Thursday, April 30, 2020

করোনার আতঙ্কে বন্ধ করা হল বারাসতের ওষুধের পাইকারি বাজার

করোনার আতঙ্কে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সবচেয়ে বড় ওষুধের পাইকারি মার্কেট  বন্ধ করা হল। বারাসতে পঞ্চানন মার্কেট  নামে এই বাজারে হোলসেল ওষুধ বিক্রির জন্য বিখ্যাত। এই মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর গত কয়েক দিন ধরে জ্বর ও কাশী হয়।ওষুধ খেয়েও জ্বর না কমায়, তাঁকে কোয়ারান্টাইন সেন্টারে পাঠায় প্রশাসন।বারাসত স্টেশনের এক নং প্লাটফর্ম থেকে বেড় হলেই এই ওষুধের পাইকারি বাজার পড়ে।স্টেশন থেকে হরিতলা মোড়ের দিকে আসার রাস্তায় বাম দিকে পঞ্চানন মার্কেট।


বাজারে ঢোকার রাস্তা এতটাই সরু যে দুজন পাশাপাশি যাওয়া দূস্কর।আর সিঁড়ি ধরে বাজারের উপরে উঠলে গায়ে গা লাগিয়ে কেনাকাটা করা ছাড়া উপায় নেই।ঘিঞ্জী বাজারে স্যোশাল ডিসটেন্সিং এক প্রকার অসম্ভব ছিল।লক ডাউনের শুরু থেকে ব্যবসাদার ও প্রশাসনের মাথা ব্যাথা ছিল এই বাজার। কারন  করোন থাবা থেকে এই পাইকারি ওষুধের বাজারকে  মুক্ত রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ করোনা ভাইরাস তখনও বারাসত শহরে মাথা চাড়া দেয়নি৷প্রশাসনের নির্দেশ মত সকল খরিদারকে চাহিদা মত ওষুধের ফর্দ বানিয়ে বাজারের বাইরে থেকে দোকানদারকে ওর্ডার দিয়ে দিতে হবে।তারপর রাস্তার ধারে অপেক্ষা করতে হবে।রাস্তাতেই দোকানের কর্মীরা ওষুধ ডেলিভারি করে যাচ্ছিল।কিন্ডু এই ঘিঞ্জি বাজারে প্রতিদিন হাজার খানেক লোক জড় হচ্ছিল ওষুধ নিতে।


এই এলাকার বাসিন্দা সৌমদ্বীপ ঘোষের অভিযোগ একদিকে বারাসাতের বড় বাজার আর একদিকে পঞ্চানন মার্কেট। সারা জেলার ওষুধ এখান থেকে যায়।ফলে তাদের বরাবরের  আশংকা ছিল প্রচন্ড ছোয়াছে করোনা যে কোন সময় এই এলাকায় কড়া নারবে।প্রশাসন এই বাজার বিল্ডিং এর গঠন জানত তারপরেও কি করে এমন একটা ঘিঞ্জি বাজারকে চালাবার অনুমতি দিল তা তার বোধগম্য হচ্ছে না।বারাসত শহরের ওষুধের খুচরো ব্যবসাদারের মৃনাল বিশ্বাস এদিন বলেন লকডাউনের কারনে বেশ কিছু ওষুধের যোগানের সমস্যা রয়েছে। তার উপর পাইকারি বাজার বন্ধ হওয়াতে আরও সমস্যা বাড়বে।তবে জেলার বড় শহরগুলিতে ওষুধ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটারদের সরবরাহ থাকাটা একটা স্বস্তি। তবে গ্রামীণ এলাকায় ওষুধের যোগানের উপর প্রভাব পড়বেই পঞ্চানন মার্কেট বন্ধের।  আজ সকাল থেকে বাজার বন্ধের কথা জানায় ব্যবসায়ীরা।ব্যবসাদার সুত্রে জানা গেছে সাময়িকভাবে এই বাজার বন্ধ রাখা হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর করোনা টেস্ট রিপোর্ট দেখে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাজার ব্যবসায়িক কমিটির সভাপতি সুনীল দেবনাথ।তার দাবী আগামীকাল শুক্রবার বাজারে স্প্রে করে জীবানুমুক্ত করা হবে।

Source: News 18


Monday, April 13, 2020

বারাসতের দেওয়াল জুড়ে আঁকিবুঁকিতে করোনা সচেতনতা বার্তা

করোনা ভাইরাস থাবা না বসালে রাজ্যে এতদিনে পুরভোটের ডঙ্কা বেজে যাওয়ার কথা ছিল। মাস দেড়েক আগে থেকেই পাড়ায় পাড়ায় চুন দিয়ে দেওয়াল রং করার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু করোনার আঁচে পুড়েছে ভোটের কপাল। তাই দেওয়ালগুলি সাদাই পড়ে ছিল। এবার ভোট প্রচারের সেই সাদা ক্যানভাসে রং,তুলির টানে মানুষকে ঘরে থাকার বার্তা দিতে নামল ছাত্র-যুবরা।


লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় ভিড়ের ছবি রোজ দেখা যাচ্ছে রাজ্যে। আর তার সঙ্গে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কোথাও পাড়ার মোড়ে আড্ডা, কোথাও চায়ের দোকানে ভিড়। সকাল হতেই ব্যাগ হাতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বাজারে। পুলিশ প্রশাসন নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তাতেও হুঁশ ফিরছে না মানুষের। এবার তাই রং তুলি হাতে ময়দানে নামল ছাত্র যুবরা। রবিবার থেকে বারাসতের বিভিন্ন এলাকায় দেওয়াল লিখন শুরু করল ইয়াং জেনারেশন অফ বারাসত নামে ছাত্র যুবদের একটি সামাজিক সংগঠন। দেওয়ালে কার্টুন এঁকে বাসিন্দাদের সচেতন করছেন তাঁরা।


লকডাউন চালু হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু মিম ভাইরাল হয়েছে। তাদেরই কয়েকটি নিয়ে মজাদার কার্টুন আঁকছে এই ছাত্র যুবরা। এই মিমগুলির মধ্যে সব চেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল চা কাকু। বারাসতের রথতলা মোড়ের কাছে একটি দেওয়ালে সেই চা-কাকুকেই প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে ওই ছাত্ররা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চা কাকু বলছেন, “আমরা চা খাব না?” উত্তরে একজন বলছেন, “চা খাবেন, কিন্তু বাড়ি থেকে বেরবেন না।” এছাড়া ‘স্টে হোম, স্টে সেফ’ -এর বার্তাও দেওয়া হচ্ছে এই দেওয়াল লিখনে।


ইয়ং জেনারেশন অফ বারাসতের তরফে সোহম পাল বলেন, “আমাদের এই অরাজনৈতিক সংগঠনে প্রায় দু’শোর উপর সদস্য রয়েছে। দেওয়াল লিখনের পাশাপাশি তারা প্রত্যেকে এলাকায় এলাকায় ঘুরে সার্ভে করছে। এবং প্রকৃত অর্থে যারা এই লকডাউনে খাদ্যসংকটে ভুগছেন, তাদের হাতে খাবার তুলে দেওয়া হচ্ছে। চাল, ডাল, ওষুধ, বেবিফুড, যার যেমন প্রয়োজন সে অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে।”

Source: Sanbad Pratidin

Sunday, April 12, 2020

বাংলার গর্ব মেঘার জীবনে কাটল মেঘ, সাহায্যের হাত বাড়ালেন 'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক' পুলিশ অফিসার

 আর কয়েক সপ্তাহ পরেই ভারতীয় টিমের জার্সি গায়ে তাঁর উড়ে যাওয়ার কথা ছিল থাইল্যান্ডে। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের কারণে কেরালার তিরুবনন্তপুরমের জাতীয় শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বারাসতে নিজের বাড়িতে ফিরে চরম সঙ্কটে বাংলার অন্যতম সেরা প্রতিশ্রুতিবান ভলিবলার মেঘা দাস। দু’বেলা পেটপুরে খাওয়ার অবস্থাও তাঁর এখন নেই। আর সেই খবর 'এই সময়' পত্রিকায় প্রকাশিত হতেই এবার এগিয়ে এলেন কলকাতা পুলিশের এক অফিসার।



জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ওই অফিসার খবরটি পড়েই শুক্রবার হাজির হন মেঘার বাড়িতে। সঙ্গে করে নিয়ে যান এক মাসের জন্য চাল, ডাল-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। শুধু তাই নয়, এরপর আরও সাহায্য করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে, উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ওই অফিসার চান না এই সাহায্যের প্রেক্ষিতে তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসুক। সেই কারণেই এই প্রতিবেদন তাঁর নাম প্রকাশ করা হল না। তবে, এতে যে মেঘার সমস্যার অনেকটাই আপাতত সমাধান হল, তা বলাই বাহুল্য।


৬ ফুটের বেশি উচ্চতার বছর আঠারোর মেঘার ঝুলিতে জাতীয় পর্যায়ের গোটা সাতেক সোনার মেডেল রয়েছে। মিনি, সাবজুনিয়র, জুনিয়র সহ খেলো ইন্ডিয়া গেমসে বাংলা টিমকে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন করে জাতীয় শিবিরে ডাক পেয়েছিলেন এই ‘অ্যাটাকার’। ভলিবলের কোর্টে প্রতিপক্ষকে টলিয়ে দিলেও নিজের সংসারের কোর্টের রক্ষণ কিন্তু সামলাতে পারছেন না ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী মেঘা।


মেঘার বাবা গোপাল দাস আগে পাখির ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসা নিষিদ্ধ হওয়ায় এখন তিনি বারাসতের লালি সিনেমার কাছে ফুটপাতে এক ছোট্ট ইমিটেশনের দোকান চালান। এমনিতে পুজোর সময় ছাড়া দোকান প্রায় চলেই না। তার ওপর লকডাউনে তিনি তো দোকানই খুলতে না পারায় কোনও আয় নেই দিন কুড়ি ধরে। জমানো কোনও টাকাও নেই। বুধবার দুপুরে বারাসতের মালঞ্চ পাড়ায় এক চিলতে বেড়া দেওয়া ঘরে মেয়ে, বউ ও শাশুড়িকে নিয়ে বসে গোপালবাবু বলেছিলেন, ‘মেয়েটা সবে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। ভারতীয় টিমে খেললে হয় তো কিছু টাকা স্টাইপেন্ড পেত। পরে একটা চাকরি বাকরিরও পথ খুলে যেত। কিন্তু এই করোনা আমাদের সেই স্বপ্ন আপাতত থমকে দিল।’ গোপালবাবুর আরও কষ্টের কারণ একজন খেলোয়াড়কে যা খাবার দিতে হয়, তার তিনি কিছুই দিতে পারছেন না মেয়েকে। তাঁর আক্ষেপ, ‘মেয়েটা বাড়ি রয়েছে কিন্তু ওকে কোনওভাবে একটু ভাত আলুভাতে ছাড়া তো কিছুই দিতে পারছি না। রোজগার নেই।’ সঙ্গে জোড়েন, ‘ধারদেনা করে ওকে জাতীয় শিবিরে পাঠিয়েছিলাম। এখন তো লোকের কাছে আর ধার চাইতেও পারছি না।’


বাবা ভেঙে পড়লেও হার মানতে নারাজ ছিলেন মেঘা। বলছিলেন, ‘জাতীয় শিবিরে থাকলে খাবার কোনও সমস্যা হয় না। কেরালায় জুয়েল স্যর আমাদের ১৬ জন মেয়েকে তৈরি করছিলেন থাইল্যান্ডে একটা আন্তর্জাতিক জুনিয়র টুর্নামেন্টে খেলতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তা না হওয়ায় বাড়ি ফিরেছি। অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে আমি সব মানিয়ে নিয়েই নিজেকে তৈরি রাখছি জাতীয় শিবিরে যাওয়ার জন্য।’ এই জাতীয় শিবিরে বাংলা থেকে একমাত্র মেঘাই সুযোগ পেয়েছিলেন।


মেঘা বারাসতের মেয়ে হলেও তাঁর উত্থান মগরা ভলিবল অ্যাকাডেমিতে। এই অ্যাকাডেমির প্রাণপুরুষ প্রভাত ঘোষ মগরাতেই একটা বাড়ি ভাড়া করে মেঘার পরিবারকে বছরের বেশি সময় রেখে দেন। পরিবারকে আর্থিক সাহায্যও করেন। মেঘার বাবা বলছিলেন, ‘আজ মেঘা এই জায়গার পৌঁছানোর পিছনে সবটাই প্রভাতবাবুর অবদান। কিন্তু এমন লকডাউনের সময় তিনিই বা আমাদের কত সাহায্য করবেন? তাই আমরা এখন খুবই অসহায়।’


অবশেষে বাংলার প্রতিভাবান এই ভলিবলারের পাশে দাঁড়ালেন কলকাতা পুলিশের ওই অফিসার। সেজন্য খুশি মেঘা ও তাঁর পরিবার।


Source: Ei Samay

Sunday, April 5, 2020

করোনা মোকাবিলায় মুরগি বিলি বারাসতে

 করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। মানুষ ঘরবন্দি। কাজকর্ম সব শিকেয় উঠেছে। সবচেয়ে বিপদ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজনের। ভবঘুরেদের অবস্থা তো কহতব্য নয়। এ অবস্থায় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেন্দ্র বা রাজ্যের তহবিলে অর্থ দান করছেন, কেউ দিচ্ছেন চাল-ডাল। বারাসতের ন’পাড়ার দাস পরিবারও সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। তবে চাল-ডাল দিয়ে নয়, দুঃস্থদের হাতে তুলে দিচ্ছে একটি করে জ্যান্ত মুরগি।


কিন্তু হঠাৎ জ্যান্ত মুরগি বিলি কেন? দাস বাড়ির ছেলে তুহিন বললেন, ‘করোনা মোকাবিলায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকাটা জরুরি। নিয়মিত প্রোটিন খাওয়া দরকার। লোকে চাল-ডাল দিচ্ছে। গরিবদের পেট ভরছে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি গড়ে উঠছে? না। তবে ওদের করোনা হলে কী হবে? তাই এই ব্যবস্থা।’


যেমন ভাবা তেমন কাজ। বারাসতের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুঃস্থ পরিবারগুলির বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাস পরিবারের দুই ছেলে তুহিন ও সজল মুরগি বিলি করে দিয়ে এসেছেন। এমন সাহায্য পেয়ে অনেকেই অবাক। তখন তুহিন-সজল সবাইকে বুঝিয়ে বলছেন, যে চাল-ডাল শুধু নয়, মুরগিকেও ত্রাণ হিসেবে যেন গ্রহণ করেন সকলে। এমন ত্রাণ পেয়ে যারপরনাই খুশি সকলে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দা হরিগোপাল সাঁতরা বললেন, ‘ওরা যে এ ভাবে ভেবেছে, সে জন্য ধন্যবাদ। সত্যিই আমাদের পুষ্টিকর খাওয়ার জোটে না। রোগ হলে সহজে সেরে উঠব না। আর করোনা হলে তো কথাই নেই। দাস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে আমার কুর্নিশ।’


বারাসতের ন’পাড়ার দাস পরিবার বেশ সম্পন্ন। প্রতি বছর ধুমধাম করে বাসন্তী পুজো করে দাসেরা। এ বছর লকডাউনের জেরে পুজোয় কাটছাট করতে হয়েছে অনেকটাই। নমো নমো করে সারতে হয়েছে পুজো। পুজোর যে বাজেট ধরা হয়েছিল, তার অনেকটাই রয়ে গিয়েছিল। সেই টাকাটা বিপদের দিনে আর্তের সেবায় কাজে লাগানো হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু কী ভাবে? পরিবারের কেউ বলেন, থোক টাকাটা ত্রাণ তহবিলে দেওয়া হোক। কেউ বলেন, স্থানীয় গরিব মানুষদের চাল-ডাল দেওয়া হোক। কারও মত ছিল, খিচুড়ি রান্না করে কয়েক দিন খাওয়ানো হলেই ভালো হয়। এমন নানা মতের মধ্য উঠে আসে মুরগির কথা। সকলেই একবাক্যে রাজি হয়ে যান।


বাড়ির নবীন সদস্য তুহিন আর সজলের উপর পড়ে মুরগি বণ্টনের দায়িত্ব। দু’জনেই সানন্দে রাজি হয়ে যান। স্থানীয় একটি পোলট্রি থেকে একশোটি মুরগি কেনা হয়। তবে শুধু মুরগিই নয়, দেওয়া হয় চাল-ডাল-নুন-তেলও। সজল-তুহিনরা জানালেন, বাড়ির বড়দের তেমনই নির্দেশ ছিল। মুরগি বিলির ফাঁকে সজল বললেন, ‘আসলে প্রতিবছর বাসন্তী পুজোয় অনেক লোক নিমন্ত্রিত থাকে। এ বছর পুজো ছাড়া সে সব আর হয়নি। তাই এত কিছু করে উঠতে পারলাম।’


মুরগি বিলির সময় সরকারি নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন সজল-তুহিন। পড়েছিলেন মাস্ক। নিয়মিত স্যানিটাইজার দিয়ে হাতও পরিষ্কার করছিলেন।


Source: Ei Samay

Friday, April 3, 2020

উপার্জনহীন অযোধ্যা পাহাড়বাসী, বাসিন্দাদের চাল পাঠালেন বারাসতের পুলিশ সুপার

 একেবারে পাহাড়ের মাথায় ২২২০ ফুট উচুঁতে বাঘমুন্ডির জিলিং সেরেঞ। রেশন আনতে এই কাঠফাটা রোদে পাহাড়ি পথে নামতে হয় প্রায় তিন কিমি। অন্যদিকে কোটশিলার মুরগুমা থেকে পাঁচটা পাহাড় ডিঙিয়ে তবে লেওয়া গ্রাম। পাকা কেন্দ আর কুলের আঁটি চিবিয়ে দুপুর কাটছে সেখানকার বাসিন্দাদের। দু’বেলা ধোঁওয়া ওঠা থালা ভরতি ভাত তাদের কাছে ছিল বিলাসিতা! করোনা ‘রাক্ষস’-র আতঙ্কে ভয়ে সিঁটিয়ে আছে আড়শা বনাঞ্চলের ভুদাও। তাই পাহাড়ি পথ ভেঙে রেশনও আনতে যাচ্ছে না এই জনপদ। অথচ প্রায় দশ কিমি হেঁটে রোজ কাঠ বেচতে সিরকাবাদ, কান্টাডি যেত এই গ্রামের বাসিন্দারাই। ফলে কোনও ক্রমে একবেলা ভাত ফুটিয়ে বাকি সময় জঙ্গলের শাক আর বাঁওলা খেয়ে দিন গুজরান।


অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাঁচ থানার প্রায় শতাধিক গ্রাম লকডাউনের জেরে যেন ব্লক সদর থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। হাতে টাকাকড়ি কিছুই নেই। এক সপ্তাহ ধরে উপার্জন বন্ধ। বনমহল অযোধ্যায় দিনমজুরি করা মানুষজনের যদি রোজগার বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই পাহাড়ি জনপদের কি অবস্থা হয় তা ভুলে যাননি বারাসতের পুলিশ সুপার। ভোলেননি ওই এলাকার আধপেটা খাওয়া মানুষগুলোর মুখগুলো। তাই এই করোনার আবহে অযোধ্যা পাহাড়ে দশ হাজার কিলো চাল পাঠিয়ে দিয়েছেনতিনি।


বারাসাতের পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর হাত ধরে মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়া পার্থ-সৌমজিতের হত্যার কিনারা হয়। গ্রেপ্তার হয় বিক্রম। বলা যায়, অযোধ্যা স্কোয়াড শেষ হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তখন তিনি ডিএসপি (আইন–শৃঙ্খলা), পুরুলিয়া। সময় পেরিয়েছে। এখন তিনি বারাসতে, তবে সেখানে বসেই ভেবেছেন পুরুলিয়াবাসীর কথা। তাঁর পাঠানো দশ হাজার কিলো চালে এখন যেন দু’বেলা থালা ভরতি ভাত পাচ্ছে অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জের জিরিং সেরেঞ, লেওয়া, মামুডি, বামনি, ঘাটিয়ালির মত দুর্গম গ্রাম। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে দশ কেজি করে চাল পৌঁছে যাচ্ছে পাহাড়ের ঘরে ঘরে। সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সতর্কতায় প্রচারপত্র। ঘরে ঘরে চাল বিলিতে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গী হচ্ছে পুলিশও।


ওই সংস্থার সভাপতি চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “এই লকডাউনে পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলির অবস্থা দেখে ফেসবুকে আবেদন করেছিলাম। তারপরই গত রবিবার বারাসতের এসপির দশ হাজার কিলো চালের গাড়িটি আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।” আর এই প্যাকেট ভরতি চাল পেয়ে যে কী খুশি সোমবারি সিং মুড়া, কাজলী হাঁসদা, ছুটু সিং মুড়ারা! কিন্তু এত চাল কীভাবে জোগাড় হল? বারাসত এসপির কথায়, “তখন মাও দমনে এই পাহাড়ি গ্রামগুলির মানুষে়র ঋণ কোনভাবেই শোধ করতে পারব না। তাই এই অবস্থায় সামান্য প্রয়াস আর কী! তবে এই চাল জোগাড় করতে যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারাই আসল নায়ক।”


Source: Sanbad Pratidin

Wednesday, April 1, 2020

ভিক্ষা নয়, বারাসতের অভুক্ত মুখে খিচুড়ি দিলেন সুমিত্রারা

 সুনসান স্টেশন চত্বর। দোকানপাট সব বন্ধ। ট্রেন চলাচল তো কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বারাসত স্টেশনের ভিখারিরা বুঝতেই পারছে না হঠাৎ কী হল। সব ভোঁ-ভা!

করোনাভাইরাস, লকডাউন, আইসোলেশন- এই শব্দগুলি তাঁদের কাছে অর্থহীন। দু'দিনে দু'মুঠো ভাতও জোটেনি। কে-ই বা ভাত তুলে দেবেন ওঁদের মুখে? করোনা থেকে বাঁচতে সকলে গৃহবন্দি।

গত দু'দিনের মতো শুক্রবারটাও উপোসেই কাটত ওই ভিখারিদের। খিদা মেটাতে রাস্তার কল থেকে পেট ভরে জল খাওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না। আচমকা সুনসান বারাসত স্টেশনে মুখে মাস্ক বেঁধে হাজির কয়েকজন মহিলা। সঙ্গে খিচুড়ির হাঁড়ি, হাত ধোওয়ার সাবান। প্রায় সকলে স্থানীয় একটি আবাসনের বাসিন্দা। লকডাউনের মধ্যে শহরের ভিখারিদের জন্য তাঁরা রান্না করেছেন। নিজেদের বাড়ির খাবার বাঁচিয়েই এই খিচুড়ি তৈরি হয়েছে বলে জানালেন আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা সুমিত্রা রায়। তাঁর কথায়, 'বারাসত স্টেশন বেশ কিছু মানুষের স্থায়ী ঠিকানা। স্থানীয় ব্যবসায়ী আর নিত্যযাত্রীদের ভরসায় ওঁরা বেঁচে থাকেন। কিন্তু লকডাউনের জন্য এখন সব কিছু বন্ধ। ফলে বিভিন্ন বয়সের এই ভিখারিদের উপোস করেই দিন কাটাতে হচ্ছে। আমাদের আবাসনের মহিলারা অনেকে বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে এসেছি ওঁদের জন্য।'

বারাসত স্টেশনের জনা দশেক ভিখারি খাওয়ার পরে বেঁচে গিয়েছিল অনেকটা খিচুড়ি। তা দেখে তাঁরাই প্রস্তাব দিলেন অদূরে হৃদয়পুর স্টেশন ও চাঁপাডালি মোড়ে কিছু ভবঘুরে থাকেন। গত দু'দিন তাঁদেরও পেটে কিছু পড়েনি। তাই ওঁদেরও যদি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায়। আপত্তি করেননি সুমিত্রা, জয়া, রূপারা। যানবাহন বন্ধ। বারাসত স্টেশনের ভিখারিদের সঙ্গে হেঁটেই ওই গৃহবধূরা পৌঁছে গেলেন চাঁপাডালিতে। সেখানে খাবার বিলির বন্দোবস্ত করলেন স্টেশনের ভিখারিরাই। তবে সুমিত্রাদের কড়া নির্দেশ ছিল, একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। সেই নির্দেশের অমান্য করেননি ভিখারিরা।

কিন্তু কত দিন এ ভাবে বাড়ির খাওয়া বাঁচিয়ে ভিখারিদের খাওয়ানো সম্ভব?

জবাবে কলোনি মোড়ের কৈলাস আবাসনের বাসিন্দা সুমিত্রা রায় এবং জয়া পোদ্দার বললেন, 'যতদিন পারি, এটা চালিয়ে যাব। আমরা হিসেব করে দেখেছি, নিজেরা কিছুটা কম খেলে আরও দিন পাঁচেক চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তবে বারাসত পুরসভা থেকে যদি উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা হলে সবথেকে ভালো।' সুমিত্রাদের এই উদ্যোগ দেখে বারাসতের আরও কিছু আবাসনের মহিলারা নড়েচড়ে বসেছেন। স্থানীয় চিকিৎসক গৌতম সাহা এবং তাঁর স্ত্রী সোহিনী ঠিক করেছেন শনিবার থেকে তাঁরাও হাত লাগাবেন সুমিত্রা, জয়াদের সঙ্গে। লকডাউনের মধ্যে বারাসতের কিছু ভিখারির অন্তত অন্নসংস্থানের চিন্তা দূর হল।


Source: Ei Samay