Monday, March 28, 2016

বারাসতে কিশোরী ভলিবলার সঙ্গীতা আইচের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে ক্রীড়ামহলে

 দিনের আলোয় বারাসতে কিশোরী ভলিবলার সঙ্গীতা আইচের খুনের পর রাজ্যের ক্রীড়ামহলে ঘুরে ফিরে আসছে নানা শঙ্কার স্রোত৷ অন্য খেলার কর্তা ও কোচদের মনেও পড়ছে তাঁর প্রভাব৷ যে খেলাগুলোয় ছেলে ও মেয়েদের জাতীয় মিট এক সঙ্গে হয় , সেখানেই প্রেমের ঘটনা বেশি৷ প্রেমের পাশে চলছে নাটকও৷ রাজ্যের উদীয়মান মেয়ে অ্যাথলিট বাড়ি যাওয়ার নাম করে ক’দিন আগে গোটা রাত কাটালেন বর্ধমান স্টেশনে৷ বাড়ির লোক জানতেই পারলেন না৷ কোচ জানার পর মেয়েটিকে চেপে ধরতেই সেই অ্যাথলিটের পরিষ্কার জবাব আসে , ‘আপনি কোচ৷ আমার ব্যক্তিগত বিযয়ে নাক গলাতে পারেন না৷ ’ কোচের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অ্যাথলিটের দূরত্ব বেড়ে যায়৷ পরে বাড়ির লোককে জানানো হলে , আলোচনার মাধ্যমে তা ধামাচাপা পড়ে৷



দেওঘরে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স মিটে নিজের ইভেন্ট ছেড়ে প্রেমিক দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রেমিকা অ্যাথলিটকে উত্সাহ দিতে৷ বাংলা টিমের ম্যানেজার তাকে গরু খোঁজার মতো খুঁজে যাচ্ছিলেন৷ ম্যানেজার গিয়ে দেখেন , নিজের ইভেন্ট ছেড়ে প্রেমিকার পাশে সেই প্রেমিক অ্যাথলিট৷ পনের বছর আগে জাতীয় গেমসে একজন কোচ সেখানেই বিয়ে করেছিলেন এক খেলোয়াড়কে৷ তা জানাজানি হওয়ার পর সেই কোচ মেয়ে ম্যানেজারকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন৷ পরে সেই ঘটনার জন্য কোচকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল৷ এখনও তাই হচ্ছে৷


কেন এই সমস্যা ? কর্তারা যা বলছেন , তাতে প্রধান সমস্যা একটাই৷ মেয়েদের টিমের সঙ্গে সবসময় মেয়ে ম্যানেজার দেওয়া যায় না৷ টিম নিয়ে যেতে হয় কোনও ছেলে কর্তাকে৷ দ্বিতীয়ত , ৫০ জন টিমের সদস্যদের দেখভালের জন্য থাকেন মাত্র দু’জন ম্যানেজার , দু’জন কোচ৷ কোচের কাজ যদিও মাঠে৷ ফলে এক দঙ্গল ছেলে -মেয়েকে সামলানোর জন্য দু’জন ম্যানেজার যথেষ্ট নয়৷ অনেক সময় প্রতিযোগীর মা ’কে ম্যানেজার করে দেওয়া হয়৷


রাজ্যের ক্রীড়া কর্তারা গাফিলতির কথাটা মেনে নিচ্ছেন৷ রাজ্য অ্যাথলেটিক্সের সচিব কমল মৈত্র বললেন , ‘ঘটনা ঘটে না তা নয়৷ আমাদের সমস্যা হচ্ছে , লোকবল নেই৷ টাকা নেই৷ দেখভালের জন্য দুটো লোককে বেশি পাঠাতে পারলে সত্যি সুবিধে হয়৷ ফলে ঠিকমতো নজরদারি থাকে না৷ লোক বাড়াতে পারলে সত্যি ভালো হত৷ ’ রাজ্য সাঁতার সংস্থার প্রেসিডেন্ট রামানুজ মুখোপাধ্যায়ের কথায় , ‘চিন্তাটা বেড়ে গেল৷ আমাদের ম্যানেজারদের আরও সতর্ক থাকতে হবে৷ এটা সত্যি , ৫০ জনের টিমের জন্য দু’ জন ম্যানেজার যথেষ্ট নয়৷ ফলে , খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের আরও বন্ধুর মতো মিশতে হবে৷ তা হলে মারাত্মক ঘটনা থেকে দূরে রাখা যাবে৷ ’


নির্বাচনে ব্যস্ত রাজ্য ভলিবল সংস্থার সচিব পল্টু রায়চৌধুরীর৷ বললেন , ‘শনিবার মেয়েটির বাড়ি গিয়েছিলাম৷ শুনে অবাক হচ্ছি , মেয়েটির পরিবার পুলিশকে জানিয়েছিল৷ কিন্ত্ত আমাদের একবারও জানায়নি৷ জানালে হয়তো ঘটনাটি এড়ানো যেত৷ অন্য ভাবে চিন্তা করা যেত৷ ’ তাঁরও চিন্তাও বাড়ছে৷ বললেন , ‘ভোট মিটলে সত্যি আলোচনা করে দেখতে হবে৷ ’ এই ধরনের সমস্যা হয় টেবল টেনিস , ব্যাডমিন্টন এবং দাবাতেও৷ টিটি সংস্থার সচিব দেবীপ্রসাদ বসুও প্রমাদ গুনছেন৷ বললেন , ‘খেলার পাটর্নার থেকে জীবনের পার্টনার হতেই পারে৷ বাংলায় সবচেয়ে বেশি টিটি দম্পতি৷


জীবনে সবচেয়ে সুখী তাঁরা৷ কোনও দিন এঁদের সম্পর্কে কিছুই শুনিনি৷ কিন্ত্ত বোধহয় সতর্ক হওয়ার সময় হয়েছে৷ বারাসতের ঘটনা বিছিন্ন বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না৷ আমাদের সুবিধে , পরিবারের লোকরা যান , খেলোয়াড়দের সঙ্গে৷ দরকার মেয়ে ম্যানেজার৷ এখানে আমরা একটু পিছিয়ে৷ দেখছি , কী করা যায় !’ সমস্যা মেটানোর জন্য সব ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা কি একসঙ্গে বসে কোনও বিশেষ উদ্যোগ নেবেন ?


Source: Ei Samay

No comments:

Post a Comment