Showing posts with label dilapidated condition of barasat stadium. Show all posts
Showing posts with label dilapidated condition of barasat stadium. Show all posts

Thursday, February 5, 2015

সংস্কারের অভাবে ‘হানাবাড়ি’ বারাসত স্টেডিয়াম

 এক সময় যা পাওয়ার জন্য আইএফএ কর্তারা হন্যে হয়ে উঠেছিলেন, এখন হাতে পেয়েও তা ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছে৷


বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গন এখন বাংলার ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার ‘গলার কাঁটা’৷ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই স্টেডিয়াম এখন কার্যত হানা বাড়িতে পরিণত৷ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আইএফএ অ্যাকাডেমিও৷


সবথেকে আশঙ্কার কথা, এখানে আই লিগের ম্যাচ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ এ বার এপ্রিল থেকে যুবভারতীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ আই লিগে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের বাকি দু’মাসের হোম ম্যাচ হওয়ার কথা এই স্টেডিয়ামেই৷ বর্তমানে স্টেডিয়াম ও তার আশেপাশের যা হাল তাতে এই বড় টিমের ম্যাচ দেওয়া হলে বিরাট দুর্ঘটনা ঘটে যাবে৷ এআইএফএফ যদি এই স্টেডিয়াম এখন পরিদর্শন করে তাহলে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে তারা ম্যাচ তুলে নেবেই৷ মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে তাহলে আর ঘরের মাঠে ম্যাচ খেলার সুযোগই থাকবে না৷ কারণ যুবভারতীর বিকল্প হিসেবে বারাসত ছাড়া রয়েছে কল্যাণী৷ কিন্তু কল্যাণীতেও সংস্কারের কাজের জন্য স্টেডিয়াম বন্ধ৷


বছর চারেক আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের থেকে ২৫ বছরের লিজে এই স্টেডিয়াম ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিল আইএফএ৷ এর জন্য স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়িত্বই বর্তেছিল আইএফএর ওপর৷ চুক্তির শর্তে পরিষ্কার বলা হয়েছিল, স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও এর পরিকাঠামোর উন্নয়ন, পথঘাট নির্মাণ, আলো ও সৌন্দর্যায়ন করার কাজও করতে হবে আইএফএকে৷ তৈরি করতে হবে আধুনিক মানের প্রেসবক্সও৷


কিন্তু এই চার পাঁচ বছরের মধ্যে সুইমিং পুল ছাড়া পরিকাঠামোগত উন্নয়ন কিছু হয়নি৷ আর এই সুইমিং পুলটাই একমাত্র এই স্টেডিয়ামে রোজগারের একমাত্র পথ আইএফএর৷ একটা টেনিস কোর্ট করা হয়েছিল৷ তাতে কোনও দিনই খেলা না হওয়ায় এখন আপাতত তা আগাছার জঙ্গলে মুখ ঢেকেছে৷ ব্যাডমিন্টন কোর্টে ঢোকার অবস্থা নেই৷ কারণ সেখানে মাথার উপর ভেঙে পড়ছে সিমেন্টের চাঙর৷


আইএফএ তার অ্যাকাডেমি গত আড়াই বছর থেকে এখানেই চালাচ্ছে৷ কিন্তু ফুটবলারদের থাকার স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাও যেমন করা হয়নি, তেমনই হয়নি সংস্কারও৷ ফলে বাথরুম থেকে শুরু করে থাকার জায়গা এত বেহাল হয়ে পড়েছিল যে চলতি সপ্তাহ থেকে সেই অ্যাকাডেমিও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল৷


স্টেডিয়াম চত্বর ঘুরে দেখা গেল, যেন এক ভগ্নস্তুপ৷ আগাছার জঙ্গল, গ্যালারির বাইরের দিকে খসে পড়া চাঙর৷ অ্যাকাডেমির ছেলেদের থাকার ঘরের জানলা দিয়ে দেখা গেল, চারদিকে নোংরা ছেঁড়াখোঁড়া অগোছালো বিছানাপত্র, ঘরের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে বৈদ্যুতিক তার৷ তাদের থাকার জায়গার বাইরেও বৈদ্যুতিক কেবল ঝুলছে আরও বিপজ্জনকভাবে৷ জলের ট্যাপগুলো সবই খারাপ৷ গ্যালারির ভিতরের দিকে বাথরুমগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে৷ রাস্তাঘাটও পাল্লা দিয়ে খারাপ৷ সন্ধে নামার পর চারদিকে নেমে এল অন্ধকার৷ গেটের সামনে কয়েকটা আলো৷ ভিতরটা পুরো অন্ধকারে ডুবে রয়েছে৷


স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, দীর্ঘদিনের উদাসীনতার ফলে বারাসতের গর্বের এই স্টেডিয়ামের আজ হাল৷ ফিফার টাকায় তৈরি অ্যাস্ট্রো টার্ফ দেখা আর সুইমিং পুল চালিয়ে রোজগার করা ছাড়া আইএফএ আর কিছুতেই নজরদারি করতে পারছে না৷ অথচ স্টেডিয়াম দেখাশুনোর জন্য গত কয়েক বছরে কর্মী সংখ্যা অনেক বেড়েছে৷ অভিযোগ, জেলবন্দি ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের সুপারিশে ঢোকা চার কর্মচারী আইএফএ কর্মীদের থেকেও বেশি মাইনে পেতেন৷ এঁদের মধ্যে


তিনজন এখন কাজেই আসেন না৷ বাকিরাও তত্ত্বাবধানের অভাবে কাজ করেন না৷ তাই এই বেহাল অবস্থা৷


জানা গেল, স্টেডিয়ামকে ম্যাচ করানো ও অ্যাকাডেমি চালানোর জন্য উপযোগী করে তুলতে প্রায় দু’কোটি টাকা দরকার৷ স্পনসরহীন কলকাতার ফুটবলের এমনিতেই ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা৷


আইএফএ-ও তার নিয়মিত কাজকর্ম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ সেখানে এই টাকা পাওয়া খুব কঠিন৷ এর মধ্যে অবশ্য আশার আলো দেখাচ্ছেন আইএফএ সচিব উত্‍পল গঙ্গোপাধ্যায়৷ স্টেডিয়ামের বেহাল দশার কথা মেনে নিয়েও তিনি বললেন, ‘সংস্কারের কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি৷ অ্যাকাডেমি বন্ধ রাখা হয়েছে সে জন্যই৷ মার্চ মাসের মধ্যে আমরা ফের তা ব্যবহার উপযোগী করে তুলব৷ আই লিগের ম্যাচ আয়োজনের কোনও সমস্যা হবে বলে মনে করি না৷’


সচিব আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতি বলছে, আগের মতো এ বারও হয়তো বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ঢেলে জোড়াতালি দিয়ে আইএফএ আই লিগ ম্যাচ উতরে ফেলবে৷ কিন্তু সামগ্রিক উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণের পাকা ব্যবস্থা কিছুই হবে না৷ অদূর ভবিষ্যতে আইএফএর হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে এই স্টেডিয়াম৷


Source: Ei Samay