Wednesday, December 25, 2019

অন্য এক বড় দিন পালিত হল বারাসতে

 কুকুর সম্পর্কে 'দুটো একটা কথা' জানতেন ছকভাঙা বাংলা কথাকার সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। অবলা জীবগুলো সম্পর্কে অনেকটাই জানেন বারাসতের একদল পশুপ্রেমী! তাঁদেরই আয়োজনে পনির বিরিয়ানি তারিয়ে খেল পথ-কুকুরের দল।


মঙ্গলবার রাত থেকে চলছিল রান্না। 'পশুপতি অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র সদস্য অর্পিতা চৌধুরী, নীলাঞ্জনা রায়, লোপামুদ্রা বসু দু'চোখের পাতা এক করতে পারেননি। ৬০০ কেজি চালে তেল-মশলা সহযোগে মিশল ২০০ কেজি পনির। সকালেই সারা সব তোড়জোড়। বড়দিনের বেলায় পাড়ায় পাড়ায় সুবাস ছড়িয়ে শহর পরিক্রমা শুরু। ছ'টি ভ্যানে পনির বিরিয়ানি চাপিয়ে আধ ডজন দলে ভাগ হয়েছিলেন সংগঠনের সদস্যরা। বারাসতের হরিতলা, শেঠপুকুর, হৃদয়পুর, বনমালীপুর, নবপল্লি এলাকা ঘুরে ঘুরে সারমেয়দের মাঝে কাগজের থালায় সাজিয়ে দিলেন পনির বিরিয়ানি। রাস্তার গোরু, ছাগল ও পাখিদের জন্য ছিল কেক ও কমলালেবু। বাদ যায়নি পথশিশুরাও। তাদের বাড়তি পাওনা ছিল শীতবস্ত্র।


চাঁদিফাটা গরমে রাস্তার ধারে জলের পাত্র রাখা থেকে শুরু করে হিংসার শিকার কোনও পথ-কুকুরের হয়ে সরব হয় এই পশুপ্রেমী সংগঠন। নীলাঞ্জনা রায়ের বক্তব্য, 'রাস্তার কুকুররা সব সময় উপেক্ষিত। আমরা সারা বছর এদের জন্য কাজ করি। ওরা আছে বলেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই আমরা কয়েক জন রাস্তার কুকুরদের পনির বিরিয়ানি খাইয়ে বড়দিন পালন করলাম।' অর্পিতা চৌধুরীর কথায়, 'পথশিশুরাও উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তাদেরও এ দিন আমরা শীতপোশাকের সঙ্গে কমলালেবু, কলা ও কেক উপহার দিয়েছি।'


সকালে বারাসতের প্ল্যাটফর্মবাসী শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করেন জেলা পরিষদ কর্মী আশিস হালদার। বছর ৩৬-এর আশিসের বাড়ি ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের বামুনগাছিতে। তাঁর ব্যতিক্রমী জন্মদিন পালনের সাক্ষী ছিলেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী ও পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। অসহায় শিশুদের হাতে মিষ্টি, ফল ও শীতবস্ত্র তুলে দেন আশিস। বলেন, 'প্রতি বছর পরিবারের লোকেরাই জন্মদিন পালন করেন। তাতেই সামিল হই। অফিসে আসা-যাওয়ার পথে দেখেছি, প্ল্যাটফর্মের শিশুরা কী কষ্টের মধ্যে থাকে। তাই জন্মদিনের আনন্দটা ওদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। এর জন্য একটা আলাদা অনুভূতি হয়েছে।' জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, 'এমন একটা অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। প্রত্যেকে অন্যের জন্য কিছু করলে সমাজ সুস্থ থাকবে।' বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, 'ভগবান যিশু সমন্বয়ের কথা বলে গিয়েছেন। আশিস জন্মদিনে সেটাই করে দেখাল।'

Source: Ei Samay

Monday, December 9, 2019

বারাসতের হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় পরিবেশ সচেতনতার বার্তা

 জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতাতেও নাগরিক সচেতনতার বার্তা। তাঁদের হাতের কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গি প্রতিরোধ থেকে জল অপচয় বন্ধ করা বা বায়ুদূষণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন হস্তশিল্পীরা। নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি এনআরসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকেও তাঁরা হাতের কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এ ছাড়াও, ছিল নকশিকাঁথা, কাঁথা-স্টিচ-সহ কাগজের কোলাজ এবং কাঠের তৈরি সামগ্রী। বৃহস্পতিবার বারাসতের রবীন্দ্র ভবনে হয়ে গেল জেলার হস্তশিল্প প্রতিযোগিতা।


বায়ুতে দূষণের পরিমাণ মাত্রা ছাড়িয়েছে দিল্লির মতো রাজধানী শহরে। কলকাতাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি জল সঙ্কটও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণ কিংবা জল সঙ্কটের সমস্যা নিয়ে এখনও সাধারণ মানুষ সে ভাবে সচেতন নয়। তাই এই সমস্যাগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতার পাঠ দিতে এ বার দেখা গেল হস্তশিল্পীরাও আসরে নেমেছেন।


কাঁচরাপড়ায় থাকেন হস্তশিল্পী বিশ্বজিৎ রায়। তিনি তাঁর অসাধারণ শিল্প-নৈপুণ্যে কাঠের উপর ফুটিয়ে তুলেছেন নাগরিক সচেতন সমাজ। তাতে দেখানো হয়েছে গাছ ধ্বংসের কারণে গোটা বিশ্ব রুক্ষ হয়ে উঠছে। আবার, জল অপচয় সম্পর্কে সচেতন করতেও বিশ্বজিৎ হস্তশিল্পকেই মাধ্যম করেছেন। এই হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় গ্রাম বাংলার নকশি-কাঁথা শিল্প তুলে ধরেছেন শাসনের গোলাবাড়ির শিল্পী সাহিদা বেগম। দত্তপুকুরের জহর মল্লিক কাঁথা-স্টিচের উপরে নানা শিল্প ফুটিয়ে তুলেছেন। দমদমের পিনাকী দাশগুপ্তের কাঠ দিয়ে তৈরি সিঁদুরের কৌটোও নজর কেড়েছে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের ম্যানেজার সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'হস্তশিল্পে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ প্রতি বছর নিয়ে থাকি আমরা।'


এ বছরের জেলা হস্তশিল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৭৫ জন হস্তশিল্পী। প্রতিযোগিতায় মোট ১২ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

Source: Ei Samay