Showing posts with label feeding slam dwellers and beggers. Show all posts
Showing posts with label feeding slam dwellers and beggers. Show all posts

Wednesday, April 1, 2020

ভিক্ষা নয়, বারাসতের অভুক্ত মুখে খিচুড়ি দিলেন সুমিত্রারা

 সুনসান স্টেশন চত্বর। দোকানপাট সব বন্ধ। ট্রেন চলাচল তো কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বারাসত স্টেশনের ভিখারিরা বুঝতেই পারছে না হঠাৎ কী হল। সব ভোঁ-ভা!

করোনাভাইরাস, লকডাউন, আইসোলেশন- এই শব্দগুলি তাঁদের কাছে অর্থহীন। দু'দিনে দু'মুঠো ভাতও জোটেনি। কে-ই বা ভাত তুলে দেবেন ওঁদের মুখে? করোনা থেকে বাঁচতে সকলে গৃহবন্দি।

গত দু'দিনের মতো শুক্রবারটাও উপোসেই কাটত ওই ভিখারিদের। খিদা মেটাতে রাস্তার কল থেকে পেট ভরে জল খাওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না। আচমকা সুনসান বারাসত স্টেশনে মুখে মাস্ক বেঁধে হাজির কয়েকজন মহিলা। সঙ্গে খিচুড়ির হাঁড়ি, হাত ধোওয়ার সাবান। প্রায় সকলে স্থানীয় একটি আবাসনের বাসিন্দা। লকডাউনের মধ্যে শহরের ভিখারিদের জন্য তাঁরা রান্না করেছেন। নিজেদের বাড়ির খাবার বাঁচিয়েই এই খিচুড়ি তৈরি হয়েছে বলে জানালেন আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা সুমিত্রা রায়। তাঁর কথায়, 'বারাসত স্টেশন বেশ কিছু মানুষের স্থায়ী ঠিকানা। স্থানীয় ব্যবসায়ী আর নিত্যযাত্রীদের ভরসায় ওঁরা বেঁচে থাকেন। কিন্তু লকডাউনের জন্য এখন সব কিছু বন্ধ। ফলে বিভিন্ন বয়সের এই ভিখারিদের উপোস করেই দিন কাটাতে হচ্ছে। আমাদের আবাসনের মহিলারা অনেকে বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে এসেছি ওঁদের জন্য।'

বারাসত স্টেশনের জনা দশেক ভিখারি খাওয়ার পরে বেঁচে গিয়েছিল অনেকটা খিচুড়ি। তা দেখে তাঁরাই প্রস্তাব দিলেন অদূরে হৃদয়পুর স্টেশন ও চাঁপাডালি মোড়ে কিছু ভবঘুরে থাকেন। গত দু'দিন তাঁদেরও পেটে কিছু পড়েনি। তাই ওঁদেরও যদি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায়। আপত্তি করেননি সুমিত্রা, জয়া, রূপারা। যানবাহন বন্ধ। বারাসত স্টেশনের ভিখারিদের সঙ্গে হেঁটেই ওই গৃহবধূরা পৌঁছে গেলেন চাঁপাডালিতে। সেখানে খাবার বিলির বন্দোবস্ত করলেন স্টেশনের ভিখারিরাই। তবে সুমিত্রাদের কড়া নির্দেশ ছিল, একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। সেই নির্দেশের অমান্য করেননি ভিখারিরা।

কিন্তু কত দিন এ ভাবে বাড়ির খাওয়া বাঁচিয়ে ভিখারিদের খাওয়ানো সম্ভব?

জবাবে কলোনি মোড়ের কৈলাস আবাসনের বাসিন্দা সুমিত্রা রায় এবং জয়া পোদ্দার বললেন, 'যতদিন পারি, এটা চালিয়ে যাব। আমরা হিসেব করে দেখেছি, নিজেরা কিছুটা কম খেলে আরও দিন পাঁচেক চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তবে বারাসত পুরসভা থেকে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা হলে সবথেকে ভালো।' সুমিত্রাদের এই উদ্যোগ দেখে বারাসতের আরও কিছু আবাসনের মহিলারা নড়েচড়ে বসেছেন। স্থানীয় চিকিৎসক গৌতম সাহা এবং তাঁর স্ত্রী সোহিনী ঠিক করেছেন শনিবার থেকে তাঁরাও হাত লাগাবেন সুমিত্রা, জয়াদের সঙ্গে। লকডাউনের মধ্যে বারাসতের কিছু ভিখারির অন্তত অন্নসংস্থানের চিন্তা দূর হল।


Source: Ei Samay