরে রেখেই এই গাছটিকে সুন্দর করে মানুষের আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কাশ্মীরের ডাল লেকের শিকারার আদলে হাতিপুকুরেও শিকারা চালানোর ব্যবস্থা থাকছে।

Source: Ei Samay