Friday, January 3, 2020

বিকল্প শিক্ষার রাস্তা ‘যাযাবর’ বারাসতের তরুণের ক্যামেরায় বন্দি

 পেশায় বলিউডের চিত্র পরিচালক। কিন্তু নেশায় যাযাবর। যে কারণে আপাতত লাইট-অ্যাকশন-ক্যামেরা ছেড়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বারাসতের যুবক সৌরভ দত্ত। লক্ষ্য তাঁর একটাই- দেশের নবীন প্রজন্মকে বিকল্প শিক্ষার অঙ্গনে টেনে আনা। চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে যাঁরা শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন, সৌরভ তাঁদের ক্যামেরাবন্দি করছেন। তাঁদের নিয়ে তৈরি করছেন তথ্যচিত্র। ফেসবুক, ইউটিউবের মাধ্যমে সেই গল্প ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়।


আদি প্রস্তর যুগের মানুষ খাবারের সন্ধানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াত। তাদের বলা হত যাযাবর। ইংরেজিতে নোম্যাড। সেটা মাথায় রেখেই সৌরভ চালু করেছেন 'নোম্যাড প্রোজেক্ট'।


বারাসতে কেটেছে সৌরভের ছোটবেলায। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কাজের সন্ধানে সৌরভ পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। তার পর সিনেমা তৈরির কাজে যুক্ত হন। বেশ কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেছেন তিনি। সৌরভের কথায়, '২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করেছি। সেই কাজ করার সময়েই আমার উপলব্ধি হয়, যেন শুধু টাকা রোজগারের জন্যই আমি কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করে কোনও মজা পাচ্ছি না।' তাঁর বক্তব্য, '২০১৬ সালে আমার ছেলে হয়। ক্রমশ সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি, চেনা ছকের বাইরে বহু জায়গায় বিকল্প পদ্ধতিতে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।' সৌরভ বলেন, 'সে সব দেখে আমার চোখ খুলে যায়। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, এই বিষয়কে আরও বেশি করে সামনে আনা দরকার। তার পর থেকে এই যাযাবরের জীবন বেছে নিয়েছি।'


সৌরভের কাছ থেকে জানা গেল, মহারাষ্ট্রের থানু এলাকায় একটি আদিবাসী স্কুল রয়েছে, যেখানে শিক্ষা দেওয়া হয় পুরোপুরি কম্পিউটারে। স্কুলে কোনও প্রথাগত ক্লাসরুম নেই। মাত্র তিনটি ঘর। সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রী এক জায়গায় বসে কম্পিউটারেই লেখাপড়া শিখছে। ভিডিয়ো এবং হেডফোনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের গল্প শোনানো হয়। কম্পিউটারে লগ ইন করে অঙ্ক, ইংরেজি, ভাষা সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল সবই জানতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। পরীক্ষাও নেওয়া হয় কম্পিউটারে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালিত এই স্কুলে প্রায় ১২০ জন আদিবাসী পড়ুয়া। এ বছরই প্রথম দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা দেবে ওই স্কুলের পড়ুয়ারা।


রাজস্থানের উদয়পুরে স্বরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও সিলেবাস নেই। এখানে ভর্তি হতে কোনও মার্কশিট দেখাতে হয় না। ছাত্রছাত্রীরা দু'বছরের জন্য এখানে ভর্তি হয়। ফি না-দিলেও চলে। ১৭ বছরের ছেলেমেয়েরা এখানে ভর্তি হতে পারে। দু'বছরের প্রোগ্রাম। ছাত্রদের বলা হয় খোঁজি। পাশ করে বেররোনার পর তাদের বলা হয় আঘাজিজ। পুনেতে একটি স্কুল আছে, যার নাম স্বয়াম্বোধ গুরুকূল। ৩০-৪০ জন পড়ুয়ার সঙ্কুলান সেখানে। যারা সাধারণ স্কুলে ফেল করে, মূলত তাদেরই নিয়ে আসা হয় এখানে। কী কারণে এক জন পড়ুয়া ফেল করেছে, সেটা প্রথমে খুঁজে বের করা হয়। সেই মতো তাদেরকে সঠিক ভাবে অভিনব পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়।


মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকায় একটি স্কুল তৈরি হয়েছে, যেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বিশেষ ভাবে সক্ষমরাও একই ক্লাসে পড়াশোনা করছে। এর ফলে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের মানসিক উদ্যম বাড়ছে। স্কুলের নাম 'সমাবেশি পাঠশালা'। সৌরভ দত্ত বলছেন, 'এখনও পর্যন্ত এই রকম প্রায় ৩০টি স্কুলের সন্ধান পেয়েছি, যারা শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বিকল্প উপায় বেছে নিয়েছে। তার মধ্যে ১০টিকে ক্যামেরাবন্দি করতে পেরেছি।'

Source: Ei Samay


Wednesday, December 25, 2019

অন্য এক বড় দিন পালিত হল বারাসতে

 কুকুর সম্পর্কে 'দুটো একটা কথা' জানতেন ছকভাঙা বাংলা কথাকার সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। অবলা জীবগুলো সম্পর্কে অনেকটাই জানেন বারাসতের একদল পশুপ্রেমী! তাঁদেরই আয়োজনে পনির বিরিয়ানি তারিয়ে খেল পথ-কুকুরের দল।


মঙ্গলবার রাত থেকে চলছিল রান্না। 'পশুপতি অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সদস্য অর্পিতা চৌধুরী, নীলাঞ্জনা রায়, লোপামুদ্রা বসু দু'চোখের পাতা এক করতে পারেননি। ৬০০ কেজি চালে তেল-মশলা সহযোগে মিশল ২০০ কেজি পনির। সকালেই সারা সব তোড়জোড়। বড়দিনের বেলায় পাড়ায় পাড়ায় সুবাস ছড়িয়ে শহর পরিক্রমা শুরু। ছ'টি ভ্যানে পনির বিরিয়ানি চাপিয়ে আধ ডজন দলে ভাগ হয়েছিলেন সংগঠনের সদস্যরা। বারাসতের হরিতলা, শেঠপুকুর, হৃদয়পুর, বনমালীপুর, নবপল্লি এলাকা ঘুরে ঘুরে সারমেয়দের মাঝে কাগজের থালায় সাজিয়ে দিলেন পনির বিরিয়ানি। রাস্তার গোরু, ছাগল ও পাখিদের জন্য ছিল কেক ও কমলালেবু। বাদ যায়নি পথশিশুরাও। তাদের বাড়তি পাওনা ছিল শীতবস্ত্র।


চাঁদিফাটা গরমে রাস্তার ধারে জলের পাত্র রাখা থেকে শুরু করে হিংসার শিকার কোনও পথ-কুকুরের হয়ে সরব হয় এই পশুপ্রেমী সংগঠন। নীলাঞ্জনা রায়ের বক্তব্য, 'রাস্তার কুকুররা সব সময় উপেক্ষিত। আমরা সারা বছর এদের জন্য কাজ করি। ওরা আছে বলেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই আমরা কয়েক জন রাস্তার কুকুরদের পনির বিরিয়ানি খাইয়ে বড়দিন পালন করলাম।' অর্পিতা চৌধুরীর কথায়, 'পথশিশুরাও উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তাদেরও এ দিন আমরা শীতপোশাকের সঙ্গে কমলালেবু, কলা ও কেক উপহার দিয়েছি।'


সকালে বারাসতের প্ল্যাটফর্মবাসী শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করেন জেলা পরিষদ কর্মী আশিস হালদার। বছর ৩৬-এর আশিসের বাড়ি ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের বামুনগাছিতে। তাঁর ব্যতিক্রমী জন্মদিন পালনের সাক্ষী ছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী ও পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। অসহায় শিশুদের হাতে মিষ্টি, ফল ও শীতবস্ত্র তুলে দেন আশিস। বলেন, 'প্রতি বছর পরিবারের লোকেরাই জন্মদিন পালন করেন। তাতেই সামিল হই। অফিসে আসা-যাওয়ার পথে দেখেছি, প্ল্যাটফর্মের শিশুরা কী কষ্টের মধ্যে থাকে। তাই জন্মদিনের আনন্দটা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। এর জন্য একটা আলাদা অনুভূতি হয়েছে।' জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, 'এমন একটা অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। প্রত্যেকে অন্যের জন্য কিছু করলে সমাজ সুস্থ থাকবে।' বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, 'ভগবান যিশু সমন্বয়ের কথা বলে গিয়েছেন। আশিস জন্মদিনে সেটাই করে দেখাল।'

Source: Ei Samay

Monday, December 9, 2019

বারাসতের হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় পরিবেশ সচেতনতার বার্তা

 জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতাতেও নাগরিক সচেতনতার বার্তা। তাঁদের হাতের কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গি প্রতিরোধ থেকে জল অপচয় বন্ধ করা বা বায়ুদূষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন হস্তশিল্পীরা। নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি এনআরসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকেও তাঁরা হাতের কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ ছাড়াও, ছিল নকশিকাঁথা, কাঁথা-স্টিচ-সহ কাগজের কোলাজ এবং কাঠের তৈরি সামগ্রী। বৃহস্পতিবার বারাসতের রবীন্দ্র ভবনে হয়ে গেল জেলার হস্তশিল্প প্রতিযোগিতা।


বায়ুতে দূষণের পরিমাণ মাত্রা ছাড়িয়েছে দিল্লির মতো রাজধানী শহরে। কলকাতাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি জল সঙ্কটও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণ কিংবা জল সঙ্কটের সমস্যা নিয়ে এখনও সাধারণ মানুষ সে ভাবে সচেতন নয়। তাই এই সমস্যাগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতার পাঠ দিতে এ বার দেখা গেল হস্তশিল্পীরাও আসরে নেমেছেন।


কাঁচরাপড়ায় থাকেন হস্তশিল্পী বিশ্বজিৎ রায়। তিনি তাঁর অসাধারণ শিল্প-নৈপুণ্যে কাঠের উপর ফুটিয়ে তুলেছেন নাগরিক সচেতন সমাজ। তাতে দেখানো হয়েছে গাছ ধ্বংসের কারণে গোটা বিশ্ব রুক্ষ হয়ে উঠছে। আবার, জল অপচয় সম্পর্কে সচেতন করতেও বিশ্বজিৎ হস্তশিল্পকেই মাধ্যম করেছেন। এই হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় গ্রাম বাংলার নকশি-কাঁথা শিল্প তুলে ধরেছেন শাসনের গোলাবাড়ির শিল্পী সাহিদা বেগম। দত্তপুকুরের জহর মল্লিক কাঁথা-স্টিচের উপরে নানা শিল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। দমদমের পিনাকী দাশগুপ্তের কাঠ দিয়ে তৈরি সিঁদুরের কৌটোও নজর কেড়েছে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের ম্যানেজার সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'হস্তশিল্পে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ প্রতি বছর নিয়ে থাকি আমরা।'


এ বছরের জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৭৫ জন হস্তশিল্পী। প্রতিযোগিতায় মোট ১২ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

Source: Ei Samay

Friday, November 8, 2019

বিয়ের আগে দুর্ঘটনায় পা হারানো তরুণীকে নতুন জীবনের সন্ধান দিল বারাসত হাসপাতাল

 হবু স্বামীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে আমডাঙার বহিচগাছিয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রুমা খাতুন। গাড়িতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন হবু শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন হবু স্বামী রমজান আলি বিশ্বাস। কিন্তু বিয়ের ঠিক এক মাস আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের রাহানার কাছে তাঁদের গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গুরুতর জখম রুমার প্রাণরক্ষার জন্য তাঁর বাঁ পা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন চিকিৎসকেরা।


দুই পরিবারের সম্মতিতেই রুমা আর রমজানের বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল ১২ অক্টোবর। কিন্তু ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা অষ্টাদশী রুমার জীবন ওলটপালট করে দেয়। পরিবারের সম্মতিতে বাঁ পা কেটে বাদ দিয়েছিলেন বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এর পরে টানা দু'মাস সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন রুমা। পা হারানোর পরে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা গ্রাস করেছিল তাঁকে। ক্রমশ মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে পড়ছিলেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বারাসতের সরকারি হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল এবং চিকিৎসকদের উদ্যোগে শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি ১৮ বছরের তরুণীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড।


টানা দু'মাসের চেষ্টায় সাফল্য মিলেছে অনেকটাই। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া স্টিলের ক্রাচে ভর করে রুমা চলাফেরা করতে শিখেছেন। সুব্রতের উদ্যোগে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রুমার জন্য একটি নকল পায়ের বন্দোবস্তও করা হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তাঁর জন্য 'বিশেষ ভাবে সক্ষম শংসাপত্রে'র ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রুমা সেই শংসাপত্র নিয়ে তাঁর মা তাজমিরা বিবি এবং হবু পিসি শাশুড়ি সাকিলা বিবির সঙ্গে বহিচগাছিয়ার বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।


বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই তৎপরতায় আপ্লুত রুমা এবং তাঁর পরিবার। নতুন ভাবে জীবন শুরু করার উদ্দেশ্যে 'ডাক্তারকাকুদের' প্রণাম করে, চোখে জল নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বলেন, 'নৃত্যশিল্পী সুধাচন্দ্রনের নকল পা নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জেনেছিলাম। আমিও নকল পা পাওয়ার পরে নতুন লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।'


রুমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এ দিন হাসপাতালে এসেছিলেন হবু স্বামী রমজানও। আমডাঙা থানার আনোখা এলাকায় বাসিন্দা রমজান বলেন, 'দুর্ঘটনার দিন আমার বাঁ দিকে সামনের সিটেই ছিল রুমা। প্রথমে ওকে বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় ছিল। তার পরে দু'মাসও খুব চিন্তায় ছিলাম। রুমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারাসত হাসপাতালের সুপার এবং ডাক্তারবাবুদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি রুমাকে ভালোবাসি। ও একটু সুস্থ হোক। তারপর দুই পরিবারের আলোচনায় নতুন করে নিকাহের দিন স্থির হবে।'


সুপার সুব্রত এদিন বলেন, 'ওর বাঁ পা বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। রেফারও করিনি। এখন শারীরিক এবং মানসিক ভাবে রুমা পুরোপুরি সুস্থ। আগামী মাসেই এনআরএস হাসপাতাল থেকে রুমার জন্য নতুন নকল পা চলে আসবে। আমরা চাই বিয়ের পরে রুমা পড়াশুনা চালিয়ে যাক। জীবনের মূলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত হোক।'


Source: Ei Samay

Sunday, October 27, 2019

কালীপুজো দেখতে শনিবারেই জনস্রোত বারাসতে

 বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। ইতিমধ্যেই উদ্বোধন সেরে ফেলেছে বড় পুজোগুলি। দমদম-রাজারহাট থেকে শুরু করে মধ্যমগ্রাম-বারাসতে শনিবার বিকেল থেকেই ঢল নেমেছে দর্শনার্থীদের। রাজ্যপাল থেকে মুম্বইয়ের তারকারা প্রত্যেকেই শনিবার জানিয়ে গিয়েছেন, বারাসতের কালীপুজোর কথা তাঁরা শুনেছিলেন, কিন্তু তার ব্যাপকতা যে এমন, তা ভাবতে পারেননি।


এ বারের পুজোয় অবশ্য ‘ভিআইপি গেট’ নেই। তাই বিনা বাধায় মণ্ডপে ঢুকতে পেরে সাধারণ দর্শনার্থীরাও খুশি। আলোয় মোড়া উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরকে যেন চেনার উপায় নেই। বারাসত স্টেশনে নামলেই গোটা পায়োনিয়ার এলাকা বদলে গিয়েছে ব্যাঙ্ককে। বিশাল পুকুরপাড়ে মন্দিরের পাশাপাশি মাঠে বসে গিয়েছে মেলা। সেখানে কচিকাঁচাদের ভিড়। স্টেশন সংলগ্ন সংহতি, ইউনাইটেড, রাইজিং স্টারস, ওয়েলফেয়ার, ছাত্রদলেও শুরু হয়েছে ঠাকুর দেখার ভিড়।


৩৪ এবং ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি টাকি রোড, ব্যারাকপুর রোডের মতো রাস্তাতেও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। ওই সব রাস্তার দু’পাশ জুড়ে আলোর গেট ও বিশাল মণ্ডপে সেজে উঠেছে রেজিমেন্ট, বিদ্রোহী, শতদল সঙ্ঘ বা সন্ধানীর মতো বড় পুজোগুলি। ডোকরা ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সেজেছে কেএনসি রেজিমেন্ট। নবপল্লির তিন দিকে তিন মন্দির। মায়ানমারের স্বর্ণমন্দির, গুজরাতের সোমনাথ মন্দির এবং ভিয়েতনামের একটি মন্দির।


বারাসত জুড়ে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাস্তায় রয়েছে প্রচুর পুলিশ। প্রশাসন ও স্থানীয় পুরসভার তরফে তৈরি হয়েছে সহায়তা কেন্দ্র। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘এত বড় উৎসবকে সফল করতে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনও অসুবিধা হলেই সহায়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Source: Ananda Bazar

Sunday, October 20, 2019

শক্তি আরাধনায় মেতে উঠতে প্রস্তুত বারাসত

সামনেই কালীপুজো। দুর্গাপুজোর জাঁকজমক মানে যদি কলকাতা হয়, তবে কালীপুজো অবশ্যই বারাসতের। শক্তির আরাধনায় বারাসতের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া ভার। কালীপুজো মানেই চোখধাঁধানো আলোর রোশনাই, আর আকর্ষনীয় সব মণ্ডপসজ্জা। পুজোর ক'টা দিন লাখো মানুষের ভিড় হয় বারাসতে। রাতভর চলে এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা। বারাসতের কালীপুজোর পরিচিতি জেলার গণ্ডি টপকে গোটা রাজ্যে ছড়িয়েছে।


মহাদেব ঘোষের হাত ধরে বারাসতের কালীপুজোর এই জাঁকজমকের সূচনা। মহাদেবের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরসূরীরা সেই ধারা বহন করে চলেছেন। সেইসঙ্গে একে একে নতুন নতুন পুজো শুরু হয়েছে। ধারে-ভারে যেগুলি রীতিমতো একে অপরকে টেক্কা দেয়। যেমন এই বছর মণ্ডপসজ্জায় কোথাও দেখা যাবে হারিয়ে যাওয়া বাংলার সংস্কৃতি আবার কেউ বানাচ্ছেন ৯৯ কেজির রুপো দিয়ে তৈরি কালীমূর্তি।


বারাসতের বড় বাজেটের পুজো মানেই কেএনসি রেজিমেন্ট। আলো থেকে মণ্ডপসজ্জায় অন্যদের থেকে বরাবরই আলাদা কিছু করার চেষ্টা করেন উদ্যোক্তারা। কেএনসি রেজিমেন্টের পুজো এ বার ৬০ বছরে পড়ল। এই বছর উদ্যোক্তাদের ভাবনায় কালচারাল হেরিটেজ অফ বাংলা। আগে বাংলার মানুষ পালকি, গোরুর গাড়ি, হাওদায় চড়ে যাতায়াত করতেন। হাওদা মানে হাতির পিঠে সওয়ার হওয়া। হাতি এবং পালকি সাধারণত ব্যবহার করতেন রাজা এবং জমিদারেরা। হারিয়ে যাওয়া বাংলার এই সংস্কৃতিকেই কালীপুজোর মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরেছেন উদ্যোক্তারা। ডোকরা এবং জুট দিয়ে অসাধারণ শিল্প নৈপুন্যে কালচারাল হেরিটেজ অফ বাংলা তুলে ধরেছেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলা।


বারাসতের পাইয়োনিয়ার অ্যাথেলেটিক ক্লাব বরাবরের মতোই এ বারেও চমক দিতে চলেছে তাদের মণ্ডপসজ্জায়। ৪৭ বছরে তাদের ভাবনা থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের একটি বুদ্ধ মন্দির। এই মন্দির থাইল্যান্ডের আদি থনবুড়ি রাজ্যের চাও ফারায়া নদীর তীরে ১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিখ্যাত এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন থাই-চিনা ব্যবসায়ী চাও পারায়া নিকোনবোদিন। পরবর্তীতে তিনি সিয়াম রাজবংশীয় রাজা তৃতীয় রামকে দান করেন। বৃহত আকারের সোনার বুদ্ধের মুর্তি এই মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ। পাইয়োনিয়ারের মণ্ডপের সামনের বড় জলাশয় মন্দিরের আকর্ষণ কয়েকগুন বাড়িয়েছে।


বারাসতের মৎস্য আড়তদার সমিতির কালীপুজো এ বছর ২৮তম বর্ষে পা দিল। এখানে ৯৯ কেজি রুপোর কালীমূর্তি তৈরি হচ্ছে। বারাসতে ভিন্নধারার মণ্ডপ থেকে আলোকসজ্জায় নানা বাহার দেখা গেলেও রুপোর কালীপ্রতিমা এর আগে দেখেননি বারাসতের মানুষ। সেদিক থেকে এই বছর বড় চমক দিচ্ছে মৎস্য আড়তদার সমিতির পুজো। পুজোর ক'টা দিন ৬৫ লাখের রুপোর কালীপ্রতিমা পাহারার জন্য থাকছে আঁটসাট নিরাপত্তার ব্যবস্থা। মণ্ডপসজ্জায় উদ্যোক্তাদের ভাবনা সঙ্কল্প। শিশুশ্রমিক থেকে বাল্যবিবাহের মতো মানবসমাজের বিভিন্ন খারাপ বিষয়গুলি রুখতে মানুষকে সঙ্কল্প নেওয়ার বার্তাই দিতে চাইছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।


বারাসতের সন্ধানীর কালীপুজো এ বার ৫৯ বছরে পড়ল। মণ্ডপসজ্জায় উদ্যোক্তাদের ভাবনা, এখনও আধারে। শিশুশ্রম আইনের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ। শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে লাগাতার প্রচার চলেয় কিন্তু আমাদের চারপাশে হাটেবাজারে, চায়ের দোকানে, রাস্তার ধারের হোটেলে, রেস্তোরাঁয় শিশু শ্রমিকদের হামেশাই দেখা যায়। শিশুশ্রমিকের একটা বড় অংশ কাজ করে ইটভাটায়। তাই ইট বয়ে বা চায়ের দোকানে,রেস্তোরাঁ, হোটেলে খাবারের থালা, গ্লাস মেজেই এদের শৈশব হারিয়ে যায়। পুজোর আনন্দ থেকে শিশুশ্রমিকরা থাকে শত যোজন দূরে। ছ'হাজার স্কোয়ার ফিট জুড়ে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে মানুষকে বার্তা দিতেই মণ্ডপ সাজিয়েছে সন্ধানী। চায়ের ভাড়, চামচ, টি-ব্যাগ, স্টোভের ফিতে, চা ঢালার ছাকনি দিয়েই তৈরি হচ্ছে সন্ধানীর মণ্ডপ। চন্দননগরের আলোকসজ্জায় ফুটিয়ে তোলা হবে শিশুশ্রমের বেদনাদায়ক চিত্র।


এ ছাড়াও বারাসতে বড় বাজেটের পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম বিদ্রোহী স্পোর্টিং ক্লাব। ৫৩ বছরে উদ্যোক্তাদের ভাবনা হিন্দু ধর্ম। মণ্ডপসজ্জায় এক দিকে যেমন থাকছে বৃন্দাবন ধাম। অন্যদিকে থাকছে জগন্নাথের মূর্তি। মূল মণ্ডপটি গড়ে উঠছে শিবমন্দিরের আদলে।

Source: Ei Samay

Tuesday, October 15, 2019

Medical college to be a reality in Barasat by year-end

 Work to upgrade Barasat district hospital to a medical college is likely to be completed by the end of this year. Apart from Barasat, three other medical colleges are coming up at Jhargram, Tomluk (East Midnapore) and Arambag (Hooghly) to strengthen the health infrastructure in the state. 


The construction to set up new medical colleges started last year following the announcement by Chief Minister Mamata Banerjee. She laid stress on infrastructure development in the districts to ensure that people are not forced to go to cities to address their medical needs. 


Banerjee adopted a two-pronged approach for development of health sector. She announced that the new medical colleges in the state would not only to provide better health services but would also have sufficient doctors. 


Sources in the state health department said that construction was going at a full swing at Barasat district hospital and other three medical colleges. Patients from various parts of North 24-Parganas and adjoining district of Nadia visit the Barasat hospital on a regular basis. People will be able to avail better health care facilities after the medical college becomes operational. 


The Bengal government had urged the Centre to increase the number of medical seats in the state. Setting up a number of medical colleges was the first step taken by the state government in this direction. There has been a dearth of doctors in various state-run hospitals and the problem can only be solved if the state can produce more doctors every year. The state government cannot increase the number of MBBS seats in a medical college on its own unless they are approved by the Medical Council of India which is the sanctioning authority.

Monday, September 30, 2019

নাটকীয় জায়গায় দাঁড়িয়ে লিগের খেতাব ভাগ্য

 শেষ বাধা পেরিয়েও আপাতত অনন্য ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হচ্ছে না পিয়ারলেসের। কলকাতা লিগের ভাগ্য ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঝুলে থাকায়।

রবিবার বারাসতে পিয়ারলেস ২-০ হারাল জর্জ টেলিগ্রাফকে। ইস্টবেঙ্গল মাঠে বানের জল ঢুকে যাওয়ায় বাতিল হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল-কাস্টমস ম্যাচ। সেই ম্যাচ হবে কল্যাণীতে ২ অক্টোবর। লিগ জিততে হলে ৭ গোল দিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। যা খুব কঠিন। পিয়ারলেস তাই এ দিন মাঠে জয়োৎসব করে ফেলল।

পিয়ারলেসের পয়েন্ট ২৩, গোলের গড় ১৩। ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট ২০, গোলের গড় ৭। পিকে-নিখিল নন্দীর ইস্টার্ন রেল ১৯৫৮ সালে লিগ জেতার পর, গত ৬১ বছরে কোনও ছোট ক্লাব লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়নি।

এ যেন শেষ হয়েও হইল না শেষ!

জর্জ টেলিগ্রাফকে শেষ ম্যাচে আনসুমানা ক্রোমার জোড়া গোলে ২-০ হারিয়েও লিগ জেতা সম্পূর্ণ হল না পিয়ারলেসের। রবিবার বিকেলে বারাসত স্টেডিয়ামে জর্জকে হারিয়ে ড্রাম বাজিয়ে যখন উৎসবে মেতেছেন ক্রোমা-অ্যান্টনি উলফ-দীপেন্দু দোয়ারিরা, আবেগহীন ভাবে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন তাঁদের কোচ জহর দাস। 


গোটা স্টেডিয়াম ততক্ষণে জেনে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঠে জোয়ারের জল ঢুকে ভেস্তে গিয়েছে এ দিনের ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস ম্যাচ। ফলে ১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে পিয়ারলেস শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করলেও এখনও সরকারি ভাবে লিগ জয় হয়নি ক্রোমাদের। কারণ ইস্টবেঙ্গল তাদের শেষ ম্যাচে সাত গোলের ব্যবধানে জিতলে কলকাতা লিগ ঢুকবে লাল-হলুদ শিবিরে। কারণ, এ দিনের ম্যাচের পরে পিয়ারলেসের গোল পার্থক্য ১৩। ইস্টবেঙ্গলের ৭। ইস্টবেঙ্গল সাত গোলের ব্যবধানে জিততে না পারলে, দীর্ঘ ৬১ বছর পরে তিন প্রধানের বাইরে কলকাতা লিগ জিতে ইতিহাস তৈরি করবে পিয়ারলেস। ১৯৫৮ সালে ইস্টার্ন রেলের পরে কলকাতা ময়দানে যে কৃতিত্ব নেই কোনও দলের। 


লিগ শীর্ষে থাকা পিয়ারলেস কোচ তাই বলেন, ‘‘উৎসব তোলা থাকছে। কাগজে-কলমে তো এখনও লিগ চ্যাম্পিয়ন হইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘ফুটবল মাঠে তো অনেক কিছুই হয়। ইস্টবেঙ্গল সাত গোলের ব্যবধানে জিততেও তো পারে!’’ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল কি তা হলে সাত গোল করতে পারে না? এ বার আত্মবিশ্বাসী জহর বলেন, ‘‘এ বারের লিগের কোনও দলকেই ইস্টবেঙ্গল সাত গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। যদি তাই হত, তা হলে গোলপার্থক্যে আমাদের মতো তথাকথিত ছোট দলের এত পিছনে থাকত না। আর শেষ ম্যাচে ‘জাদু’ দেখিয়ে সাত গোলের ব্যবধানে জিতে লিগ পেলে সেটা শতবর্ষে ওই ক্লাবের কলঙ্ক হয়ে থাকবে।’’


ইস্টবেঙ্গল মাঠ যদি এ দিন জোয়ারের জলে ভেসে গিয়ে থাকে, তা হলে এ বারের কলকাতা লিগ ভেসে গিয়েছে পিয়ারলেসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের তরঙ্গে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল দুই ক্লাবকেই তাদের মাঠে গিয়ে হারিয়ে আসা। অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, জিতেন মুর্মু, মনতোষ চাকলাদারের মতো এক ঝাঁক বাঙালি ছেলের চোখ ধাঁধানো ফুটবল প্রদর্শন। আর আনসুমানা ক্রোমার ১৩ গোল করে গোলদাতাদের শীর্ষে থাকা। শুধু পিয়ারলেসই নয়, তথাকথিত ছোট দলের পারফরম্যান্সের জোয়ারেই যে এ বার ভেসে গিয়েছে বড় দলগুলো। 


খেলা শেষে বড় ড্রাম বাজাতে শুরু করে দিয়েছিলেন পিয়ারলেসের ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার অ্যান্টনি। আর তার তালে নাচছিল গোটা দল। এক সময়ে কেউ একজন এসে ক্রোমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন নীল কালিতে বাংলায় লেখা একটি সাদা কাগজ। যেখানে লেখা, ‘‘জর্জ টেলিগ্রাফকে ২-০ হারিয়ে কলকাতা ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন পিয়ারলেস।’’ শেষ মুহূর্তে কোচের গলায় গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে কাঁধে নিয়েও শুরু হল নাচ।


দলের ম্যানেজার অশোক দত্ত এ দিন সকাল থেকেই ছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেখান থেকেই পুজো দেওয়ার ফাঁকে তিনি ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এ বারের পিয়ারলেসের দল গঠনের কারিগর ও এ দিনের ম্যানেজার সোনাই চন্দকে। তিনি আবার সকালবেলা কালীঘাটে পুজো দিয়ে এসেছিলেন বারাসতে। অশোকবাবু পুরীতেই বেলা এগারোটা নাগাদ খবর পান ইস্টবেঙ্গল মাঠ জলে ভাসছে। ফোনে আইএফএ কর্তাদের বলেন, ইস্টবেঙ্গল এ দিন না খেললে তাঁরাও খেলবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।


বারাসত স্টেডিয়ামে এ দিন হাজির ছিলেন দুই প্রধানের সমর্থকেরাই। ক্রোমারা বল ধরলে চিৎকার করছিলেন মাঠে হাজির মোহনবাগান সমর্থকেরা। আর জর্জ টেলিগ্রাফ বল ধরলে খেলা দেখতে আসা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। এর মধ্যেই ৩৬ মিনিটে অনিল কিস্কুর বাড়ানো বল ধরে ডান পায়ের জোরালো শটে ১-০ করেন ক্রোমা। দ্বিতীয়ার্ধে ফের ডান দিক থেকে সেই অনিলের সেন্টার থেকে পাওয়া বলে চকিতে ঘুরে জোরালো ভলিতে দ্বিতীয় গোল পিয়ারলেস অধিনায়কের। যা দেখে প্রেস বক্সে বসেই আনন্দে  কেঁদে ফেলেন ক্রোমা-পত্নী সাদিয়া।


শেষ পর্যন্ত লিগ কার সে ঘোষণা না হলেও, খেলা শেষে পিয়ারলেস ড্রেসিংরুমে এল এমডি পি পি রায়ের বার্তা। ক্রোমাদের বোনাস ঘোষণা করার সঙ্গেই তিনি বলছেন, ‘‘আই লিগ খেলার জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। স্বপ্ন সফল হবে, যে দিন আমরা প্রথম একাদশের এগারোটি বাঙালি ছেলেকে নিয়ে কোনও খেতাব জিতব।’’

আটান্নর ইতিহাস তাড়া করার পথে এই স্বপ্নও দেখছে পিয়ারলেস।    

পিয়ারলেস: অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, মনতোষ চাকলাদার, ভার্নি কালন কিয়াতাম্বা, ফুলচাঁদ হেমব্রম, দীপেন্দু দুয়ারি (লক্ষ্মীকান্ত মাণ্ডি), অনিল কিস্কু, এডমন্ড পেপরা, পঙ্কজ মৌলা, জিতেন মুর্মু (নরহরি শ্রেষ্ঠ/ দীপঙ্কর দাস), আনসুমানা ক্রোমা।


জর্জ টেলিগ্রাফ: ভাস্কর রাউথ, নবি হোসেন খান, মুসলিম মোল্লা, চিন্তা চন্দ্রশেখর রাও, মোহন সরকার, ডেনসন দেবদাস, মুহম্মদ মিকদাদ কেপি (রাজীব শ), খোকন মণ্ডল, জাস্টিস মরগ্যান, সানোহ লউসেনি পাটো, জোয়েল সানডে। 


Source: Ananda Bazar

Sunday, September 15, 2019

বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটের আন্ডারপাস

মাসদুয়েক আগে বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটের কাছে বহু প্রতিক্ষিত আন্ডারপাসটির সূচনা করে রেল। কিন্তু গোড়া থেকেই এই আন্ডারপাস নিয়ে হাজারো সমস্যার মুখে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টি নামতেই আন্ডারপাসের দেওয়াল, সিলিং চুঁইয়ে জল পড়তে শুরু করে। ফলে জলে-কাদায় আন্ডারপাসটি কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। পশ্চিম দিকের অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি না করে আন্ডারপাস খুলে দেওয়া হয়েছিল। মেঠো পথে জল-কাদা মাড়িয়ে তাই সকলে আন্ডারপাসে ঢুকছিলেনয়। দ্রুত অবশ্য অ্যাপ্রোচ রোডের কাছ শেষ করা হয়। কিন্তু আন্ডারপাস নিয়ে আমজনতার ক্ষোভে তাতে প্রলেপ পড়েনি। যাত্রীদের ক্ষোভের কথা রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কানে যায়। তাই পুজোর আগে শনিবার আন্ডারপাস পরিদর্শনে আসেন পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম প্রভাস দানসেনা। কারিগরি ত্রুটির কথা মেনে নিয়ে ডিআরএম বলেন, 'রেলের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি হবে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।'


শনিবার সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ বারাসত স্টেশনে চলে আসেন প্রভাস দানসেনা। তিনি প্রথমেই ১২ নম্বর রেলগেটের কাছে নবনির্মিত ভূগর্ভস্থ পথ পরিদর্শন করেন। এরপর বারাসত স্টেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আরপিএফ অফিস, জিআরপি অফিস ঘুরে দেখেন। স্টেশনে বিভিন্ন পরিষেবার কাজ খতিয়ে দেখেন ডিআরএম।


বারাসত স্টেশনে একটি ফুট ওভারব্রিজ তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজের অগ্রগতিও তিনি এ দিন সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। যাত্রী পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে বারাসত স্টেশনে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিআরএম।

Source: Ei Samay

Monday, September 2, 2019

বিনি পয়সার শপিং মল বারাসতে

বিনে পয়সার 'শপিং মল' একেবারেই মলের কনসেপ্ট। কিন্তু ঝাঁ চকচকের ব্যাপারটি নেই। আছে আন্তরিকতা। আর বিনে পয়সায় পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত। মজা করে উদ্যোক্তারা বলছেন ফ্রি 'শপিং মল'! কি নেই তাতে। জামা, প্যান্ট, শাড়ি, চুড়িদার, ঘাগরা, জুতো সব। বাদ যায়নি মশারি, বালিশ, খেলনা থেকে ব্যাগও। মাপ মতো তুলে নিলেই হল। পয়সাকড়ির কোনও বালাই নেই। 


বারাসতের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গত ন'মাস ধরে এলাকার দুঃস্থদের জন্য অভিনব এই উদ্যোগ নিয়েছে।


প্রতি মাসের শেষ রবিবার সকাল দশটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত 'শপিং মল' খোলা থাকে। স্থান সংস্থার অফিস ঘর। বারাসতের ১১ নম্বর রেলগেটের কাছে সংস্থার অফিস। ঘরটি মেরেকেটে সাতশো স্কোয়ার ফিটের। তাতেই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর স্বপ্ন যেন সত্যি হয়ে উঠছে। একটা অংশের মেঝেয় আলাদা আলাদা ভাবে রাখা আছে মহিলা, শিশু ও পুরুষদের পোশাক। এখানকার সবকিছুই সেকেন্ড হ্যান্ড।


প্রতি মাসের শেষ রবিবারে ভিড় উপচে পড়ে এখানে। আসেন মূলত অন্যের বাড়িতে কাজ করা, দিনমজুর অথবা রেল ধারের বস্তি থেকে আসা লোকজন। অভাব, অনটনের সংসারে এই শেষ রবিবার তাঁদের কাছে বাড়তি অক্সিজেন। শুধু নিজেদের জন্য নয়, পরিবারের বাকিদের জন্যও পছন্দের জামা-প্যান্ট-শাড়ি নির্দ্বিধায় নিয়ে যাচ্ছেন গোপাল, মানসী কাবেরীরা। বিনে পয়সায় পছন্দ মতো জামাকাপড় নেওয়ার পাশাপাশি উপরি পাওনা নিখরচায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা।


স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা ওদের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টার কোনও কসুর রাখেন না। ফোন, সোশ্যাল মিডিয়ায় চেনা পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সকলে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো জামাকাপড়, খেলনা সংগ্রহ করেন। সংস্থার এক সদস্য রজত বিশ্বাস বলেন, 'অনেকেই বাড়তি পোশাক, খেলনা বা অন্যান্য জিনিস ফেলে দেন। কাউকে দেওয়ার মতো লোক পান না। আমাদের ফোন করলেই আমরা মোবাইল ভ্যান পাঠিয়ে সেসব নিয়ে আসি। এরপর প্রতি মাসের শেষ রবিবার সেগুলি বাছাই করে গরিব মানুষগুলোর জন্য রেখে দিই। ওদের হাসিমুখটাই আমাদের প্রেরণা জোগায়।'


হাবরার দাসপাড়ার বাসিন্দা অনিমা দাস এখানে বেশ কয়েকবার এসেছেন। তিনি বারাসতে পাঁচ বাড়িতে কাজ করেন। অনিমা বললেন, 'স্বামী নেই। ছেলেরা ছোট। অভাবের সংসারে নতুন জামাকাপড় সব সময় কিনে দিতে পারি না। এই দোকান আমাদের কাছে ভগবান।' ভাসিলা থেকে আসা মায়া দাস বললেন, 'পোশাকগুলি পুরনো হলেও ভালো। পড়ার মতো। জানার পর থেকেই কয়েক মাস ধরে এখানে আসি। আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা কে ভাবে আজকাল? এঁরা ভেবেছেন। এটাই আমাদের পাওনা।'


শুধু বারাসত নয়, বসিরহাটের ভাসিলা, মালতিপুর কিংবা মছলন্দপুর, হাবরা থেকেও অনেকে আসেন। 'ক্রেতা'দের ভিড়ে ভিখিরিদেরও দেখা মেলে।

Source: Ei Samay