Showing posts with label percussionist milk-supply barasat. Show all posts
Showing posts with label percussionist milk-supply barasat. Show all posts

Thursday, July 30, 2020

করোনায় আয় বন্ধ, বাদ্যযন্ত্র ছেড়ে দুধ বিক্রিতে শিল্পী

 গানবাজনাই ছিল ধ্যানজ্ঞান। প্রথাগত শিক্ষা সে ভাবে না পেলেও অধ্যাবসায়ের জোরে বারাসতের হৃদয়পুরের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায় রীতিমতো নামকরা শিল্পী। পার্কাশন বাজান। তবলা, কঙ্গো-সহ একাধিক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে জানেন। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কলকাতা, মুম্বইয়ের নামজাদা গায়ক-গায়িকাদের সঙ্গে বাজিয়েছেন। সঙ্গীতের সূত্রে বিদেশেও গিয়েছেন তিনি। কয়েক মাস আগেও জলসায় চুটিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন। কিন্তু করোনার কারণে শহরতলির সফল এই সঙ্গীতশিল্পীর জীবন ওলোটপালট হয়ে গিয়েছে। লকডাউন তাঁকে বাধ্য করল পেশা বদলাতে। পেটের টানে গৌরাঙ্গ এখন দুধ বিক্রি করেন।


বারাসতের পশ্চিম হৃদয়পুর হরিহরপুর এলাকায় থাকেন গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায়। সুযোগ পেয়েছেন মহম্মদ আজিজ, বিনোদ রাঠোর থেকে বাপ্পি লাহিড়ির অনুষ্ঠানে বাজানোর। কলকাতায় শিবাজি চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরী থেকে হালফিলের শিল্পীদের সঙ্গেও বাজানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। কিন্তু পরিস্থিতিতে জলসা-সহ সব রেকর্ডিং বন্ধ। ফলে কাজ হারিয়েছেন গৌরাঙ্গ। মাস তিনেক বসেই ছিলেন। কিন্তু এই ভাবে সংসার চলবে না। ছেলের পড়াশোনোর খরচও রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই পেশা বদলের সিদ্ধান্ত। শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতায় এখন তিনি দুধ বিক্রির ব্যাবসায়।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বর্ষীয়ান শিল্পী শিবাজি চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'শিল্পীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। গৌরাঙ্গবাবু একা নন, ওঁর মতো আরও অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন অন্য রাস্তা খুঁজে নিতে। তবে উনি তো তাও অন্য কাজের সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু বহু শিল্পী এমন শারীরিক অবস্থায় বা বয়সে পৌঁছে গিয়েছেন, যাঁদের পক্ষে অন্য কাজেও যাওয়া সম্ভব নয়।' শিবাজির আশঙ্কা, 'মানুষের পেটে খাবার থাকলে তবেই তাঁরা বিনোদনের কথা ভাবেন। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার একেবারে শেষ পর্যায়ে শিল্পজগৎ পুরোনো গতি ফিরে পাবে। তার আগে নয়। তত দিন পর্যন্ত বহু শিল্পীকে মারাত্মক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।' তাঁর আবেদন, গৌরাঙ্গর মতো বা তাঁর চেয়েও দুঃস্থ শিল্পীদের বিপিএল কার্ডের আওতায় এনে বিনামূল্যে খাবারটুকু পৌঁছে দেওয়া গেলে ভালো।



তবে শিবাজি যে মারাত্মক দুঃস্থ শিল্পীদের কথা ভেবে আশঙ্কায় রয়েছেন, গৌরাঙ্গ এখনও তেমন সাফাই কর্মী অবস্থায় পড়েননি। বদলে তিনি জলাঞ্জলি দিয়েছেন তাঁর স্বপ্নের জায়গাটা। ভোর সাড়ে চারটেয় সাইকেল নিয়ে ছুটতে হয় বারাসত থেকে মধ্যমগ্রাম। প্যাকেটের দুধ নিয়ে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করেন। এক শুভাকাঙ্ক্ষী নিজের দোকান ছেড়ে দিয়েছেন তাঁকে। বেলার দিকে গৌরাঙ্গ সেখানে দই, লস্যি, পনির বিক্রি করেন। গৌরাঙ্গ বলেন, 'কলকাতা, মুম্বইয়ে ফাংশন বন্ধ। টুকটাক কিছু কাজ হয়, কিন্তু পারিশ্রমিক কম। সাড়ে তিন মাস বসেই ছিলাম। ফলে সংসার চালাতে সমস্যা হচ্ছে। বন্ধুর পরামর্শে পেশা বদল করে ফেললাম।' আপাতত তালবাদ্য নয়, ডেয়ারি প্রোডাক্টাই তাঁর এবং পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আর তাই রাতে এখনও ঘুমোতে পারছেন তিনি। যে ঘুমের ভিতর স্বপ্নে এখনও দেখতে পাচ্ছেন, সেই সব মঞ্চ, সেই সব জলসা- আলোর রোশনাইয়ে যেখানে এখনও শোনা যাচ্ছে গান, এখনও পড়ছে হাততালি। শুধু অতীতের নয়, গৌরাঙ্গ চোখ বন্ধ করে তাকিয়ে আছেন ভভিষ্যতের সেই সোনালি স্বপ্নের দিনগুলোর দিকে।

Source: Ei Samay