Monday, September 30, 2019

নাটকীয় জায়গায় দাঁড়িয়ে লিগের খেতাব ভাগ্য

 শেষ বাধা পেরিয়েও আপাতত অনন্য ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হচ্ছে না পিয়ারলেসের। কলকাতা লিগের ভাগ্য ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঝুলে থাকায়।

রবিবার বারাসতে পিয়ারলেস ২-০ হারাল জর্জ টেলিগ্রাফকে। ইস্টবেঙ্গল মাঠে বানের জল ঢুকে যাওয়ায় বাতিল হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল-কাস্টমস ম্যাচ। সেই ম্যাচ হবে কল্যাণীতে ২ অক্টোবর। লিগ জিততে হলে ৭ গোল দিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। যা খুব কঠিন। পিয়ারলেস তাই এ দিন মাঠে জয়োৎসব করে ফেলল।

পিয়ারলেসের পয়েন্ট ২৩, গোলের গড় ১৩। ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট ২০, গোলের গড় ৭। পিকে-নিখিল নন্দীর ইস্টার্ন রেল ১৯৫৮ সালে লিগ জেতার পর, গত ৬১ বছরে কোনও ছোট ক্লাব লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়নি।

এ যেন শেষ হয়েও হইল না শেষ!

জর্জ টেলিগ্রাফকে শেষ ম্যাচে আনসুমানা ক্রোমার জোড়া গোলে ২-০ হারিয়েও লিগ জেতা সম্পূর্ণ হল না পিয়ারলেসের। রবিবার বিকেলে বারাসত স্টেডিয়ামে জর্জকে হারিয়ে ড্রাম বাজিয়ে যখন উৎসবে মেতেছেন ক্রোমা-অ্যান্টনি উলফ-দীপেন্দু দোয়ারিরা, আবেগহীন ভাবে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন তাঁদের কোচ জহর দাস। 


গোটা স্টেডিয়াম ততক্ষণে জেনে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল মাঠে জোয়ারের জল ঢুকে ভেস্তে গিয়েছে এ দিনের ইস্টবেঙ্গল বনাম কাস্টমস ম্যাচ। ফলে ১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে পিয়ারলেস শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করলেও এখনও সরকারি ভাবে লিগ জয় হয়নি ক্রোমাদের। কারণ ইস্টবেঙ্গল তাদের শেষ ম্যাচে সাত গোলের ব্যবধানে জিতলে কলকাতা লিগ ঢুকবে লাল-হলুদ শিবিরে। কারণ, এ দিনের ম্যাচের পরে পিয়ারলেসের গোল পার্থক্য ১৩। ইস্টবেঙ্গলের ৭। ইস্টবেঙ্গল সাত গোলের ব্যবধানে জিততে না পারলে, দীর্ঘ ৬১ বছর পরে তিন প্রধানের বাইরে কলকাতা লিগ জিতে ইতিহাস তৈরি করবে পিয়ারলেস। ১৯৫৮ সালে ইস্টার্ন রেলের পরে কলকাতা ময়দানে যে কৃতিত্ব নেই কোনও দলের। 


লিগ শীর্ষে থাকা পিয়ারলেস কোচ তাই বলেন, ‘‘উৎসব তোলা থাকছে। কাগজে-কলমে তো এখনও লিগ চ্যাম্পিয়ন হইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘ফুটবল মাঠে তো অনেক কিছুই হয়। ইস্টবেঙ্গল সাত গোলের ব্যবধানে জিততেও তো পারে!’’ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল কি তা হলে সাত গোল করতে পারে না? এ বার আত্মবিশ্বাসী জহর বলেন, ‘‘এ বারের লিগের কোনও দলকেই ইস্টবেঙ্গল সাত গোল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। যদি তাই হত, তা হলে গোলপার্থক্যে আমাদের মতো তথাকথিত ছোট দলের এত পিছনে থাকত না। আর শেষ ম্যাচে ‘জাদু’ দেখিয়ে সাত গোলের ব্যবধানে জিতে লিগ পেলে সেটা শতবর্ষে ওই ক্লাবের কলঙ্ক হয়ে থাকবে।’’


ইস্টবেঙ্গল মাঠ যদি এ দিন জোয়ারের জলে ভেসে গিয়ে থাকে, তা হলে এ বারের কলকাতা লিগ ভেসে গিয়েছে পিয়ারলেসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের তরঙ্গে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল দুই ক্লাবকেই তাদের মাঠে গিয়ে হারিয়ে আসা। অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, জিতেন মুর্মু, মনতোষ চাকলাদারের মতো এক ঝাঁক বাঙালি ছেলের চোখ ধাঁধানো ফুটবল প্রদর্শন। আর আনসুমানা ক্রোমার ১৩ গোল করে গোলদাতাদের শীর্ষে থাকা। শুধু পিয়ারলেসই নয়, তথাকথিত ছোট দলের পারফরম্যান্সের জোয়ারেই যে এ বার ভেসে গিয়েছে বড় দলগুলো। 


খেলা শেষে বড় ড্রাম বাজাতে শুরু করে দিয়েছিলেন পিয়ারলেসের ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার অ্যান্টনি। আর তার তালে নাচছিল গোটা দল। এক সময়ে কেউ একজন এসে ক্রোমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন নীল কালিতে বাংলায় লেখা একটি সাদা কাগজ। যেখানে লেখা, ‘‘জর্জ টেলিগ্রাফকে ২-০ হারিয়ে কলকাতা ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়ন পিয়ারলেস।’’ শেষ মুহূর্তে কোচের গলায় গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে কাঁধে নিয়েও শুরু হল নাচ।


দলের ম্যানেজার অশোক দত্ত এ দিন সকাল থেকেই ছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেখান থেকেই পুজো দেওয়ার ফাঁকে তিনি ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এ বারের পিয়ারলেসের দল গঠনের কারিগর ও এ দিনের ম্যানেজার সোনাই চন্দকে। তিনি আবার সকালবেলা কালীঘাটে পুজো দিয়ে এসেছিলেন বারাসতে। অশোকবাবু পুরীতেই বেলা এগারোটা নাগাদ খবর পান ইস্টবেঙ্গল মাঠ জলে ভাসছে। ফোনে আইএফএ কর্তাদের বলেন, ইস্টবেঙ্গল এ দিন না খেললে তাঁরাও খেলবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি।


বারাসত স্টেডিয়ামে এ দিন হাজির ছিলেন দুই প্রধানের সমর্থকেরাই। ক্রোমারা বল ধরলে চিৎকার করছিলেন মাঠে হাজির মোহনবাগান সমর্থকেরা। আর জর্জ টেলিগ্রাফ বল ধরলে খেলা দেখতে আসা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। এর মধ্যেই ৩৬ মিনিটে অনিল কিস্কুর বাড়ানো বল ধরে ডান পায়ের জোরালো শটে ১-০ করেন ক্রোমা। দ্বিতীয়ার্ধে ফের ডান দিক থেকে সেই অনিলের সেন্টার থেকে পাওয়া বলে চকিতে ঘুরে জোরালো ভলিতে দ্বিতীয় গোল পিয়ারলেস অধিনায়কের। যা দেখে প্রেস বক্সে বসেই আনন্দে  কেঁদে ফেলেন ক্রোমা-পত্নী সাদিয়া।


শেষ পর্যন্ত লিগ কার সে ঘোষণা না হলেও, খেলা শেষে পিয়ারলেস ড্রেসিংরুমে এল এমডি পি পি রায়ের বার্তা। ক্রোমাদের বোনাস ঘোষণা করার সঙ্গেই তিনি বলছেন, ‘‘আই লিগ খেলার জন্য চিন্তাভাবনা চলছে। স্বপ্ন সফল হবে, যে দিন আমরা প্রথম একাদশের এগারোটি বাঙালি ছেলেকে নিয়ে কোনও খেতাব জিতব।’’

আটান্নর ইতিহাস তাড়া করার পথে এই স্বপ্নও দেখছে পিয়ারলেস।    

পিয়ারলেস: অরূপ দেবনাথ, অভিনব বাগ, মনতোষ চাকলাদার, ভার্নি কালন কিয়াতাম্বা, ফুলচাঁদ হেমব্রম, দীপেন্দু দুয়ারি (লক্ষ্মীকান্ত মাণ্ডি), অনিল কিস্কু, এডমন্ড পেপরা, পঙ্কজ মৌলা, জিতেন মুর্মু (নরহরি শ্রেষ্ঠ/ দীপঙ্কর দাস), আনসুমানা ক্রোমা।


জর্জ টেলিগ্রাফ: ভাস্কর রাউথ, নবি হোসেন খান, মুসলিম মোল্লা, চিন্তা চন্দ্রশেখর রাও, মোহন সরকার, ডেনসন দেবদাস, মুহম্মদ মিকদাদ কেপি (রাজীব শ), খোকন মণ্ডল, জাস্টিস মরগ্যান, সানোহ লউসেনি পাটো, জোয়েল সানডে। 


Source: Ananda Bazar

Sunday, September 15, 2019

বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটের আন্ডারপাস

মাসদুয়েক আগে বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটের কাছে বহু প্রতিক্ষিত আন্ডারপাসটির সূচনা করে রেল। কিন্তু গোড়া থেকেই এই আন্ডারপাস নিয়ে হাজারো সমস্যার মুখে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টি নামতেই আন্ডারপাসের দেওয়াল, সিলিং চুঁইয়ে জল পড়তে শুরু করে। ফলে জলে-কাদায় আন্ডারপাসটি কার্যত চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে। পশ্চিম দিকের অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি না করে আন্ডারপাস খুলে দেওয়া হয়েছিল। মেঠো পথে জল-কাদা মাড়িয়ে তাই সকলে আন্ডারপাসে ঢুকছিলেনয়। দ্রুত অবশ্য অ্যাপ্রোচ রোডের কাছ শেষ করা হয়। কিন্তু আন্ডারপাস নিয়ে আমজনতার ক্ষোভে তাতে প্রলেপ পড়েনি। যাত্রীদের ক্ষোভের কথা রেলের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কানে যায়। তাই পুজোর আগে শনিবার আন্ডারপাস পরিদর্শনে আসেন পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম প্রভাস দানসেনা। কারিগরি ত্রুটির কথা মেনে নিয়ে ডিআরএম বলেন, 'রেলের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি হবে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।'


শনিবার সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ বারাসত স্টেশনে চলে আসেন প্রভাস দানসেনা। তিনি প্রথমেই ১২ নম্বর রেলগেটের কাছে নবনির্মিত ভূগর্ভস্থ পথ পরিদর্শন করেন। এরপর বারাসত স্টেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আরপিএফ অফিস, জিআরপি অফিস ঘুরে দেখেন। স্টেশনে বিভিন্ন পরিষেবার কাজ খতিয়ে দেখেন ডিআরএম।


বারাসত স্টেশনে একটি ফুট ওভারব্রিজ তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজের অগ্রগতিও তিনি এ দিন সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। যাত্রী পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে বারাসত স্টেশনে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিআরএম।

Source: Ei Samay

Monday, September 2, 2019

বিনি পয়সার শপিং মল বারাসতে

বিনে পয়সার 'শপিং মল' একেবারেই মলের কনসেপ্ট। কিন্তু ঝাঁ চকচকের ব্যাপারটি নেই। আছে আন্তরিকতা। আর বিনে পয়সায় পাইয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত। মজা করে উদ্যোক্তারা বলছেন ফ্রি 'শপিং মল'! কি নেই তাতে। জামা, প্যান্ট, শাড়ি, চুড়িদার, ঘাগরা, জুতো সব। বাদ যায়নি মশারি, বালিশ, খেলনা থেকে ব্যাগও। মাপ মতো তুলে নিলেই হল। পয়সাকড়ির কোনও বালাই নেই। 


বারাসতের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গত ন'মাস ধরে এলাকার দুঃস্থদের জন্য অভিনব এই উদ্যোগ নিয়েছে।


প্রতি মাসের শেষ রবিবার সকাল দশটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত 'শপিং মল' খোলা থাকে। স্থান সংস্থার অফিস ঘর। বারাসতের ১১ নম্বর রেলগেটের কাছে সংস্থার অফিস। ঘরটি মেরেকেটে সাতশো স্কোয়ার ফিটের। তাতেই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর স্বপ্ন যেন সত্যি হয়ে উঠছে। একটা অংশের মেঝেয় আলাদা আলাদা ভাবে রাখা আছে মহিলা, শিশু ও পুরুষদের পোশাক। এখানকার সবকিছুই সেকেন্ড হ্যান্ড।


প্রতি মাসের শেষ রবিবারে ভিড় উপচে পড়ে এখানে। আসেন মূলত অন্যের বাড়িতে কাজ করা, দিনমজুর অথবা রেল ধারের বস্তি থেকে আসা লোকজন। অভাব, অনটনের সংসারে এই শেষ রবিবার তাঁদের কাছে বাড়তি অক্সিজেন। শুধু নিজেদের জন্য নয়, পরিবারের বাকিদের জন্যও পছন্দের জামা-প্যান্ট-শাড়ি নির্দ্বিধায় নিয়ে যাচ্ছেন গোপাল, মানসী কাবেরীরা। বিনে পয়সায় পছন্দ মতো জামাকাপড় নেওয়ার পাশাপাশি উপরি পাওনা নিখরচায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা।


স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা ওদের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টার কোনও কসুর রাখেন না। ফোন, সোশ্যাল মিডিয়ায় চেনা পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সকলে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো জামাকাপড়, খেলনা সংগ্রহ করেন। সংস্থার এক সদস্য রজত বিশ্বাস বলেন, 'অনেকেই বাড়তি পোশাক, খেলনা বা অন্যান্য জিনিস ফেলে দেন। কাউকে দেওয়ার মতো লোক পান না। আমাদের ফোন করলেই আমরা মোবাইল ভ্যান পাঠিয়ে সেসব নিয়ে আসি। এরপর প্রতি মাসের শেষ রবিবার সেগুলি বাছাই করে গরিব মানুষগুলোর জন্য রেখে দিই। ওদের হাসিমুখটাই আমাদের প্রেরণা জোগায়।'


হাবরার দাসপাড়ার বাসিন্দা অনিমা দাস এখানে বেশ কয়েকবার এসেছেন। তিনি বারাসতে পাঁচ বাড়িতে কাজ করেন। অনিমা বললেন, 'স্বামী নেই। ছেলেরা ছোট। অভাবের সংসারে নতুন জামাকাপড় সব সময় কিনে দিতে পারি না। এই দোকান আমাদের কাছে ভগবান।' ভাসিলা থেকে আসা মায়া দাস বললেন, 'পোশাকগুলি পুরনো হলেও ভালো। পড়ার মতো। জানার পর থেকেই কয়েক মাস ধরে এখানে আসি। আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা কে ভাবে আজকাল? এঁরা ভেবেছেন। এটাই আমাদের পাওনা।'


শুধু বারাসত নয়, বসিরহাটের ভাসিলা, মালতিপুর কিংবা মছলন্দপুর, হাবরা থেকেও অনেকে আসেন। 'ক্রেতা'দের ভিড়ে ভিখিরিদেরও দেখা মেলে।

Source: Ei Samay