হৃদয়পুরে 'ডাক্তারদাদা' শ্যামলের উদ্যোগে 'স্বাস্থ্য শিবির
পেশায় তিনি আয়কর আধিকারিক। তবে, এলাকায় তিনি পরিচিত 'ডাক্তার দাদা' হিসেবে। কারণ, পরিচিত, অপরিচিত মানুষের চিকিৎসা নিয়ে কোনও সমস্যার কথা কানে এলে তিনি হাত গুটিয়ে বসে থাকেন না। মুশকিল আসান করতে বারাসতের হৃদয়পুরের বাসিন্দা শ্যামল কুমার দাস ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুধু বারাসত বা উত্তর ২৪ পরগণা জেলা নয়, অন্যান্য জেলা থেকেও অনেক মানুষ প্রতিদিন তাঁর কাছে ছুটে আসেন। কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু কোন চিকিৎসকের কাছে যাবে বুঝতে পারছে না, তার ভরসা শ্যামলবাবুই। আত্মীয়, অনাত্মীয়, পরিচিত, স্বল্প-পরিচিত বা একেবারেই অপরিচিতের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে কিংবা কারও নিকটজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে অফিসের কাজের ফাঁকে বা অফিস টাইমের আগে পরে ছুটে বেড়ানো শ্যামলের নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানেই শেষ নয়। কারও কাছে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা নেই, সে ব্যাপারে মাথা ঘামানোও তাঁর স্বভাব।
এহেন ব্যস্ত মানুষের উদ্যোগে রবিবার হৃদয়পুর কবরখোলা মাঠে হয়ে গেল তাঁরই হাতে তৈরী সংস্থা 'প্রয়াস'-এর তরফে পঞ্চম বর্ষ 'স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির'। তবে, অন্যান্য 'স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে'র থেকে 'প্রয়াস'-এর শিবির অনেকটাই আলাদা। কারণ, অত্যাধুনিক মেশিন এবং কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালের খ্যাতনামা চিকিৎসকরাই ছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে। গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্ট থেকে শুরু করে হেপাটোলজিস্ট, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, অর্থপপেডিক, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট স্পেশালিস্ট, ব্যাক পেন স্পেশালিস্ট প্রায় সব বিভাগেরই নামকরা চিকিৎসকরা এ দিন হাজির ছিলেন ওই 'স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে।'। শুধু প্রান্তিক মানুষই নয়, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষও এদিনের এই 'শিবির' থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১১০০ মানুষ এদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। বিশিষ্ট হেপাটোলজিস্ট বিকাশ প্রকাশ বলেন,'অনেক মানুষ এসছেন যাঁদের রোগ হয়েছে অন্য অথচ, গ্যাসের ওষুধ খেয়ে
যাচ্ছেন। এটা সমাজের পক্ষে খুবই খারাপ ইঙ্গিত। সঠিক রোগ নির্ণয় করার পাশাপাশি এসব নিয়ে মানুষকে সচেতনও করা হয়েছে।' এদিকে, যাঁর উদ্যোগে এদিনের এই স্বাস্থ্য শিবির সেই শ্যামল কুমার দাস বলেন,' আমাদের দেশে চিকিৎসা পরিষেবার পরিকাঠামো প্রয়োজনের তুলনায় কম। তার উপর, এখনও বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই রোগ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে যথেষ্ট অজ্ঞতা রয়েছে। যে কারণে সঠিক রোগের সঠিক চিকিৎসা হয়না। এই অজ্ঞতা দূর করতে এবং মানুষ যাতে সঠিক চিকিৎসা পায় সেজন্য সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। সেদিকে তাকিয়েই এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।'
Source: Ei Samay