করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। মানুষ ঘরবন্দি। কাজকর্ম সব শিকেয় উঠেছে। সবচেয়ে বিপদ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনের। ভবঘুরেদের অবস্থা তো কহতব্য নয়। এ অবস্থায় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেন্দ্র বা রাজ্যের তহবিলে অর্থ দান করছেন, কেউ দিচ্ছেন চাল-ডাল। বারাসতের ন’পাড়ার দাস পরিবারও সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। তবে চাল-ডাল দিয়ে নয়, দুঃস্থদের হাতে তুলে দিচ্ছে একটি করে জ্যান্ত মুরগি।
কিন্তু হঠাৎ জ্যান্ত মুরগি বিলি কেন? দাস বাড়ির ছেলে তুহিন বললেন, ‘করোনা মোকাবিলায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকাটা জরুরি। নিয়মিত প্রোটিন খাওয়া দরকার। লোকে চাল-ডাল দিচ্ছে। গরিবদের পেট ভরছে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি গড়ে উঠছে? না। তবে ওদের করোনা হলে কী হবে? তাই এই ব্যবস্থা।’
যেমন ভাবা তেমন কাজ। বারাসতের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুঃস্থ পরিবারগুলির বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাস পরিবারের দুই ছেলে তুহিন ও সজল মুরগি বিলি করে দিয়ে এসেছেন। এমন সাহায্য পেয়ে অনেকেই অবাক। তখন তুহিন-সজল সবাইকে বুঝিয়ে বলছেন, যে চাল-ডাল শুধু নয়, মুরগিকেও ত্রাণ হিসেবে যেন গ্রহণ করেন সকলে। এমন ত্রাণ পেয়ে যারপরনাই খুশি সকলে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা হরিগোপাল সাঁতরা বললেন, ‘ওরা যে এ ভাবে ভেবেছে, সে জন্য ধন্যবাদ। সত্যিই আমাদের পুষ্টিকর খাওয়ার জোটে না। রোগ হলে সহজে সেরে উঠব না। আর করোনা হলে তো কথাই নেই। দাস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে আমার কুর্নিশ।’
বারাসতের ন’পাড়ার দাস পরিবার বেশ সম্পন্ন। প্রতি বছর ধুমধাম করে বাসন্তী পুজো করে দাসেরা। এ বছর লকডাউনের জেরে পুজোয় কাটছাট করতে হয়েছে অনেকটাই। নমো নমো করে সারতে হয়েছে পুজো। পুজোর যে বাজেট ধরা হয়েছিল, তার অনেকটাই রয়ে গিয়েছিল। সেই টাকাটা বিপদের দিনে আর্তের সেবায় কাজে লাগানো হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু কী ভাবে? পরিবারের কেউ বলেন, থোক টাকাটা ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হোক। কেউ বলেন, স্থানীয় গরিব মানুষদের চাল-ডাল দেওয়া হোক। কারও মত ছিল, খিচুড়ি রান্না করে কয়েক দিন খাওয়ানো হলেই ভালো হয়। এমন নানা মতের মধ্য উঠে আসে মুরগির কথা। সকলেই একবাক্যে রাজি হয়ে যান।
বাড়ির নবীন সদস্য তুহিন আর সজলের উপর পড়ে মুরগি বণ্টনের দায়িত্ব। দু’জনেই সানন্দে রাজি হয়ে যান। স্থানীয় একটি পোলট্রি থেকে একশোটি মুরগি কেনা হয়। তবে শুধু মুরগিই নয়, দেওয়া হয় চাল-ডাল-নুন-তেলও। সজল-তুহিনরা জানালেন, বাড়ির বড়দের তেমনই নির্দেশ ছিল। মুরগি বিলির ফাঁকে সজল বললেন, ‘আসলে প্রতিবছর বাসন্তী পুজোয় অনেক লোক নিমন্ত্রিত থাকে। এ বছর পুজো ছাড়া সে সব আর হয়নি। তাই এত কিছু করে উঠতে পারলাম।’
মুরগি বিলির সময় সরকারি নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন সজল-তুহিন। পড়েছিলেন মাস্ক। নিয়মিত স্যানিটাইজার দিয়ে হাতও পরিষ্কার করছিলেন।
Source: Ei Samay