এ যেন এক অদ্ভুত সময়। এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছি আমরা, যেখানে আপন হয়ে যাচ্ছে পর আর, পর থেকে আপন হয়ে উঠতে সময় লাগছে এক মুহূর্ত। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণের ভয় দূরে ঠেলে মানবসেবায় ব্রতী হয়েছেন ওঁরা। সম্পর্কে মা-মেয়ে, শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ও ঋদ্ধি ভট্টাচার্য।
বারাসতের (Barasat) নবপল্লির বাসিন্দা পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষিকা শুভ্রাদেবী ও তাঁর মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী ঋদ্ধি মিলে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি দু’বেলা খাবার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছে শুনলেই দূরত্ব বাড়িয়ে নিচ্ছেন প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। ফলে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের। এই খবর শোনামাত্রই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন শুভ্রাদেবী। মা ও মেয়ে মিলে নিজের বাড়িতে রান্না করে করোনা রোগীদের বাড়িতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।
সাত দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তাঁদের এই উদ্যোগ। এখন কুড়ি জনেরও বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন তাঁরা। তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট পাঠিয়ে আবেদন করলেই পরদিন থেকেই বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার। মূলত বারাসত পুরসভার এলাকার করোনা আক্রান্তদের পাশে থাকতেই তাঁদের এই উদ্যোগ। মা-মেয়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ঋদ্ধির বাবা প্রতীপশংকর ভট্টাচার্য। ঋদ্ধি জানান, হোয়াটসঅ্যাপে কোনও করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত ও তাঁর পরিবার খাবার দেওয়ার কথা বললেই তাঁদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে তা।
খাবারের জন্য কিংবা খাবার পৌঁছতে কোনও টাকা তো লাগবেই না, প্রয়োজনে ওষুধের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন তাঁরা। আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি খাওয়ার পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করছেন বন্ধু ও এলাকার কিছু সহৃদয় যুবক। করোনা আক্রান্তদের পুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিদিন খাবারের মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, উচ্ছে-আলু ভাজা, শাক, আলু-পটলের তরকারি, আলুপোস্ত, ডিম, মাছ, মাংস। যাঁরা নিরামিষ খান তাঁদের জন্য থাকছে সয়াবিন, পনির। বিনাপয়সায় খাবারের পাশাপাশি ওষুধ কীভাবে তাঁরা বিনামূল্যে দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ঋদ্ধি জানালেন, এখনও পর্যন্ত নিজেদের খরচে চালালেও তাঁর আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবীরা তাঁদের সাহায্যের জন্য তৈরি। তাঁদের ধারণা, দুই-একদিনের মধ্যেই সেই সংখ্যাটা প্রায় শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে। কেন এই উদ্যোগ? ঋদ্ধির জবাব, “করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকেই অসহায় বোধ করেন। খাবার কীভাবে আসবে, ওষুধ কীভাবে আনবেন এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তাঁদের চিন্তামুক্ত করতেই এই উদ্যোগ।” যতদিন করোনার এই ভয়াবহতা থাকবে, ততদিন তাঁরা এই কাজ চালিয়ে যাবেন বলেও জানান ঋদ্ধি। পাশাপাশি তাঁরা চান, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ এগিয়ে আসুন করোনা রোগীদের সাহায্যার্থে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর ৯১৪৩১৫৬৬৭০। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ৮৯০২১০৫৮৯৭।
Source: Sanbad Pratidin