Sunday, August 23, 2020

দীর্ঘ অপেক্ষায় সাফল্য, ১২০০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ মেরুর শব্দতরঙ্গ শুনলেন বারাসতের শ্রোতা

 মেরু অভিযানের উদ্দেশ্য শুধুই যে দুর্গম অঞ্চল জয়ের বিজয় নিশানা ওড়ানো, তা তো নয়। সেখানকার প্রকৃতি, আবহাওয়া বুঝতে অভিযাত্রী বিজ্ঞানীরা রীতিমতো তাঁবু খাঁটিয়ে সেখানে দিন কাটান। বরফ মোড়া জমিতে শরীর সূঁচ ফোটানোর মতো ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে বছরের পর বছর চলে পরীক্ষা। সেসব গবেষণা কতদূর এগোল, তা জানাতে প্রতি বছর একদিন করে রেডিও সিগন্যালের (Radio Signal) মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্প্রচার করেন বৈজ্ঞানিকরা। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। ব্যতিক্রম অন্য একটি ঘটনা। সুদূর দক্ষিণ মেরু থেকে সেই প্রচারিত সেই শব্দতরঙ্গ এসে পৌঁছল বারাসতে। দীর্ঘ চেষ্টার পর এখানকার হ্যাম রেডিও অপারেটর বাবুল গুপ্ত প্রথমবার শুনতে পেলেন অ্যান্টার্কটিকার শব্দ। আর তাতেই উচ্ছ্বসিত তিনি।


বাবুল গুপ্তর এই সাফল্য কিন্তু সহজে আসেনি। তার কারণ বিবিধ। প্রথমত ভৌগলিক দিক থেকে ভারতের অবস্থান এই দক্ষিণ মেরুর (South Pole) এই বৈজ্ঞানিক ক্যাম্প সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিপরীতে। ফলে সেখান থেকে সম্প্রচারিত রেডিও সিগন্যাল শুনতে পাওয়াটা দুর্লভ। এছাড়া বহু বছর ধরে অপেক্ষার পরও রেডিও সিগন্যাল ধরা দেয় না। তাই তো মেরুপ্রদেশ থেকে এই সম্প্রচার শোনার জন্য বছরের পর বছর ধরে মানুষজন অপেক্ষা করে থাকেন। কবে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ধরা দেবে সেই শব্দতরঙ্গ। 


সেভাবেই জীবনের অনেকগুলো বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন বাবুল গুপ্ত। কিন্তু আশা ছাড়েননি। তিনি নিজে একজন হ্যাম রেডিও অপারেটর। আর তাতে তাঁর নিজের কৃতিত্বও তো কম নয়। পৃথিবীর সব ক’টি দেশের সঙ্গে স্রেফ রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনের বিরল কাজের নজির রয়েছে বারাসতের বাবুল গুপ্তর। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সাম্মানিক সদস্য তাই জানতেন, তাঁর এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান একদিন হবেই, আসবেই সাফল্য।


সাফল্য এলও। গত ৮ তারিখ, দক্ষিণ মেরুর LRA 36 ক্যাম্প, যা আর্জেন্টিনায় এলাকায় অবস্থিত, সেখান থেকে রেডিও সিগন্যাল মারফত শব্দতরঙ্গে এসে পৌঁছল বারাসতে। বাবুল গুপ্ত সেখান থেকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনে, তা রেকর্ড করে রাখেন। তিনি যে শুনতে পেয়েছেন, তার প্রমাণ স্বরূপ রেকর্ডিং ইমেলে পাঠিয়ে দেন LRA 36 ক্যাম্পে। উত্তরও দেন দক্ষিণ মেরুতে অবস্থানকারী বৈজ্ঞানিক দল। তাঁদের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান যে ১২হাজার কিলোমিটার দূর থেকে কেউ শুনতে পেয়েছেন, তা জেনে তাঁরা আপ্লুত। আর এই দুর্লভ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ LRA 36 বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে বাবুল গুপ্তকে দেওয়া হল সার্টিফিকেট।

Source: Sanbad Pratidin

Thursday, August 20, 2020

লালারসের পরীক্ষা হবে বারাসত হাসপাতালে

স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদন দেওয়ায় লালারসের নমুনা পরীক্ষা এ বার বারাসত জেলা হাসপাতালেও করা যাবে। তার জন্য সেখানে প্রাথমিক পরিকাঠামোও তৈরি হয়ে গিয়েছে। অগস্ট থেকেই পরীক্ষার কাজ শুরু করা যাবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, এর ফলে কোভিড পরীক্ষার রিপোর্টও দ্রুত মিলবে, পাশাপাশি দৈনিক অনেক বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। কলকাতার পরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। কিন্তু দৈনিক পরীক্ষা এখানে অনেক কম হচ্ছে বলেই অভিযোগ। 


উত্তর ২৪ পরগনায় বর্তমানে লালারস পরীক্ষা হচ্ছে শুধুমাত্র সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “দিন কয়েক আগে অনুমোদন এসেছে। তার পরেই পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে যন্ত্রপাতিও এসে যাবে।” এখানে পরীক্ষা শুরু হলে বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা এবং বনগাঁ মহকুমার লোকজনও লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতে পারবেন। তখন লালারস সংগ্রহের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। রিপোর্ট দ্রুত জানা গেলে স্বাস্থ্য দফতর তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ করতে পারবে বলেই মনে করা হচ্ছে।


(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)


Source: Anandabazar

Wednesday, August 5, 2020

পাত্রী ‘করোনা’, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্বিতীয় বিয়ে সারলেন এই বৃদ্ধ!

 ঘরে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষকে সাক্ষী রেখে দ্বিতীয়বার বিবাহ সারলেন বারাসতের (Barasat) এক রাজনৈতিক কর্মী। বাধা দেওয়া তো দূর, লকডাউনের (Lockdown) নিয়ম মেনে ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু মানুষ শামিলও হন সেই বিয়েতে। কারণ, পাত্রী যে ‘করোনা’। ব্যাপারটা কী?



করোনা (Corona Virus) আতঙ্কে কাঁটা প্রত্যেকে। স্রেফ ভয় থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অমানবিক আচরণ করছেন করোনা রোগী ও করোনায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে। কোথাও বাড়ি ছাড়া করা হচ্ছে আক্রান্তদের। কোথাও একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে রোগীকে দূরে সরিয়ে রেখে তো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, এটাই সকলকে বোঝাতে চেয়েছিলেন বারাসাতের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কালী রুদ্র। চেয়েছিলেন অভিনব কিছু করতে। আর সেই কারণেই ‘করোনা’কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।


নির্দিষ্ট সময়ে বর বেশে বেশ কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে করোনা ভাইরাসের রূপক এক মূর্তিকে মালা পরিয়ে দেন ওই বৃদ্ধ। বেলপাতা ও মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় বিবাহের আচার। তাঁর কথায়, “রোগকে আটকাতে হবে। রোগীকে দূরে সরিয়ে, সমাজ ছাড়া করে কোনওদিনও রোগের মোকাবিলা সম্ভব নয়। এটাই সকলকে বোঝাতে চাই।” কালীবাবুর এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই সারা ফেলে দিয়েছে বারাসতের বনমালীপুরে। অনেকেই বুঝতে শুরু করেছেন। নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।

Source: Sanbadpratidin

সম্প্রীতির বাংলা, বারাসাতে রামের পুজো করলেন মুসলিমরা!

 সব অপেক্ষার অবসান। ধূমধাম করে অযোধ্যায় হয়ে গেল রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে সামনে থেকে উপস্থিত থাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর হাতে দিয়েই হয়ে শিলান্যাস। অনুষ্ঠানের সময় নিজের বক্তৃতায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে রাম মন্দির আন্দোলনের তুলনা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বুধবার তিনি বিশ্বজুড়ে রামের প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টিও তুলে ধরেন। ভারত তথা বিশ্ব, এমনকী মুসলিম প্রধান দেশেও রামায়ণের অস্তিত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। আর সেখানেই যেন সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিল বাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ।


বুধবার অযোধ্যায় যখন ধূমধামের সঙ্গে চলছে ভূমিপুজো, তখন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের নতুনপল্লিতে হিন্দু মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষই একযোগে রামের পুজো করলেন। তাঁদের কথায়, রাম কোনও বিশেষ ধর্মের প্রতিভূ নন। রাজা হিসেবে রামচন্দ্রের প্রধান ধর্ম হল দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। নতুনপল্লির স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব আহমেদ খানের নেতৃত্বে আয়োজিত হয়েছিল ওই পুজো। অবশ্য রাজীব আহমেদ খান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিজেপি সংখ্যালঘু সেলের জেলা সভাপতি। ফলে এর সঙ্গে বিজেপির নাম জুড়ে গেলেও হিন্দু-মুসলিম একযোগে রাম পুজো করছে, বিষয়টির প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষও।


শুধু রাজীব আহমেদ খানই নন, বিজেপি কর্মী মোহম্মদ বাবলু মোল্লা ও রহিম মণ্ডলদের পাশাপাশি বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বীও এই পুজোয় যোগদান করেছিলেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার এ এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন অনেকেই।


এদিন নিজের ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'রাম ঐক্যের প্রতীক। যেভাবে ভগবান রামের জন্যে জয় পেতে সকলে একসঙ্গে এত বছর ধরে চেষ্টা করেছেন, যেভাবে সকলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে গান্ধীজির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই আজ দেশবাসীর প্রচেষ্টায় রামমন্দির তৈরির কাজ শুরু হল।'


অপরদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সরাসরি রাম মন্দির প্রসঙ্গে কিছু না বললেও ট্যুইটে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে লেখেন, 'হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান -একে অপরের ভাই-ভাই! আমার ভারত মহান, মহান আমার হিন্দুস্তান! আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখব।' রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর আবহে সেই সম্প্রীতির ছবিটাই যেন ফুটে উঠল। হয়ত তা একটি জায়গাতেই, কিন্তু সেটারও প্রশংসা অবশ্যই প্রাপ্য।


Source: Ei Samay