Showing posts with label prosthetic leg for barasat woman. Show all posts
Showing posts with label prosthetic leg for barasat woman. Show all posts

Friday, November 8, 2019

বিয়ের আগে দুর্ঘটনায় পা হারানো তরুণীকে নতুন জীবনের সন্ধান দিল বারাসত হাসপাতাল

 হবু স্বামীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে আমডাঙার বহিচগাছিয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রুমা খাতুন। গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন হবু স্বামী রমজান আলি বিশ্বাস। কিন্তু বিয়ের ঠিক এক মাস আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের রাহানার কাছে তাঁদের গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গুরুতর জখম রুমার প্রাণরক্ষার জন্য তাঁর বাঁ পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন চিকিৎসকেরা।


দুই পরিবারের সম্মতিতেই রুমা আর রমজানের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল ১২ অক্টোবর। কিন্তু ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা অষ্টাদশী রুমার জীবন ওলটপালট করে দেয়। পরিবারের সম্মতিতে বাঁ পা কেটে বাদ দিয়েছিলেন বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এর পরে টানা দু'মাস সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন রুমা। পা হারানোর পরে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। ক্রমশ মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছিলেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বারাসতের সরকারি হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল এবং চিকিৎসকদের উদ্যোগে শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি ১৮ বছরের তরুণীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড।


টানা দু'মাসের চেষ্টায় সাফল্য মিলেছে অনেকটাই। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া স্টিলের ক্রাচে ভর করে রুমা চলাফেরা করতে শিখেছেন। সুব্রতের উদ্যোগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রুমার জন্য একটি নকল পায়ের বন্দোবস্তও করা হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তাঁর জন্য 'বিশেষ ভাবে সক্ষম শংসাপত্রে'র ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রুমা সেই শংসাপত্র নিয়ে তাঁর মা তাজমিরা বিবি এবং হবু পিসি শাশুড়ি সাকিলা বিবির সঙ্গে বহিচগাছিয়ার বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।


বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই তৎপরতায় আপ্লুত রুমা এবং তাঁর পরিবার। নতুন ভাবে জীবন শুরু করার উদ্দেশ্যে 'ডাক্তারকাকুদের' প্রণাম করে, চোখে জল নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বলেন, 'নৃত্যশিল্পী সুধাচন্দ্রনের নকল পা নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জেনেছিলাম। আমিও নকল পা পাওয়ার পরে নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।'


রুমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এ দিন হাসপাতালে এসেছিলেন হবু স্বামী রমজানও। আমডাঙা থানার আনোখা এলাকায় বাসিন্দা রমজান বলেন, 'দুর্ঘটনার দিন আমার বাঁ দিকে সামনের সিটেই ছিল রুমা। প্রথমে ওকে বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় ছিল। তার পরে দু'মাসও খুব চিন্তায় ছিলাম। রুমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারাসত হাসপাতালের সুপার এবং ডাক্তারবাবুদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি রুমাকে ভালোবাসি। ও একটু সুস্থ হোক। তারপর দুই পরিবারের আলোচনায় নতুন করে নিকাহের দিন স্থির হবে।'


সুপার সুব্রত এদিন বলেন, 'ওর বাঁ পা বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। রেফারও করিনি। এখন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে রুমা পুরোপুরি সুস্থ। আগামী মাসেই এনআরএস হাসপাতাল থেকে রুমার জন্য নতুন নকল পা চলে আসবে। আমরা চাই বিয়ের পরে রুমা পড়াশুনা চালিয়ে যাক। জীবনের মূলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত হোক।'


Source: Ei Samay