Showing posts with label everest avalanche death. Show all posts
Showing posts with label everest avalanche death. Show all posts

Monday, April 21, 2014

এভারেস্টে মৃত্যু মিছিল দেখে নিথর বারাসতের সুনীতা

 এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে একের পর এক নিথর দেহ দেখে একেবারে আঁতকে উঠছেন বারাসতের গৃহবধু সুনীতা হালদারের৷ বছর চল্লিশের এই মহিলা নয় বছরের ছেলে আর্যবীরকে রেখে গিয়েছিলেন এভারেস্ট৷ বাংলার কোনও মায়ের পক্ষে এটাই প্রথম অভিযান৷ তিনি আটকে রয়েছেন বেস ক্যাম্পে৷ তাঁদের ক্যাম্পের সামনেই নিথর দেহ৷


কেমন সে দৃশ্য? ফোনে বলতে গিয়ে কার্যত মুহ্যমান সুনীতা৷ এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে বললেন, ‘কপাল ভালো, তাই বেঁচে গেলাম৷ কারণ খুম্ব আইস ফলে সে সময় ধ্বস নেমেছিল, সে সময় আমাদের ওখানে যাওয়ার কথা ছিল৷ রুটিন মেনে শেরপারা তৈরি হয়েছিলেন৷ আবহাওয়া খারাপ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান পিছিয়ে দিই৷ বাংলা থেকে যারা এভারেস্ট অভিযানে এসেছে, তাঁরা সকলেই ঠিক করেছি, আবহাওয়া ভালো হলেই তবে আবার অভিযানে যাব৷’


বলা হচ্ছে ১৩ জন মারা গেছেন তুষার ঝড়ে৷ কত জন মারা যেতে পারেন? প্রশ্ন শুনে সুনীতার কথাগুলো আর্তনাদের মতো শোনাল৷ ‘১৩ জনের মৃতদেহ তো বেস ক্যাম্পের সামনেই রাখা ছিল৷ হেলিকপ্টার এসে তা তুলে নিয়ে গিয়েছে৷ শেরপারা এসে বলছেন, আরও মৃতদেহ রয়েছে৷ বিদেশি অভিযাত্রীদের মরদেহ রয়েছে৷ সব মিলিয়ে ৪০-৫০ জন মারা গেছে বলে মনে হচ্ছে৷ আবহাওয়া ভালো হলে আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে৷ নেপাল ট্যুরিজমের কর্তারাও বলছেন, আবহাওয়া পরিষ্কার হলে আর দেহ পাওয়া যাবে৷ ’


পাহাড়ে এই দৃশ্য একেবারে অপরিচিত নয়৷ সুনীতার কথাতেও আরও পরিষ্কার৷ কিন্ত্ত কেউ বুঝে উঠতে পারেননি, এমন মর্মান্তিক দৃশ্য তাঁদের দেখতে হবে৷ আবহাওয়া ভালো হলে অভিযান কতদূর করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অভিযাত্রীদের৷ সুনীতার কথায়, ‘পাহাড়ে ওঠার জন্য রোপ একেবারে ছিন্নভিন্ন৷ তা ঠিক করা না হলে অভিযান করাই কষ্টকর হবে৷ তৈরি করতেও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে৷’


চলতি বছরে ১৪ জন পর্বতারোহী বাংলা থেকে গিয়েছেন এভারেস্টে৷ তার মধ্যে ১১ জন সাউথ কল দিয়ে, বাকি দু’জন নর্থ কল (চিনের দিকে) দিয়ে৷ সাউথ কল দিয়ে সকলেই ১০ এপ্রিলের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন বেস ক্যাম্পে৷ প্রায় আট দিন প্রবল ঝড় জলের মধ্যে দিয়ে বেস ক্যাম্পে বসে আছেন৷ কিন্ত্ত নর্থ কলের দিকে অভিযাত্রীদের কোনও খবর এখনও পাওয়া যায়নি৷


শনিবারও গোটা দিন টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে৷ প্রবল উত্‍কন্ঠার মধ্যে সুনীতা বললেন, ‘দুর্যোগের মধ্যেই সকলেই বসে রয়েছি৷ আজ এক শেরপার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ খারাপ আবহাওয়ার জন্য উদ্ধারের কাজ করাই যাচ্ছে না৷ কবে পরিষ্কার হবে, তা বোঝা না গেলেও আমরা হাল ছাড়ছি না৷’ বেস ক্যাম্প বসে ফোনে অন্য অভিযাত্রী দেবরাজ দত্ত বললেন, ‘খারাপ আবহাওয়াকে সঙ্গী করেই তো এভারেস্ট অভিযান৷’ দলের সকলেই হাল ছাড়তে নারাজ৷


সুনীতার স্বামী সুদেব হাজরা নিজেও পর্বতারোহী৷ তিনি বাড়িতে বসে ছটফট করছেন৷ বললেন, ‘সুনীতার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি বেসক্যাম্পের অবস্থা একেবারে সুবিধের নয়৷ তাপমাত্রা ক্রমশ নামছে৷ তারপর চোখের সামনে একের পর মরদেহ দেখতে পাচ্ছে, সব মিলিয়ে মনের অবস্থা আরও খারাপ৷ বাড়িতে ফোন করলে শুধু ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করে৷ জানি না, এখানে বসে আমি বা কী করতে পারি?’


Source: Ei Samay