আর কয়েক সপ্তাহ পরেই ভারতীয় টিমের জার্সি গায়ে তাঁর উড়ে যাওয়ার কথা ছিল থাইল্যান্ডে। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের কারণে কেরালার তিরুবনন্তপুরমের জাতীয় শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বারাসতে নিজের বাড়িতে ফিরে চরম সঙ্কটে বাংলার অন্যতম সেরা প্রতিশ্রুতিবান ভলিবলার মেঘা দাস। দু’বেলা পেটপুরে খাওয়ার অবস্থাও তাঁর এখন নেই। আর সেই খবর 'এই সময়' পত্রিকায় প্রকাশিত হতেই এবার এগিয়ে এলেন কলকাতা পুলিশের এক অফিসার।
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ওই অফিসার খবরটি পড়েই শুক্রবার হাজির হন মেঘার বাড়িতে। সঙ্গে করে নিয়ে যান এক মাসের জন্য চাল, ডাল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। শুধু তাই নয়, এরপর আরও সাহায্য করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ওই অফিসার চান না এই সাহায্যের প্রেক্ষিতে তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসুক। সেই কারণেই এই প্রতিবেদন তাঁর নাম প্রকাশ করা হল না। তবে, এতে যে মেঘার সমস্যার অনেকটাই আপাতত সমাধান হল, তা বলাই বাহুল্য।
৬ ফুটের বেশি উচ্চতার বছর আঠারোর মেঘার ঝুলিতে জাতীয় পর্যায়ের গোটা সাতেক সোনার মেডেল রয়েছে। মিনি, সাবজুনিয়র, জুনিয়র সহ খেলো ইন্ডিয়া গেমসে বাংলা টিমকে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন করে জাতীয় শিবিরে ডাক পেয়েছিলেন এই ‘অ্যাটাকার’। ভলিবলের কোর্টে প্রতিপক্ষকে টলিয়ে দিলেও নিজের সংসারের কোর্টের রক্ষণ কিন্তু সামলাতে পারছেন না ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী মেঘা।
মেঘার বাবা গোপাল দাস আগে পাখির ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন তিনি বারাসতের লালি সিনেমার কাছে ফুটপাতে এক ছোট্ট ইমিটেশনের দোকান চালান। এমনিতে পুজোর সময় ছাড়া দোকান প্রায় চলেই না। তার ওপর লকডাউনে তিনি তো দোকানই খুলতে না পারায় কোনও আয় নেই দিন কুড়ি ধরে। জমানো কোনও টাকাও নেই। বুধবার দুপুরে বারাসতের মালঞ্চ পাড়ায় এক চিলতে বেড়া দেওয়া ঘরে মেয়ে, বউ ও শাশুড়িকে নিয়ে বসে গোপালবাবু বলেছিলেন, ‘মেয়েটা সবে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। ভারতীয় টিমে খেললে হয় তো কিছু টাকা স্টাইপেন্ড পেত। পরে একটা চাকরি বাকরিরও পথ খুলে যেত। কিন্তু এই করোনা আমাদের সেই স্বপ্ন আপাতত থমকে দিল।’ গোপালবাবুর আরও কষ্টের কারণ একজন খেলোয়াড়কে যা খাবার দিতে হয়, তার তিনি কিছুই দিতে পারছেন না মেয়েকে। তাঁর আক্ষেপ, ‘মেয়েটা বাড়ি রয়েছে কিন্তু ওকে কোনওভাবে একটু ভাত আলুভাতে ছাড়া তো কিছুই দিতে পারছি না। রোজগার নেই।’ সঙ্গে জোড়েন, ‘ধারদেনা করে ওকে জাতীয় শিবিরে পাঠিয়েছিলাম। এখন তো লোকের কাছে আর ধার চাইতেও পারছি না।’
বাবা ভেঙে পড়লেও হার মানতে নারাজ ছিলেন মেঘা। বলছিলেন, ‘জাতীয় শিবিরে থাকলে খাবার কোনও সমস্যা হয় না। কেরালায় জুয়েল স্যর আমাদের ১৬ জন মেয়েকে তৈরি করছিলেন থাইল্যান্ডে একটা আন্তর্জাতিক জুনিয়র টুর্নামেন্টে খেলতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তা না হওয়ায় বাড়ি ফিরেছি। অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে আমি সব মানিয়ে নিয়েই নিজেকে তৈরি রাখছি জাতীয় শিবিরে যাওয়ার জন্য।’ এই জাতীয় শিবিরে বাংলা থেকে একমাত্র মেঘাই সুযোগ পেয়েছিলেন।
মেঘা বারাসতের মেয়ে হলেও তাঁর উত্থান মগরা ভলিবল অ্যাকাডেমিতে। এই অ্যাকাডেমির প্রাণপুরুষ প্রভাত ঘোষ মগরাতেই একটা বাড়ি ভাড়া করে মেঘার পরিবারকে বছরের বেশি সময় রেখে দেন। পরিবারকে আর্থিক সাহায্যও করেন। মেঘার বাবা বলছিলেন, ‘আজ মেঘা এই জায়গার পৌঁছানোর পিছনে সবটাই প্রভাতবাবুর অবদান। কিন্তু এমন লকডাউনের সময় তিনিই বা আমাদের কত সাহায্য করবেন? তাই আমরা এখন খুবই অসহায়।’
অবশেষে বাংলার প্রতিভাবান এই ভলিবলারের পাশে দাঁড়ালেন কলকাতা পুলিশের ওই অফিসার। সেজন্য খুশি মেঘা ও তাঁর পরিবার।
Source: Ei Samay