Wednesday, March 4, 2020

বাহারি ছাঁট, বিচিত্র রং ছাত্রদের চুলে! উচ্চমাধ্যমিকের অ‌্যাডমিট দিল না স্কুল কর্তৃপক্ষ

 বাহারি চুল ছেঁটে এলে মিলবে না অ্যাডমিট কার্ড। এমনই ফরমান জারি করলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বারাসত মহাত্মা গান্ধী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য শুরু হয়ে। পরে তা স্কুলের শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।


কারও ঝাঁকড়া চুলে লাল-হলুদ রং করা কারও আবার একদিক ছেঁটে পরিষ্কার। এরা প্রত্যেকেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ছাত্রদের এমন এমন বাহারি চুলের স্কুলের মান-মর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষকদের। স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, স্কুলের সম্মানের কথা মাথায় রেখে ছাত্রদের চুল কেটে আসার কথা বলা হয়েছিল। তবে, অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে না এমন কথা বলা হয়নি।


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসতের মহাত্মা গান্ধী উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মঙ্গলবার অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার কথা ছিল। সেইমতো এদিন দুপুরে ছাত্ররা অ্যাডমিট কার্ড নিতে আসে। ছাত্রদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের বাহারি চুল দেখে প্রধান শিক্ষক অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে না বলে জানান। তাদেরকে চুল কেটে এসে অ্যাডমিট কার্ড নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই নিয়ে ছাত্রদের ক্ষোভ তৈরি হয়।


শেষ পর্যন্ত স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন স্কুলের ৮০ শতাংশ ছাত্রকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক শুভেন্দুবিকাশ মাইতি জানিয়েছেন, আমাদের স্কুলের সুনাম রয়েছে। মাথায় বাহারি চুল নিয়ে অন্য স্কুলে পরীক্ষা দিতে গেলে ছাত্রদের পাশাপাশি স্কুলের সুনামও নষ্ট হতে পারে। তাই চুল কেটে এলে অ্যাডমিট কার্ড দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। তা নাহলে বুধবার সকালে এসেও অ্যাডমিট কার্ড নিতে পারে। অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে না একথা বলা হয়নি।

Source: Ei Samay



Monday, February 17, 2020

নিমন্ত্রণ সেরে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বারাসতের কাউন্সিলরের

 খুদে ভাইপোর অন্নপ্রাশন। ভাইকে সঙ্গে নিয়ে তাই বাঁকুড়ায় নেমন্তন্ন করতে গিয়েছিলেন বারাসতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য (৪৫)। ফেরার পথে চণ্ডীতলা থানার আরামবাগ-চাঁপাডাঙা-চণ্ডীতলা রোডের শিয়াখালায় একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে ধাক্কা মারে গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্রদ্যোৎ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রাণ হারান ভাই প্রণব ভট্টাচার্যও (৪০)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি গাড়ির চালক।


রবিবার রাত তখন আটটা। শিয়াখালা দেশমুখায় দাঁড়িয়েছিল একটি ট্রাক। আচমকাই সজোরে ট্রাকের পিছনে এসে ধাক্কা মারে বোলেরো গাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অসম্ভব গতিতে যাচ্ছিল গাড়িটি। ধাক্কা মেরে ট্রাকের পিছনেই খানিকটা চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে ঢুকে যায় বোলেরোর সামনের অংশ। দ্রুত ছুটে আসেন স্থানীয়রা।


দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ির ভিতর থেকে তখন রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। সামনের সিটে বসে থাকা প্রদ্যোৎ ঘটনাস্থলেই মারা যান। যদিও স্থানীয়রা প্রথমে তা বুঝতে পারেননি। প্রদ্যোতের পাশাপাশি গুরুতর জখম গাড়ির চালক দেবশঙ্কর ও পিছনের সিটে বসে থাকা প্রদ্যোতের ভাই প্রণবকে বের করে আনা হয়। তখন প্রণব বার বার বলতে থাকেন, ‘আমার দাদা বেঁচে আছে তো? দাদা বারাসতের কাউন্সিলর।’ এ কথা শুনে স্থানীয়রা চণ্ডীতলার তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায়কে ফোন করেন। সুবীর এসেই দলীয় নেতা-কর্মীদের খবর দেন। তিন জনকে নিয়ে আইয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ছোটেন স্থানীয়রা। প্রদ্যোতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকায় প্রণবকে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই প্রণবের মৃত্যু হয়। চালক দেবশঙ্করের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। রাতেই তাঁকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।


জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় ফোন করেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারকে। সুবীর বলেন, ‘কাকলি ঘোষদস্তিদারকে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দিই। উনি আমাকে প্রদ্যোতের ছবি পাঠাতে বলেন। আমি হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠাতেই উনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।’ রাতে হাসপাতালে চলে আসেন হুগলি জেলা তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদব। গাড়িটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।


মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বারাসতের নয়নকাননে প্রদ্যোতের বাড়িতে। ক’দিন বাদেই পরিবারে আনন্দানুষ্ঠান। তার আগে যেন বজ্রাঘাত নেমে এল। স্বামীর মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন প্রদ্যোতের স্ত্রী মৌমিতা। বাবাকে হারিয়ে শোকে পাথর একমাত্র মেয়ে।


প্রদ্যোতের মৃত্যুর খবর পেয়েই নয়নকাননের বাড়িতে চলে আসেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়, ভাইস চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্য কাউন্সিলর। সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রদ্যোৎ ছিল আমার ছোট ভাইয়ের মতো। নিজগুণে এবং দক্ষতার সঙ্গে পুরসভার শিক্ষাদপ্তর সামলাত।’ কথা বলতে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।


Source: Ei Samay


Tuesday, February 4, 2020

চাকরির টোপ দিয়ে বারাসতের বাসিন্দাকে দিয়ে দুবাই এ পরিচারিকার কাজ

 ফেসবুকে আলাপ। সেই আলাপ থেকে বন্ধুত্ব। বারাসতের দম্পতির সঙ্গে কাকদ্বীপের যুবকের এই ঘনিষ্ঠতাই বিপদ ডেকে আনল। বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বারাসতের গৃহবধূকে দুবাইতে নিয়ে গিয়ে পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে পাসপোর্টও। স্ত্রীকে ফিরে পেতে বিদেশ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বামী।


কয়েক মাস আগে বারাসতের বাসিন্দা সায়ক চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয়েছিল কাকদ্বীপের যুবক মিঠুন বাগের। সেই আলাপের সূত্রেই মিঠুন দুবাইয়ে নার্সের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় বলে অভিযোগ। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিঠুন।


বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের ধারে আবাসনে থাকেন চক্রবর্তী দম্পতি। সায়ক শেয়ার বাজারে কাজ করেন। শেয়ারের ব্যবসায় লোকসানের মুখে পড়েছিলেন তিনি। ফলে সংসার চালানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ দিকে ছেলে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়ে। ছেলের স্কুলের খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন সায়ক ও তানিয়া। এই আর্থিক টানাটানির মাঝেই সায়ক-তানিয়ার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় মিঠুন বাগের। সায়ক বলেন, ‘মিঠুন আমার স্ত্রীকে কাতারে নার্সের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এ জন্য আমার থেকে তিন লক্ষ টাকাও নিয়েছিলেন। এরপর মিঠুনই এক এজেন্সির মাধ্যমে তানিয়াকে কাতারে নিয়ে যান। আমরা ভেবেছিলাম মিঠুন বাগ ওই এজেন্সির একজন দালাল।’ সায়ক জানিয়েছেন, প্রথমে কাতারে নার্সের চাকরি দিলেও, পরে তানিয়াকে কাতার থেকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তানিয়াকে দুবাইতে নার্সের চাকরি না দিয়ে লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাতে রাজি না হওয়ায় তানিয়ার উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারও শুরু হয়েছে।


এ সবই দিন কয়েক আগে বাড়িতে ভিডিয়ো কল করে তানিয়া জানিয়েছেন সায়ককে। তানিয়া স্বামীকে জানান, মিঠু একজন জালিয়াত। তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কোনও উপায়ে এখন দেশে ফিরতে মরিয়া তানিয়া। মায়ের এই খবর শুনে উৎকন্ঠায় তানিয়া একমাত্র ছেলে ১৩ বছরের ঋষিতও। সায়ক জানালেন, ছেলে খুবই কান্নাকাটি করছে।


স্ত্রীকে ফিরে পেতে ইতিমধ্যেই বিদেশমন্ত্রক চিঠি লিখেছেন সায়ক। চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরেও। যোগাযোগ করেছেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে। বারাসত এবং কাকদ্বীপেও অভিযোগ দায়ের করেছেন সায়ক চক্রবর্তী। সায়ক জানালেন, প্রশাসনের তরফে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।


বারাসতের বাড়িতে ছেলেক পাশে নিয়ে সায়ক বললেন, ‘আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট, অন্যান্য পরিচয়পত্র-সহ যাবতীয় নথি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা ভীষণই চিন্তায় আছি।’


যোগাযোগ করা হয়েছিল মিঠুন বাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওদের ফেসবুকে পরিচয় হয়েছিল। বন্ধুত্বও ছিল। কিন্তু সামনাসামনি কোনওদিন দেখা হয়নি। তানিয়া কোথায় কাজে গিয়েছেন, সেই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’

Source: Ei Samay


Sunday, January 26, 2020

প্রজাতন্ত্র দিবস নয়, বারাসতের সূবর্ণপত্তনবাসীর কাছে দিনটা 'মহালয়া'

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কাছেই বার্মা কলোনি। মূলত মায়ানমার থেকে আসা লোকজনের বাস। তবে লোকজন চেনে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কলোনি বলেই। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনী বা মাস্টারদা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন- সেই সময়কার বিপ্লবীদের পরিজনরা এখনও থাকেন এখানেই।



দেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক লড়াইয়ে পর মিলেছে অধিকার। স্বাধীন দেশে বার্মা কলোনিতে বসতি গড়েন সংগ্রামীরা।  আজও তাই প্রজাতন্ত্র দিবস তাঁদের কাছে হয়ে উঠেছে 'মহালয়া'। পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার দিন। এলাকার মানুষজনের মুখে মুখে ফেরে অগ্নিযুগের ইতিহাস। ছাতি চওড়া হয়ে যায় গর্বে। বার্মা কলোনির অবশ্য পোশাকি নাম সূবর্ণপত্তন। মণিমুক্তোর মত ছড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। আট থেকে আশি- সকলেই নাগাড়ে বলে যেতে পারেন সে সব। শুনতে শুনতে কেটে যাবে আস্ত দিন।

প্রজাতন্ত্র দিবস সে কারণেই একটু অন্যরকম বার্মা কলোনির। আজাদ হিন্দ ফৌজের কায়দাতে আজও চলে কুচকাওয়াজ। সামিল হয় এলাকার কচিকাঁচারা। বছর ৭০-এর স্বপন কুমার নন্দীর বাবা ছিলেন নেতাজির দেহরক্ষী। স্বপন বাবু বলেন, “বাবা মায়ের মুখে নেতাজির যে গল্প শুনেছি, স্মরণ করলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়।” 

রেনুকানাথ দত্তের স্বামী, ভাসুর দুজনেই আবার মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে ছিলেন। প্রবীণদের কাছ থেকে অতীতের গল্প শুনে বিস্মিত পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সূর্য চৌধুরী। তার কথায়,“আমি মায়ের মুখে শুনেছি আমাদের পাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাড়া”। ফেরার সময় পাড়ার মোড়ে নেতাজি বাল ব্রিগেড ক্লাবে উচ্চগ্রামে বাজছে “কদম কদম বাড়ায়ে যা”।


Source: Zee24Ghanta 

Sunday, January 12, 2020

বারাসতের স্টেশনের দেওয়াল বাঁচাতে ছবিতে সাজ

স্টেশনের দেওয়ালগুলি মাঝেমধ্যেই পরিষ্কার করে রং করা হত। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ফের নোংরা হত গুটখা আর পানের পিকে। বিজ্ঞাপনের পোস্টারে বিসদৃশ হয়ে থাকত দেওয়ালও। এ বার সে সবই পরিষ্কার করে ছবি আঁকা হচ্ছে স্টেশনের দেওয়ালে। ভরে উঠছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে নেতাজি, মাদার টেরিজা, ট্রাম, পুরনো কলকাতার চালচিত্রে। শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বারাসত জংশনে রেলের দেওয়ালে ছবি আঁকার পর্ব প্রায় শেষের পথে।


দেওয়াল সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি বাংলা তথা দেশের পুরনো ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্যও এই প্রয়াস, দাবি পূর্ব রেলের। এমনই একটি দেওয়ালে ছবি আঁকছিলেন রাজারহাটের জামালপাড়ার বাসিন্দা দেবাশিস চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘ছবিগুলি দেখে নতুন প্রজন্মও এ শহর, এ দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী হবে। তাই সে সব নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’’ অন্য এক শিল্পী সুশান্ত সরকার বলেন, ‘‘মূর্তি ভাঙা বা সৃষ্টিশীল জিনিসকে ধ্বংস করার প্রতিযোগিতা চলছে চারদিকে। সেই পরিস্থিতিতে দেওয়ালে ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার এমন কাজ পরিবেশ এবং সাধারণ মানুষ সকলের পক্ষেই সুন্দর বার্তা দেবে।’’


রেলের এই ভাবনার প্রশংসা করেছেন নিত্যযাত্রী থেকে বারাসতের বাসিন্দাদের বড় অংশ। বারাসত কলেজের পড়ুয়া রাজা দাসের দাবি, ‘‘ফাঁকা দেওয়াল দেখলেই গুটখা কিংবা পানের পিক ফেলে নোংরা করেন মানুষ। ছবি আঁকা দেওয়াল দেখে নিশ্চয়ই সেই প্রবণতা কমবে।’’ 


পূর্ব রেল সূত্রের খবর, সচেতন ভাবেই ছবিগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন মনীষী, প্রকৃতি, বাউল এবং সাঁওতাল লোকনৃত্য, পুরনো কলকাতা, শহরের দর্শনীয় স্থান। নজর দেওয়া হয়েছে, স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের উপরেও। ছবি এঁকে এ ভাবে স্টেশনের দেওয়াল সাজিয়ে তুলতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল।


পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি রেলযাত্রীরা যেন চোখের আরাম পান, সেই ভাবনা থেকে এই উদ্যোগ। পরীক্ষামূলক ভাবে এটা বারাসতে করা হল। ধীরে ধীরে অন্য স্টেশনগুলিতেও এমন কিছু করার ভাবনা রয়েছে।’’

Source: Ananda Bazar

Friday, January 10, 2020

বারাসতে যাত্রা উৎসবের মঞ্চ থেকেই শিল্পীদের সহায়তা এবং উন্নয়ন প্রকল্পের সুচনা

 ২৪তম যাত্রা উৎসবের উদ্বোধনে এসে শিল্পীদের জন্য খুশির খবর শুনিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার দুঃস্থ যাত্রা শিল্পীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেই ভাতা এক লাফে দশ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় সাধুবাদ জানিয়েছেন যাত্রাশিল্পীরা।


প্রতি বছর বারাসতের কাছারি ময়দানেই হয়ে থাকে যাত্রা উৎসব। এ বছর যে উৎসব ২৪ বছরে পা দিল। বৃহস্পতিবার ছিল উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা। প্রদীপ জ্বালিয়ে, ঘণ্টা বাজিয়ে উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।


যাত্রা গ্রাম বাংলার কৃষ্টি এবং সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শুধু প্রতি বছর যাত্রা উৎসব করাই নয়, এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং অন্যান্য কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার। দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের জন্য বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে রাজ্য সরকারের ৬৪৪ জন দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীকে বার্ষিক ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়। বারাসতের কাছারি ময়দানের যাত্রা উৎসবের মঞ্চ থেকে এ দিন মমতা বন্দোপাধ্যায় সেই ভাতা বৃদ্ধির ঘোষনা করলেন। জানালেন, ভাতার টাকা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার করা হল। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মধ্যে যাত্রাশিল্পীদেরও যুক্ত করা হল বলে এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।


মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরেই হাততালিতে ফেটে পড়েন যাত্রাশিল্পীরা। কলকাতা যাত্রা কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদক হারাধন রায় বলেন, 'দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের ভাতা ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে আমরা ভীষণ খুশি। একই সঙ্গে উনি যাত্রাশিল্পীদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে যুক্ত করার কথাও এ দিন ঘোষণা করেছেন। এমন মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ওঁকে ধন্যবাদ। কাছারি ময়দানে উপস্থিত যাত্রাশিল্পী দেবযানী চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'যাত্রার সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা যা রোজগার করেন, তাতে সঞ্চয় বিশেষ হয় না। ফলে এই সমস্ত শিল্পীদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা একজন যাত্রাশিল্পী হিসেবে আমার কাছে অত্যন্ত সুসংবাদ।'


এ দিন যাত্রা উৎসবের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী যাত্রাসম্রাট শান্তিগোপাল এবং তপনকুমার পুরস্কার যাত্রাশিল্পীদের হাতে তুলে দেনন। বামি ভট্টাচার্য, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, মহুয়া ভট্টাচার্য, শুভ মুখোপাধ্যায়, সমীর সেনদের মতো যাত্রা ব্যক্তিত্বদের পুরস্কৃত করা হয়।


এ দিন যাত্রা উৎসবের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ৫১টি প্রকল্পের সূচনা করেছেন। যে প্রকল্পগুলির জন্য রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে ৩১১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে দেগঙ্গা-হাড়োয়া পানীয় জল প্রকল্প যেমন আছে, তেমনই আছে জেলার ব্লকে রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন। এ ছাড়াও এ দিন মঞ্চ থেকে আড়াইশো কোটি টাকার নতুন প্রকল্প চালু করেন তিনি। এ দিনের মঞ্চ থেকেই সবুজশ্রী প্রকল্পে শিশু এবং মায়েদের হাতে চারা গাছ তুলে দিয়েছেন মমতা।


Source: Ei Samay

Friday, January 3, 2020

বিকল্প শিক্ষার রাস্তা ‘যাযাবর’ বারাসতের তরুণের ক্যামেরায় বন্দি

 পেশায় বলিউডের চিত্র পরিচালক। কিন্তু নেশায় যাযাবর। যে কারণে আপাতত লাইট-অ্যাকশন-ক্যামেরা ছেড়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বারাসতের যুবক সৌরভ দত্ত। লক্ষ্য তাঁর একটাই- দেশের নবীন প্রজন্মকে বিকল্প শিক্ষার অঙ্গনে টেনে আনা। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে যাঁরা শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন, সৌরভ তাঁদের ক্যামেরাবন্দি করছেন। তাঁদের নিয়ে তৈরি করছেন তথ্যচিত্র। ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে সেই গল্প ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়।


আদি প্রস্তর যুগের মানুষ খাবারের সন্ধানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াত। তাদের বলা হত যাযাবর। ইংরেজিতে নোম্যাড। সেটা মাথায় রেখেই সৌরভ চালু করেছেন 'নোম্যাড প্রোজেক্ট'।


বারাসতে কেটেছে সৌরভের ছোটবেলায। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কাজের সন্ধানে সৌরভ পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। তার পর সিনেমা তৈরির কাজে যুক্ত হন। বেশ কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেছেন তিনি। সৌরভের কথায়, '২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করেছি। সেই কাজ করার সময়েই আমার উপলব্ধি হয়, যেন শুধু টাকা রোজগারের জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করে কোনও মজা পাচ্ছি না।' তাঁর বক্তব্য, '২০১৬ সালে আমার ছেলে হয়। ক্রমশ সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, চেনা ছকের বাইরে বহু জায়গায় বিকল্প পদ্ধতিতে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।' সৌরভ বলেন, 'সে সব দেখে আমার চোখ খুলে যায়। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, এই বিষয়কে আরও বেশি করে সামনে আনা দরকার। তার পর থেকে এই যাযাবরের জীবন বেছে নিয়েছি।'


সৌরভের কাছ থেকে জানা গেল, মহারাষ্ট্রের থানু এলাকায় একটি আদিবাসী স্কুল রয়েছে, যেখানে শিক্ষা দেওয়া হয় পুরোপুরি কম্পিউটারে। স্কুলে কোনও প্রথাগত ক্লাসরুম নেই। মাত্র তিনটি ঘর। সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রী এক জায়গায় বসে কম্পিউটারেই লেখাপড়া শিখছে। ভিডিয়ো এবং হেডফোনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের গল্প শোনানো হয়। কম্পিউটারে লগ ইন করে অঙ্ক, ইংরেজি, ভাষা সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল সবই জানতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। পরীক্ষাও নেওয়া হয় কম্পিউটারে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালিত এই স্কুলে প্রায় ১২০ জন আদিবাসী পড়ুয়া। এ বছরই প্রথম দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দেবে ওই স্কুলের পড়ুয়ারা।


রাজস্থানের উদয়পুরে স্বরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও সিলেবাস নেই। এখানে ভর্তি হতে কোনও মার্কশিট দেখাতে হয় না। ছাত্রছাত্রীরা দু'বছরের জন্য এখানে ভর্তি হয়। ফি না-দিলেও চলে। ১৭ বছরের ছেলেমেয়েরা এখানে ভর্তি হতে পারে। দু'বছরের প্রোগ্রাম। ছাত্রদের বলা হয় খোঁজি। পাশ করে বেররোনার পর তাদের বলা হয় আঘাজিজ। পুনেতে একটি স্কুল আছে, যার নাম স্বয়াম্বোধ গুরুকূল। ৩০-৪০ জন পড়ুয়ার সঙ্কুলান সেখানে। যারা সাধারণ স্কুলে ফেল করে, মূলত তাদেরই নিয়ে আসা হয় এখানে। কী কারণে এক জন পড়ুয়া ফেল করেছে, সেটা প্রথমে খুঁজে বের করা হয়। সেই মতো তাদেরকে সঠিক ভাবে অভিনব পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়।


মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকায় একটি স্কুল তৈরি হয়েছে, যেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে সক্ষমরাও একই ক্লাসে পড়াশোনা করছে। এর ফলে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মানসিক উদ্যম বাড়ছে। স্কুলের নাম 'সমাবেশি পাঠশালা'। সৌরভ দত্ত বলছেন, 'এখনও পর্যন্ত এই রকম প্রায় ৩০টি স্কুলের সন্ধান পেয়েছি, যারা শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছে। তার মধ্যে ১০টিকে ক্যামেরাবন্দি করতে পেরেছি।'

Source: Ei Samay


Wednesday, December 25, 2019

অন্য এক বড় দিন পালিত হল বারাসতে

 কুকুর সম্পর্কে 'দুটো একটা কথা' জানতেন ছকভাঙা বাংলা কথাকার সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। অবলা জীবগুলো সম্পর্কে অনেকটাই জানেন বারাসতের একদল পশুপ্রেমী! তাঁদেরই আয়োজনে পনির বিরিয়ানি তারিয়ে খেল পথ-কুকুরের দল।


মঙ্গলবার রাত থেকে চলছিল রান্না। 'পশুপতি অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সদস্য অর্পিতা চৌধুরী, নীলাঞ্জনা রায়, লোপামুদ্রা বসু দু'চোখের পাতা এক করতে পারেননি। ৬০০ কেজি চালে তেল-মশলা সহযোগে মিশল ২০০ কেজি পনির। সকালেই সারা সব তোড়জোড়। বড়দিনের বেলায় পাড়ায় পাড়ায় সুবাস ছড়িয়ে শহর পরিক্রমা শুরু। ছ'টি ভ্যানে পনির বিরিয়ানি চাপিয়ে আধ ডজন দলে ভাগ হয়েছিলেন সংগঠনের সদস্যরা। বারাসতের হরিতলা, শেঠপুকুর, হৃদয়পুর, বনমালীপুর, নবপল্লি এলাকা ঘুরে ঘুরে সারমেয়দের মাঝে কাগজের থালায় সাজিয়ে দিলেন পনির বিরিয়ানি। রাস্তার গোরু, ছাগল ও পাখিদের জন্য ছিল কেক ও কমলালেবু। বাদ যায়নি পথশিশুরাও। তাদের বাড়তি পাওনা ছিল শীতবস্ত্র।


চাঁদিফাটা গরমে রাস্তার ধারে জলের পাত্র রাখা থেকে শুরু করে হিংসার শিকার কোনও পথ-কুকুরের হয়ে সরব হয় এই পশুপ্রেমী সংগঠন। নীলাঞ্জনা রায়ের বক্তব্য, 'রাস্তার কুকুররা সব সময় উপেক্ষিত। আমরা সারা বছর এদের জন্য কাজ করি। ওরা আছে বলেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই আমরা কয়েক জন রাস্তার কুকুরদের পনির বিরিয়ানি খাইয়ে বড়দিন পালন করলাম।' অর্পিতা চৌধুরীর কথায়, 'পথশিশুরাও উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তাদেরও এ দিন আমরা শীতপোশাকের সঙ্গে কমলালেবু, কলা ও কেক উপহার দিয়েছি।'


সকালে বারাসতের প্ল্যাটফর্মবাসী শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করেন জেলা পরিষদ কর্মী আশিস হালদার। বছর ৩৬-এর আশিসের বাড়ি ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের বামুনগাছিতে। তাঁর ব্যতিক্রমী জন্মদিন পালনের সাক্ষী ছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী ও পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। অসহায় শিশুদের হাতে মিষ্টি, ফল ও শীতবস্ত্র তুলে দেন আশিস। বলেন, 'প্রতি বছর পরিবারের লোকেরাই জন্মদিন পালন করেন। তাতেই সামিল হই। অফিসে আসা-যাওয়ার পথে দেখেছি, প্ল্যাটফর্মের শিশুরা কী কষ্টের মধ্যে থাকে। তাই জন্মদিনের আনন্দটা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। এর জন্য একটা আলাদা অনুভূতি হয়েছে।' জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, 'এমন একটা অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। প্রত্যেকে অন্যের জন্য কিছু করলে সমাজ সুস্থ থাকবে।' বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, 'ভগবান যিশু সমন্বয়ের কথা বলে গিয়েছেন। আশিস জন্মদিনে সেটাই করে দেখাল।'

Source: Ei Samay

Monday, December 9, 2019

বারাসতের হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় পরিবেশ সচেতনতার বার্তা

 জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতাতেও নাগরিক সচেতনতার বার্তা। তাঁদের হাতের কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গি প্রতিরোধ থেকে জল অপচয় বন্ধ করা বা বায়ুদূষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন হস্তশিল্পীরা। নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি এনআরসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকেও তাঁরা হাতের কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ ছাড়াও, ছিল নকশিকাঁথা, কাঁথা-স্টিচ-সহ কাগজের কোলাজ এবং কাঠের তৈরি সামগ্রী। বৃহস্পতিবার বারাসতের রবীন্দ্র ভবনে হয়ে গেল জেলার হস্তশিল্প প্রতিযোগিতা।


বায়ুতে দূষণের পরিমাণ মাত্রা ছাড়িয়েছে দিল্লির মতো রাজধানী শহরে। কলকাতাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি জল সঙ্কটও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণ কিংবা জল সঙ্কটের সমস্যা নিয়ে এখনও সাধারণ মানুষ সে ভাবে সচেতন নয়। তাই এই সমস্যাগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতার পাঠ দিতে এ বার দেখা গেল হস্তশিল্পীরাও আসরে নেমেছেন।


কাঁচরাপড়ায় থাকেন হস্তশিল্পী বিশ্বজিৎ রায়। তিনি তাঁর অসাধারণ শিল্প-নৈপুণ্যে কাঠের উপর ফুটিয়ে তুলেছেন নাগরিক সচেতন সমাজ। তাতে দেখানো হয়েছে গাছ ধ্বংসের কারণে গোটা বিশ্ব রুক্ষ হয়ে উঠছে। আবার, জল অপচয় সম্পর্কে সচেতন করতেও বিশ্বজিৎ হস্তশিল্পকেই মাধ্যম করেছেন। এই হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় গ্রাম বাংলার নকশি-কাঁথা শিল্প তুলে ধরেছেন শাসনের গোলাবাড়ির শিল্পী সাহিদা বেগম। দত্তপুকুরের জহর মল্লিক কাঁথা-স্টিচের উপরে নানা শিল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। দমদমের পিনাকী দাশগুপ্তের কাঠ দিয়ে তৈরি সিঁদুরের কৌটোও নজর কেড়েছে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের ম্যানেজার সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'হস্তশিল্পে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ প্রতি বছর নিয়ে থাকি আমরা।'


এ বছরের জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৭৫ জন হস্তশিল্পী। প্রতিযোগিতায় মোট ১২ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

Source: Ei Samay

Friday, November 8, 2019

বিয়ের আগে দুর্ঘটনায় পা হারানো তরুণীকে নতুন জীবনের সন্ধান দিল বারাসত হাসপাতাল

 হবু স্বামীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে আমডাঙার বহিচগাছিয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রুমা খাতুন। গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন হবু স্বামী রমজান আলি বিশ্বাস। কিন্তু বিয়ের ঠিক এক মাস আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের রাহানার কাছে তাঁদের গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গুরুতর জখম রুমার প্রাণরক্ষার জন্য তাঁর বাঁ পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন চিকিৎসকেরা।


দুই পরিবারের সম্মতিতেই রুমা আর রমজানের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল ১২ অক্টোবর। কিন্তু ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা অষ্টাদশী রুমার জীবন ওলটপালট করে দেয়। পরিবারের সম্মতিতে বাঁ পা কেটে বাদ দিয়েছিলেন বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এর পরে টানা দু'মাস সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন রুমা। পা হারানোর পরে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। ক্রমশ মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছিলেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বারাসতের সরকারি হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল এবং চিকিৎসকদের উদ্যোগে শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি ১৮ বছরের তরুণীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড।


টানা দু'মাসের চেষ্টায় সাফল্য মিলেছে অনেকটাই। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া স্টিলের ক্রাচে ভর করে রুমা চলাফেরা করতে শিখেছেন। সুব্রতের উদ্যোগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রুমার জন্য একটি নকল পায়ের বন্দোবস্তও করা হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তাঁর জন্য 'বিশেষ ভাবে সক্ষম শংসাপত্রে'র ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রুমা সেই শংসাপত্র নিয়ে তাঁর মা তাজমিরা বিবি এবং হবু পিসি শাশুড়ি সাকিলা বিবির সঙ্গে বহিচগাছিয়ার বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।


বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই তৎপরতায় আপ্লুত রুমা এবং তাঁর পরিবার। নতুন ভাবে জীবন শুরু করার উদ্দেশ্যে 'ডাক্তারকাকুদের' প্রণাম করে, চোখে জল নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বলেন, 'নৃত্যশিল্পী সুধাচন্দ্রনের নকল পা নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জেনেছিলাম। আমিও নকল পা পাওয়ার পরে নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।'


রুমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এ দিন হাসপাতালে এসেছিলেন হবু স্বামী রমজানও। আমডাঙা থানার আনোখা এলাকায় বাসিন্দা রমজান বলেন, 'দুর্ঘটনার দিন আমার বাঁ দিকে সামনের সিটেই ছিল রুমা। প্রথমে ওকে বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় ছিল। তার পরে দু'মাসও খুব চিন্তায় ছিলাম। রুমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারাসত হাসপাতালের সুপার এবং ডাক্তারবাবুদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি রুমাকে ভালোবাসি। ও একটু সুস্থ হোক। তারপর দুই পরিবারের আলোচনায় নতুন করে নিকাহের দিন স্থির হবে।'


সুপার সুব্রত এদিন বলেন, 'ওর বাঁ পা বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। রেফারও করিনি। এখন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে রুমা পুরোপুরি সুস্থ। আগামী মাসেই এনআরএস হাসপাতাল থেকে রুমার জন্য নতুন নকল পা চলে আসবে। আমরা চাই বিয়ের পরে রুমা পড়াশুনা চালিয়ে যাক। জীবনের মূলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত হোক।'


Source: Ei Samay