মেরু অভিযানের উদ্দেশ্য শুধুই যে দুর্গম অঞ্চল জয়ের বিজয় নিশানা ওড়ানো, তা তো নয়। সেখানকার প্রকৃতি, আবহাওয়া বুঝতে অভিযাত্রী বিজ্ঞানীরা রীতিমতো তাঁবু খাঁটিয়ে সেখানে দিন কাটান। বরফ মোড়া জমিতে শরীর সূঁচ ফোটানোর মতো ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে বছরের পর বছর চলে পরীক্ষা। সেসব গবেষণা কতদূর এগোল, তা জানাতে প্রতি বছর একদিন করে রেডিও সিগন্যালের (Radio Signal) মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্প্রচার করেন বৈজ্ঞানিকরা। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। ব্যতিক্রম অন্য একটি ঘটনা। সুদূর দক্ষিণ মেরু থেকে সেই প্রচারিত সেই শব্দতরঙ্গ এসে পৌঁছল বারাসতে। দীর্ঘ চেষ্টার পর এখানকার হ্যাম রেডিও অপারেটর বাবুল গুপ্ত প্রথমবার শুনতে পেলেন অ্যান্টার্কটিকার শব্দ। আর তাতেই উচ্ছ্বসিত তিনি।
বাবুল গুপ্তর এই সাফল্য কিন্তু সহজে আসেনি। তার কারণ বিবিধ। প্রথমত ভৌগলিক দিক থেকে ভারতের অবস্থান এই দক্ষিণ মেরুর (South Pole) এই বৈজ্ঞানিক ক্যাম্প সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিপরীতে। ফলে সেখান থেকে সম্প্রচারিত রেডিও সিগন্যাল শুনতে পাওয়াটা দুর্লভ। এছাড়া বহু বছর ধরে অপেক্ষার পরও রেডিও সিগন্যাল ধরা দেয় না। তাই তো মেরুপ্রদেশ থেকে এই সম্প্রচার শোনার জন্য বছরের পর বছর ধরে মানুষজন অপেক্ষা করে থাকেন। কবে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ধরা দেবে সেই শব্দতরঙ্গ।
সেভাবেই জীবনের অনেকগুলো বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন বাবুল গুপ্ত। কিন্তু আশা ছাড়েননি। তিনি নিজে একজন হ্যাম রেডিও অপারেটর। আর তাতে তাঁর নিজের কৃতিত্বও তো কম নয়। পৃথিবীর সব ক’টি দেশের সঙ্গে স্রেফ রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের বিরল কাজের নজির রয়েছে বারাসতের বাবুল গুপ্তর। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সাম্মানিক সদস্য তাই জানতেন, তাঁর এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান একদিন হবেই, আসবেই সাফল্য।
সাফল্য এলও। গত ৮ তারিখ, দক্ষিণ মেরুর LRA 36 ক্যাম্প, যা আর্জেন্টিনায় এলাকায় অবস্থিত, সেখান থেকে রেডিও সিগন্যাল মারফত শব্দতরঙ্গে এসে পৌঁছল বারাসতে। বাবুল গুপ্ত সেখান থেকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনে, তা রেকর্ড করে রাখেন। তিনি যে শুনতে পেয়েছেন, তার প্রমাণ স্বরূপ রেকর্ডিং ইমেলে পাঠিয়ে দেন LRA 36 ক্যাম্পে। উত্তরও দেন দক্ষিণ মেরুতে অবস্থানকারী বৈজ্ঞানিক দল। তাঁদের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান যে ১২হাজার কিলোমিটার দূর থেকে কেউ শুনতে পেয়েছেন, তা জেনে তাঁরা আপ্লুত। আর এই দুর্লভ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ LRA 36 বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে বাবুল গুপ্তকে দেওয়া হল সার্টিফিকেট।
Source: Sanbad Pratidin