Monday, May 11, 2015

বারাসতে ‘প্রয়াস’ উদ্যোগে সামিল সহৃদয় ডাক্তাররা

 এ যেন ছোটখাটো হাসপাতাল! হার্টের ডাক্তার থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ-রবিবার সকালে সবাই হাজির উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত সঃলগ্ন হৃদয়পুরে৷


অস্থায়ী শামিয়ানা টানানো হয়েছে হৃদয়পুরের প্রণবানন্দ আশ্রম লাগোয়া একটি মাঠে৷ তার মধ্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকদের চেম্বার৷ কেউ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, কেউ কিডনি চিকিত্‍সক, কেউ বা শিশুরোগের ডাক্তার৷ তাঁরা সবাই এ দিন রোগী দেখেছেন পারিশ্রমিক ছাড়াই৷ প্রতি বছরের মতো এ বছর ‘প্রয়াস’-এর কর্ণধার শ্যামল কুমার দাসের ডাকে সাড়া দিয়ে বিনামূল্যে হৃদয়পুরে রোগী দেখতে এসেছিলেন ২৯ জন চিকিত্‍সক৷


হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিভু চক্রবর্তী রোগী দেখতে দেখতে বললেন, ‘শ্যামল অসাধারণ মানুষ৷ সমাজসেবাই ওঁর জীবনের ব্রত৷ তাই শ্যামল যখন বললেন, না করতে পারলাম না৷ একদিন না-হয় পারিশ্রমিক ছাড়াই রোগী দেখলাম৷’ বিভুবাবুর মতো ‘প্রয়াস’-এর স্বাস্থ্যশিবিরে চিকিত্‍সা করতে আসা অন্যান্য ডাক্তারদের মুখেও শোনা গেল শ্যামলবাবুর ভূয়সী প্রশংসা৷ তবে তাতে কোনও হেলদোল নেই আয়কর আধিকারিক শ্যামল কুমার দাসের৷ রোগীদের দেখভাল করা, চিকিত্‍সকদের গরমে কোনও কষ্ট হচ্ছে কি না, এ সব নিয়েই মাথাব্যথা তাঁর৷ কথায় কথায় শ্যামলবাবু বললেন, ‘সেই ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর এই স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করে আসছি৷ মানুষের জন্য কাজ করতে ভালো লাগে৷ কিন্তু আমি সামান্য সরকারি চাকুরে৷ কাজের ফাঁকে যতটা সময় পাই, সহ-নাগরিকদের বিপদে পাশে দাঁড়াই৷’


বছরে শুধু একটি স্বাস্থ্যশিবিরই নয়, স্বাস্থ্যশিবিরে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শ্যামলবাবুর নেতৃত্বে ‘প্রয়াস’-এর সদস্যরা রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল, নার্সিংহোমে পর্যন্ত ছোটাছুটি করেন৷ বারাসতের বাসিন্দা ১৭ বছরের তিথি রায় ভুগছে মারাত্মক ‘অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া’ রোগে৷ এদিন সে হৃদয়পুরে এসেছিল, কিন্ত্ত ডাক্তার দেখাতে নয়৷ তার প্রিয় শ্যামলকাকুর কাণ্ডকারখানা দেখতে৷ যেদিন থেকে তার মারাত্মক এই রোগ ধরা পড়েছে, সেদিন থেকেই তিথির লড়াইয়ের সঙ্গী শ্যামল৷ তিথিকে ভোকাল টনিক থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকদের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা সবই নিজের হাতে করেছেন শ্যামলবাবু৷ এদিন তিথির মতো আরও ১৪ জন ক্যান্সার রোগীর লড়াই করার সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে ‘প্রয়াস’৷ এই প্রসঙ্গে শ্যামলবাবু বলেন, ‘তিথি, সীমা মণ্ডল, সুপর্ণা রায়, বিশ্বনাথ ঘোষরা ক্যান্সারে ভুগছেন৷ তবুও দেখুন, হাসিমুখে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন ওঁরা৷ আমাদের শেখার আছে এই মানুষগুলির কাছ থেকে৷ যুবরাজ কিংবা মনীষা কৈরালাদের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইকে আমরা কুর্নিশ জানালে এঁদের কেন জানাব না? হতে পারে এঁরা তারকা নন, কিন্ত্ত এই মানুষগুলির লড়াইও কোনও অংশে কম নয়৷’


শ্যামলবাবুর এই প্রয়াসে এদিন শামিল হয়েছিলেন ফুটবলার শিল্টন পাল এবং অ্যাথলিট সুস্মিতা সিংহ রায়৷ তাঁরাও মুগ্ধ ‘প্রয়াস’-এর কর্মকাণ্ড দেখে৷ শিল্টন বলেন, ‘চাইলে যে কোনও মানুষই যে অনেক বড় কাজ করতে পারেন, শ্যামলদা তার জলন্ত উদাহরণ৷’ সুস্মিতা জানান, তিনি অভিভূত৷ ‘প্রয়াস’-এর এদিনের স্বাস্থশিবিরে হৃদয়পুর এবং সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১২০০ জন রোগী এদিন বিভিন্ন চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিতে এসেছিলেন৷ হৃদয়পুরের বাসিন্দা শান্তি নন্দীর ক’দিন ধরেই বুকে ব্যথা৷ তিনিও এসেছিলেন ‘প্রয়াস’-এর স্বাস্থ্যশিবিরে৷ বললেন, ‘বহু বছর ধরেই আমাদের পরিবারে কারও অসুখ-বিসুখ হলে চিকিত্‍সকের আগে শ্যামলের খোঁজ পড়ে৷ এত পরোপকারী মানুষ খুব কম দেখেছি৷ সারা বছরই প্রয়াসের সদস্যরা রোগীদের নিয়ে এ হাসপাতাল সে হাসপাতাল করে বেড়ায়৷’ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ দাস তার বাবার সঙ্গে এসেছিল চিকিত্‍সক প্রণব বিশ্বাসকে দেখাতে৷ ডাক্তারবাবুর ‘চেম্বার থেকে বেরিয়ে বিস্মিতমুখে সৌরভ বলল, ‘এরকম ডাক্তারখানা আগে দেখিনি৷ মাঠে প্যান্ডেলের মধ্যে চেম্বার৷ দারুণ তো!’ এ দিনের স্বাস্থ্যশিবিরে বিভু চক্রবর্তী, প্রণব বিশ্বাস ছাড়াও ছিলেন সুপ্রিয় সরকার, হিমাদ্রি সাহা, জয়ন্ত দাসের মতো আরও অনেকে৷

Source: Ei Samay

No comments:

Post a Comment