Friday, November 27, 2020

ফুটবলের রাজপুত্র, স্টেডিয়াম আর এক রাশ স্মৃতি বারাসতের কাছে

ফুটবল পাগল বাঙালির কাছে দিয়েগো মারাদোনা যেন ঈশ্বরসম। তাঁর সময়ে তাঁকে ছোঁয়া, দেখা, স্পর্শ করা সবই ছিল বাঙালির কাছে কল্পনা, অবাস্তব ভাবনা। উত্তর চব্বিশ পরগণার বারাসতের মানুষের সেই কল্পনা বাস্তব হল, ২০১৭ সালে শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের উদ্যোগে। একটি স্টেডিয়াম উদ্বোধন করতে মারাদোনা উপস্থিত হলেন বারাসতে। ‘হ্যান্ড অব গড’-এর মালিক তখন হাতের নাগালে। মারাদোনা আজ শুধুই স্মৃতিতে। বারাসত স্কুলের সেই স্টেডিয়ামে রয়ে গিয়েছে সে দিনের স্মৃতি।


স্কুলের চেয়ারম্যান অনির্বাণ আদিত্য বলেন, “মারাদোনা আসার দিন বেশ কয়েকবার পাল্টে যায় তাঁর অসুস্থতার কারণে। কিন্তু আচমকা যখন দিন ঠিক হল, আমরা চার মাসের মধ্যে গোটা স্টেডিয়ামটা তৈরি করে ফেলেছিলাম। দিয়াগো ভার্সেস দাদা (সৌরভ গাঙ্গুলি) একটি ম্যাচ রাখা হয়েছিল অনুষ্ঠানের দিন। কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় তিনি ম্যাচটা খেলতে পারেননি। আর তারপরই হঠাৎ তিনি স্কুলের ছেলে মেয়েদের নিয়ে একটি ফুটবল ওয়ার্কশপ শুরু করে দেন।” বাংলাতে মেয়েরা ফুটবলে এই ভাবে অংশ নেয় তা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন মারাদোনা। সে দিন তাঁর কাছ থেকে ফুটবলের ট্রেনিং পাওয়া এক ছাত্রী অদিতি রায় বলেন, “আমরা খুব ভাগ্যবান যে এত মানুষের মধ্যে ওনার সঙ্গে  ফুটবলে পা মেলাতে পেরেছিলাম।” অন্য এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দীপ্তক বিদ্যার্থী বলেন, ‘‘মারাদোনা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর দর্শন মানে ঈশ্বরের দর্শন।’’ স্কুলের প্রিন্সিপাল পারমিতা ঘোষাল বলেন, “সে দিনের স্মৃতি বারবার মনে পড়ছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত ফুটবলার শ্যাম থাপা,  দীপেন্দু বিশ্বাস, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং মনোজ তিওয়ারির মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়।’’ 


সেই দিন মারাদোনার সঙ্গে মাঠের পর ওঁর হোটেলের ঘরে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছিলেন ফুটবলার ও বিধায়ক দিপেন্দু বিশ্বাস। তার সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল, ডার্বি, দর্শক এই সব নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘‘ফুটবলের ঈশ্বর মারাদোনার বাঁ পা আমি হাত দিয়ে ধরতে পেরেছি সেই দিন। এটা আমার সারা জীবনের বড় স্মৃতি।’’


একটা স্কুলের অনুষ্ঠানে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দর্শকাসনে উপস্থিত ছিলেন। বারাসাত টাকি রোড জুড়ে ছিল মানুষের ভিড়। যাঁরা কাছে পৌঁছতে পারেননি, তাঁদের দূর থেকে দেখেই আশ মেটাতে হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘গাড়ির মধ্যে থেকে হাত নাড়তে নাড়তে চলে গিয়েছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র।’’


Source: Ananda Bazar 

বারাসতে হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীরাও পাবেন সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা

 অনেকেই এখন হোম আইসোলেশনে থেকে করোনার সঙ্গে লড়ছেন। বারাসত পুরসভা এলাকায় এ বার সেই রকম রোগীরাও সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার বারাসত পুরসভায় বৈঠক হয়। কী ভাবে এই পরিষেবা দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে। গোটা রাজ্যেই এমন পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য সরকার।


বারাসতের মুখ্য পৌর প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়ের মতে, অনেক সময় করোনা টেস্ট পজিটিভ এলেও সে খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছচ্ছে না বা দেরিতে পৌঁছচ্ছে। ভীতি বা আর্থিক সঙ্গতি না থাকার কারণে অনেকে বাড়িতে থাকতে চাইছেন। তাই যাতে মানুষ ভীত না হন এবং বাড়িতে বসেই করোনার সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা পান, সে জন্যই এই উদ্যোগ।


হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের টেলিফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা চালানো হবে। যদি অবস্থার অবনতি হয় তবে তাঁদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।


বুধবারের বৈঠকে সুনীল ছাড়াও ছিলেন বারাসতের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা তাপস রায় এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বারাসত শাখার প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ সাহা এবং জেলার কোভিড ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক বিবর্তন সাহা।


Source: Ananda Bazar

কাজীপাড়া ব্রিজের যানজট! বারাসতে নাজেহাল বাসিন্দারা চান শুধু একটা ব্রিজ

 একটা ব্রিজ চাইছে বারাসত। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এখন এই একটি ব্রিজই দিতে পারে আপাত স্বস্তি। অন্তত জেলা সদর শহরকে কিছুটা যানজটের হাত থেকে বাঁচাতে পারে একটি চওড়া ব্রিজ। বারাসত চাঁপাডালি মোড় থেকে পূর্ব দিকে এগোলেই তিতুমীর বাস স্ট্যান্ডে ঢোকার পথ, মাছ বাজার, তারপর জেলা সদর হাসপাতাল, তারপর কাজীপাড়া রেলগেট আর এই জগদীঘাটা ব্রিজ। বনগাঁ,  হাবরার মত শহরের সঙ্গে জেলা সদর ও কলকাতার যোগাযোগের সহজতম পথ হল যশোর রোড।যাকে ৩৫ নং জাতীয় সড়ক বলে জানেন লোকে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পেট্রাপোল ও বেনাপোল বন্দরের জন্য এই যশোর রোড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


কলকাতা শহর বা বারাসাত হয়ে গাড়িগুলি বনগাঁর দিকে এগোতে গেলে এই অপরিসর ব্রিজ হয়ে উঠছে প্রধান সমস্যা। দুই দিক থেকে বাস, ট্রাক, অটো, টোটো এসে জট পাকিয়ে যায় এখানে। এমনিতেই বারাসত চাঁপাডালি মোড় একপ্রকার পাকদন্ডির মত। সামান্য দূরত্বে বেশ কয়েকটি মোড় আর রাস্তার সংযোস্থল হওয়ায় যানজট অতি স্বাভাবিক ঘটনা। তার উপর এই কাজীপাড়া ব্রিজের কারনে যানজটে নাজেহাল সাধারন মানুষ।


আর কাজীপাড়া ব্রিজের  জটের রেশ গিয়ে পড়ে সারা শহরে। এই ১০ মিনিটের পথ পাড় হতে তখন সময় লেগে যায় এক ঘন্টা, দাবি এই পথের অটো চালক তারক হাজরার। ছোটবেলা থেকেই এই সরু ব্রিজ চওড়া হবে শুনে আসছেন এনতিয়াজ আলি। কাজীপাড়ার বাসিন্দা এনতিয়াজের দাবি এই ব্রিজের দু’ধারের দোকানগুলি সরানোই ব্রিজ চওড়া হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা। সেই ছোট্ট কাজীপাড়া ব্রিজই এখন শহরের যানজটের অন্যতম সমস্যা। আ্যাম্বুলেন্স হোক আর যাত্রী বোঝাই বাস হোক, নিস্তার নেই কারও। সকালে অফিস টাইম আর সন্ধ্যায় এই পথ সব যাত্রীদের যাতায়াত  বিরক্তিকর ও বিপদজনক।


ছোটখাটো দূর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে মত এই পথের যাত্রীদের। বারাসত পুরসভার পুর প্রশাসক সুনীল মুখার্জি র অভিযোগ গত ১০ বছরে বারবার ন্যাশানাল হাইওয়ের অথরিটিকে বারবার বলা হয়েছে কাজীপাড়া ব্রিজ চওড়া করতে। পুরপ্রশাসকের আক্ষেপ, বারবার বলা সত্বেও সমাধান হয়নি এই ব্রিজের সমস্যার।


Source: News 18

Monday, November 9, 2020

লকডাউনে গার্ডরেলে ঘিরল বারাসত স্টেশন, যাত্রা–স্বাচ্ছন্দ্যে চলমান সিঁড়ি, লিফট

 লকডাউনে গত প্রায় ৮ মাস ধরে পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা। আর এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে হাওড়া, শিয়ালদহর মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলি যাত্রীহীন থাকার সুযোগে সেজে উঠেছে। বিশ্বমানের সমস্ত সুযোগ–সুবিধা পাওয়া যাবে ওই স্টেশনগুলি থেকে। এবার একইভাবে ভোলবদলে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে বারাসত স্টেশনের। যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ফুট ওভারব্রিজ, চলমান সিঁড়ির পাশাপাশি প্রবীণদের জন্য লিফটও তৈরি হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বারাসত স্টেশনে।


বারাসত স্টেশন সাজিয়ে তুলতে খরচ করা হচ্ছে ৫ কোটি টাকা। এর বাইরে রয়েছে নির্মাণের খরচ। সমস্ত কাজ শেষ হতে আরও কিছু দিন লাগবে বলে জানা গিয়েছে। আর কী কী হচ্ছে বারাসত স্টেশনে?‌ ব্যস্ততম এই স্টেশনের সর্বত্র ছাউনি ছিল না। বৃষ্টি এলে সমস্যায় পড়তে হত যাত্রীদের। সেই কথা মাথায় রেখে পুরো স্টেশন জুড়ে বসানো হচ্ছে ছাউনি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অকারণ অনেকে স্টেশনে ঢুকে পড়ে। তাতে যেমন ভিড় বাড়ে তেমনই নানা সমস্যা দেখা দেয়। সেই প্রবণতা আটকাতে গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে বারাসত স্টেশন। অবৈধ নির্মাণ ভেঙে লাগানো হচ্ছে গার্ডরেল।


এদিকে, বারাসত স্টেশনে জোরকদমে চলছে সৌন্দর্যায়নের কাজ। কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, মনীষীদের ছবি আঁকার কাজ চলছে দেওয়ালে দেওয়ালে। ১ নম্বর থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত চলমান সিঁড়ি তৈরির কাজও প্রায় শেষ। গার্ডরেল দিয়ে স্টেশন ঘিরে ফেলার এই উদ্যোগে লাইন পারাপারের জন্য দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও অনেক কাজ বাকি থাকলেও বুধবার থেকে ট্রেন চলাচল ফের শুরু হলে নতুন কাজকর্মের বেশ কয়েকটি সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। স্বাভাবিকভাবেই রেলের এই উদ্যোগে খুশি তাঁরা।


Source: Hindustan Times


চলমান সিঁড়ি, ফুটব্রিজ সংস্কারে ভোল বদলাচ্ছে বারাসত স্টেশন

 যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে লক্ষ রেখে সংস্কার করা হচ্ছে ফুট ওভারব্রিজের, তৈরি হচ্ছে চলমান সিঁড়ি, প্রবীণদের জন্য লিফট। যাত্রীরা রোদ-জলে অসুবিধায় যাতে না পড়েন, তার জন্য যে সব জায়গায় ছাউনি ছিল না, সেখানে তৈরি হচ্ছে ছাউনি। স্টেশন চত্বর ঘিরে দেওয়া হচ্ছে গার্ডরেল দিয়ে। এ ছাড়াও, দেওয়ালে লাগানো হচ্ছে কলকাতার ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, মনীষীদের ছবি। দীর্ঘদিন লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে শিয়ালদহের ধাঁচে এ ভাবেই সেজে উঠছে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বারাসত জংশন স্টেশন। রেল সূত্রের খবর, বারাসত স্টেশনকে আগেই মডেল স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বার স্টেশনের নানা পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে জোরকদমে। আগামী বুধবার থেকে ট্রেন চলাচল ফের শুরু হলে নতুন পরিকাঠামোর কয়েকটির সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।



এত দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় স্টেশনে ভিড় নেই বললেই চলে। তাই সুষ্ঠু ভাবে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী। তিনি আরও বলেন, ‘‘চলমান সিঁড়ি, বয়স্কদের জন্য লিফট বসানো ছাড়াও অকারণ স্টেশনে ঢুকে পড়ার প্রবণতা আটকাতে বারাসত স্টেশন গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে।’’


রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দমদমের পরে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বারাসতই একমাত্র জংশন স্টেশন যেখানে চলমান সিঁড়ি তৈরি হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ওই স্টেশনের এক আধিকারিক জানান, জংশন হিসেবে বারাসত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। শিয়ালদহ থেকে এসে এখান থেকেই বনগাঁ এবং বসিরহাটের লাইন ভাগ হয়ে যায়। ফলে এই স্টেশনে যাত্রীদের চাপও বেশি থাকে। তাই চলমান সিঁড়ি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


বারাসত স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, অবৈধ নির্মাণ ভেঙে লোহার গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে গোটা স্টেশন চত্বর। এক নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত চলমান সিঁড়ি তৈরির কাজও প্রায় শেষ। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, অসচেতন ভাবে লাইন পারাপারের জন্য দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। সেই সমস্যার সমাধানে গার্ডরেল দিয়ে স্টেশনের চার দিক ঘিরে ফেলা হচ্ছে। তবে স্টেশনের এ-পার থেকে ও-পারে যাওয়ার জন্য পুরনো ফুটব্রিজটিই ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে।


রেল সূত্রের খবর, স্টেশনের সর্বত্র ছাউনি না থাকায় বৃষ্টি হলেই ভিজতে হত অনেক যাত্রীকে। সেই সমস্যা থেকে বাঁচতে পুরো স্টেশনে ছাউনি নির্মাণের কাজও চলছে। বারাসত স্টেশনটি শুধুমাত্র সাজিয়ে তুলতেই ৫ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পূর্ব রেল। এর বাইরে রয়েছে নির্মাণের খরচ। কিছু দিনের মধ্যেই সমস্ত কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে।


এই কাজের প্রশংসা করছেন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। বারাসত কলেজের ছাত্র রাজা দে বলেন, ‘‘স্টেশন চত্বর ঘিরে দেওয়ায় অকারণে লোকের আনাগোনা, স্টেশনে বসে আড্ডা দেওয়া কমবে। ফুটব্রিজ ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমবে।’’


Source: Ananda Bazar

চিনা আলোর সামগ্রীকে টেক্কা দিচ্ছে বারাসতের এই ‘প্রদীপ গ্রাম’

 দিওয়ালির আলোর বাজার ছেয়ে গিয়েছে চিনা সামগ্রীতে। রং বেরঙের টুনি বাল্ব, এলইডি আলোর পসরা সাজিয়ে বসছে দোকানদার। কালীপুজো হোক কিংবা দিওয়ালি মণ্ডপ থেকে ঘর আলোকসজ্জাতেও থাবা বসিয়েছে সস্তার এসব চিনা আলো। এসেছে প্লাস্টিকেরতৈরি প্রদীপও। কিন্তু বারাসাত থেকে একটু দূরে চালতাবেড়িয়া। আর এখানেই মাটির তৈরি হাতে গড়া প্রদীপ আর পিলসুজ এখনও সমান তালে টক্কর দিচ্ছে বাজারে।


এই গ্রামের কুটির শিল্পের মোটামুটি গোটা পশ্চিমবঙ্গে বেশ নামডাক আছে। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এখানকার হাতে তৈরি মাটির জিনিস রফতানি হয়।


যদিও তৃতীয় পক্ষের ব্যবসায়ীরা এখানকার হরেক কিসিমের প্রদীপ কিনে নিয়ে তারাই পাইকারি দরে বিক্রি করে বাজারে। কুটির শিল্পীরা তাদের হাতে তৈরি জিনিসগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি করে বানান। 


দু’হাতের দশ আঙুলের জাদুতে হরেক রকমের মাটির প্রদীপ তৈরি করেন এই পুরুষ থেকে মহিলা সকলে। বারাসত থেকে একটু বেড়িয়ে যশোর রোড হয়ে যেতে দু’পাশে চোখে পড়বে মাটির বিভিন্ন মূর্তি, পট, বিশেষ করে পিলসুজ আর প্রদীপ তৈরির কাজ চলছে। 


শুধু জাতীয় সড়কের দু'পাশেই এই এলাকার ঘরে ঘরে কুটির শিল্পের মতো ছেয়ে গিয়েছে মাটির প্রদীপ তৈরির শিল্পে। সারা বছরের চব্বিশ ঘণ্টায় এখানে প্রদীপ তৈরির কাজ চলে। করোনা মহামারীর জন্যে গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।


এই সময় চালতাবেড়িয়ায় এই প্রদীপের গ্রামে প্রথম দু'সপ্তাহ প্রদীপ রফতানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল এখানকার শিল্পীদের। এরপর পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিজেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করে নিজেরাই শিল্পীদের কাছ থেকে মাটির জিনিস নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী পঙ্কজ পাল।


নতুন প্রজন্মের কিছু ছেলে মেয়েরা এই পেশায় আসতে চাইছিল না। গত বছর পর্যন্ত এমনটাই ছিল। তবে এই বছর অনেকে কাজ চলে যাওয়াতে এবং পরিবারে আর্থিক সঙ্কট শুরু হওয়াতে তারা এই কুটির শিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।


বছর ষাটের জয়দেব পাল বলেন, 'করোনা মহামারী হোক বা বছরের অন্যান্য সময় কুটির শিল্পীদের বাইরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেই কাজ করলেই রোজগার হয়, এতে করোনারও ভয় নেই উপার্জনও ভালো হয়। যার ফলে এখন গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে মাটির জিনিস বানানোর আগ্রহ হচ্ছে।


হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে সকলে এই মাটির জিনিস তৈরি করেন। একটি পিলসুজের উপরে এক সঙ্গে পাঁচ, সাত, নয়, একুশ, একান্নটি প্রদীপও তৈরি হচ্ছে। একান্নটি প্রদীপ থাকলে নাম, 'একান্ন দিয়া।' বাজার ধরতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে প্রদীপের আদল। থাকছে বিভিন্ন কারুকাজ, সুক্ষ থেকে সুক্ষ কাজ যত্ন সহকারে করেন এখানকার শিল্পীরা। 


স্বামীর সঙ্গে প্রদীপ বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন তসলিমা বিবি। বললেন, '১০’বছর ধরে এই কাজ করছি। আমার মতো অনেকেই প্রদীপ তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।' কারখানা মালিক কামাল ইসলাম বলেন, 'এলাকার মানুষ রোজগার করছেন, আমাদের ব্যবসাও বেড়েছে আগের থেকে অনেক।'


বাপ ঠাকুরদার সময় থেকে চলে আসা শিল্পের ধরণও আগের অনেক বদলেছে। মানুষ বিভিন্ন ধরণের মাটির কারুকার্যের জিনিস দিয়ে ঘর সাজাতেও এখন পছন্দ করে। এসবের কথা মাথায় রেখে সেই মতন জিনিস করেন শিল্পীরা। চালতাবেড়িয়ার কুটির শিল্পীরা মনে করেন মাটির প্রদীপ এর সঙ্গে প্লাস্টিক বা চিনা আলোর পাল্লা দিয়ে পারবে না।


কারণ শিল্পীরা মনে করেন, পুজো-আচ্চার ক্ষেত্রে ভক্তিভাব প্রকাশে মাটি প্রদীপকে এখনও বেশী গুরুত্ব দেন মানুষ। তবে চিনা মালের সঙ্গে পাল্লা দিতে দামের উপরে রাশ টানতেই হচ্ছে এটাই মূল সমস্যা।


এখানকার মানুষের মাটির সঙ্গে কারবার তার জন্যে এখানে সকলে মা মনসার পুজো করেন। মূর্তি পূজার থেকে তারা বিশ্বাস করেন ঘট পুজায়। মাটির ঘটে দেবদেবীর ছবি এঁকে পুজো করা হয়। শিল্পীরা সকলে ২০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে বেতনে কাজ করেন।


কাজের মান অনুযায়ী কারও একদিনের রোজগার দুশো থেকে তিনশো টাকা। প্রদীপ তৈরির পাশাপাশি দিওয়ালির জন্য লক্ষ্মী-গণেশ মূর্তিও গড়ছেন অনেকে। কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, গুজরাত, অসম, পটনায় চলে যাচ্ছে এখানকার লক্ষ্মী-গণেশ। 

বাইরের রাজ্যেও বেশ চাহিদা রয়েছে এখানকার মাটির জিনিসের। এই গ্রামের শিল্পীরা মনে করেন চিনা সামগ্রী বর্জনের ডাক নয়, প্রতিযোগিতায় নেমে চিনা সামগ্রীকেই হারাবে তাদের হাতে তৈরি মাটির প্রদীপ।



Source: Indian Express