পেশায় বলিউডের চিত্র পরিচালক। কিন্তু নেশায় যাযাবর। যে কারণে আপাতত লাইট-অ্যাকশন-ক্যামেরা ছেড়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বারাসতের যুবক সৌরভ দত্ত। লক্ষ্য তাঁর একটাই- দেশের নবীন প্রজন্মকে বিকল্প শিক্ষার অঙ্গনে টেনে আনা। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে যাঁরা শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন, সৌরভ তাঁদের ক্যামেরাবন্দি করছেন। তাঁদের নিয়ে তৈরি করছেন তথ্যচিত্র। ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে সেই গল্প ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়।
আদি প্রস্তর যুগের মানুষ খাবারের সন্ধানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াত। তাদের বলা হত যাযাবর। ইংরেজিতে নোম্যাড। সেটা মাথায় রেখেই সৌরভ চালু করেছেন 'নোম্যাড প্রোজেক্ট'।
বারাসতে কেটেছে সৌরভের ছোটবেলায। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কাজের সন্ধানে সৌরভ পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। তার পর সিনেমা তৈরির কাজে যুক্ত হন। বেশ কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেছেন তিনি। সৌরভের কথায়, '২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করেছি। সেই কাজ করার সময়েই আমার উপলব্ধি হয়, যেন শুধু টাকা রোজগারের জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করে কোনও মজা পাচ্ছি না।' তাঁর বক্তব্য, '২০১৬ সালে আমার ছেলে হয়। ক্রমশ সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, চেনা ছকের বাইরে বহু জায়গায় বিকল্প পদ্ধতিতে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।' সৌরভ বলেন, 'সে সব দেখে আমার চোখ খুলে যায়। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, এই বিষয়কে আরও বেশি করে সামনে আনা দরকার। তার পর থেকে এই যাযাবরের জীবন বেছে নিয়েছি।'
সৌরভের কাছ থেকে জানা গেল, মহারাষ্ট্রের থানু এলাকায় একটি আদিবাসী স্কুল রয়েছে, যেখানে শিক্ষা দেওয়া হয় পুরোপুরি কম্পিউটারে। স্কুলে কোনও প্রথাগত ক্লাসরুম নেই। মাত্র তিনটি ঘর। সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রী এক জায়গায় বসে কম্পিউটারেই লেখাপড়া শিখছে। ভিডিয়ো এবং হেডফোনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের গল্প শোনানো হয়। কম্পিউটারে লগ ইন করে অঙ্ক, ইংরেজি, ভাষা সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল সবই জানতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। পরীক্ষাও নেওয়া হয় কম্পিউটারে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালিত এই স্কুলে প্রায় ১২০ জন আদিবাসী পড়ুয়া। এ বছরই প্রথম দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দেবে ওই স্কুলের পড়ুয়ারা।
রাজস্থানের উদয়পুরে স্বরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও সিলেবাস নেই। এখানে ভর্তি হতে কোনও মার্কশিট দেখাতে হয় না। ছাত্রছাত্রীরা দু'বছরের জন্য এখানে ভর্তি হয়। ফি না-দিলেও চলে। ১৭ বছরের ছেলেমেয়েরা এখানে ভর্তি হতে পারে। দু'বছরের প্রোগ্রাম। ছাত্রদের বলা হয় খোঁজি। পাশ করে বেররোনার পর তাদের বলা হয় আঘাজিজ। পুনেতে একটি স্কুল আছে, যার নাম স্বয়াম্বোধ গুরুকূল। ৩০-৪০ জন পড়ুয়ার সঙ্কুলান সেখানে। যারা সাধারণ স্কুলে ফেল করে, মূলত তাদেরই নিয়ে আসা হয় এখানে। কী কারণে এক জন পড়ুয়া ফেল করেছে, সেটা প্রথমে খুঁজে বের করা হয়। সেই মতো তাদেরকে সঠিক ভাবে অভিনব পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়।
মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকায় একটি স্কুল তৈরি হয়েছে, যেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে সক্ষমরাও একই ক্লাসে পড়াশোনা করছে। এর ফলে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মানসিক উদ্যম বাড়ছে। স্কুলের নাম 'সমাবেশি পাঠশালা'। সৌরভ দত্ত বলছেন, 'এখনও পর্যন্ত এই রকম প্রায় ৩০টি স্কুলের সন্ধান পেয়েছি, যারা শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছে। তার মধ্যে ১০টিকে ক্যামেরাবন্দি করতে পেরেছি।'
Source: Ei Samay