Wednesday, October 26, 2016

শিল্পাঞ্চলে মূর্তি বেচতে এসেছেন বারাসতের শিল্পীরা

 আর একটা গোটা সপ্তাহ বাকি নেই৷ চলে এসেছে কালীপুজো৷ সেই উপলক্ষে সুদূর বারাসত ও দত্তপুকুর থেকে শিল্পাঞ্চলে চলে এসেছেন পাঁচ জন শিল্পী৷ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে পোড়ামাটির কালীমূর্তি, প্রদীপ বিশেষ ধরনের ছোট ঘোড়া , গণেশ -লক্ষ্মীর মূর্তি-সহ সুন্দর কাজ করা ফুলদানি৷ সালানপুরের গ্রামে গ্রামে বা বরাকর কুলটি অথবা চিত্তরঞ্জন শহরে তিন জন শিল্পী তাঁদের পোড়ামাটির শিল্পসামগ্রী নিয়ে বিক্রির জন্য ঘুরছেন৷ ওদের দু’জন সাহেব পাল আর অমিত পাল বলেন , ‘আমাদের মধ্যে একজনের বাড়ি বারাসতে৷ অন্য জনের দত্তপুকুরে৷ গত বছর আমরা শিল্পাঞ্চলে এসে এভাবে দীপাবলির আগে পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি নানা রকমের জিনিস রং করে বিক্রি করেছিলাম৷


বার আসানসোল মহকুমার রূপনারায়ণপুর , চিত্তরঞ্জন৷ সালানপুর , কুলটি , বরাকর -সহ বিভিন্ন এলাকায় ৭ -৮ দিন ধরে ফেরি করব৷ ডাবরমোড়ের কাছে আমরা তাবু করে রয়েছি৷ ভালো বিক্রিবাট্টা হলে আরও দু’জন আসবেন৷ একটা প্রদীপের দাম পাঁচ টাকা৷ কালী মায়ের মুখ ১২০ টাকা৷ আর দীপাবলিতে উপলক্ষে আরও নানা ধরনের মাটির মূর্তি পাওয়া যাবে৷ সেগুলোর আলাদা আলাদা দাম৷ ’যেখানে তাবু খাটিয়ে শিল্পীরা মূর্তি-প্রদীপ তৈরি করে , রং করে করছেন সেখানে ক্রেতার সংখ্যা কম৷ কেন ? উত্তরে শিল্পী সাহেব পাল বলেন , ‘এখনও তেমন করে প্রচার হয়নি৷ তিন দিন হল এসেছি৷ এখানে তেমন বিক্রিবাট্টা না হলেও আমাদের কয়েক জন গ্রামে ও শহরে ঘুরে ঘুরে জিনিস ফেরি করছেন৷ তাঁদের কাছ থেকে প্রচুর জিনিস বিক্রি হচ্ছে৷ ’


যাঁরা ঘুরে ঘুরে পোড়ামাটির জিনিস ফেরি করছেন , তাঁদের এক জন হলেন রমেন পাল৷ তিনি বলেন , ‘আজ বাসে করে যাওয়ার সময়েই ২টো কালীর মুখ আর ১০টা প্রদীপ বিক্রি হয়ে গেল৷ ’ কিন্ত্ত অনেকেই বলছেন দাম অনেক বেশি৷ কেন ? উত্তর এল , ‘দাম তো বেশি হবেই৷ গঙ্গা থেকে মাটি এনে তা দিয়ে শিল্প হচ্ছে৷ তার উপরে ৫ -৭ জনের থাকা -খাওয়ার খরচ রয়েছে৷ ’এ দিকে বাইরে থেকে এভাবে শিল্পীরা এসে পোড়ামাটির জিনিস বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মৃত্শিল্পীরা৷ বরাকরের মৃত্শিল্পী পাপ্পু পাল বলেন , ‘আমরা দীপাবলি আর কালীপুজো উপলক্ষে প্রদীপ তৈরি করি৷ এছাড়াও ছোটখাট লক্ষ্মী -গণেশের মূর্তি গড়ি৷ এমনিতেই চিনে আলোর জন্য বাজার মন্দা৷ এখানে এসে যেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলোর ডিজাইন আমাদের চেয়ে বেশি ভালো৷ ফলে আমাদের যেটুকু বাজার ছিল , সেটাও নষ্ট হচ্ছে৷ তবে এটাও ঠিক যে ওগুলোর দাম অনেক বেশি৷ সবাই তো আর অত বেশি দাম দিয়ে ওদেরটা কিনবেন না৷ আমজনতার জন্য আমরা আছি৷ ’


Source: Ei Samay

Wednesday, October 12, 2016

বারাসতের কিশলয় হোমের আবাসিকদের পুজো রঙিন করল পুলিশ

 রাস্তার দু’ধারে কাশফুলের বন আর আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ৷ তার মধ্যে দিয়েই ছুটে চলেছে বাস৷

 

বাসের জানলা দিয়ে আবাক দৃষ্টিতে এই অপরূপ দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে এক দল কুঁচোকাঁচা৷ “কী সুন্দর মেঘ…”৷ “রাস্তার পাশেও কত প্যান্ডেল..”৷  “দারুণ মজা হচ্ছে!”


হবেই তো৷ কারণ ওদের জগৎ চার দেওয়ালের মধ্যে৷ সারা বছর কুড়ি ফুট উচু পাঁচিলে ঘেরা হোমের মধ্যেই ওদের দিনরাত একাকার৷ সারা বছরই পড়শোনা, খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে মেতে থাকলেও পুজোর সময় ঢাকে কাঠি পড়তেই ওদেরও মন কেমন করে৷ পুজো মণ্ডপের থেকে ভেসে আসা মাইকের আওয়াজ ওদের কানেও আসে৷ রাতভর রাস্তা দিয়ে গাড়ির আওয়াজ আর মানুষের গুঞ্জন শুনে ওরাও বুঝতে পারে সবাই ঠাকুর দেখতে যাচ্ছে৷ কারও বয়স ছয়, কারও দশ, কারও আবার ষোলো৷ ওরা উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কিশলয় ও মধ্যমগ্রামের নিজলয় হোমের আবাসিক৷ দুর্গাপুজোর সময় হোমের বড় বড় পাঁচিলের বাইরের জগৎটা যে একেবারে অন্যরকম সেটা তারা জানে৷ দেখার ইচ্ছেও খুব৷ কিন্তু প্রতিবছরই আইনের বেড়াজাল বাধা হয়ে দাঁড়ায় ওদের সামনে৷ তবে এবারের পুজোয় যেন সব পালটে গেল৷


অষ্টমীর সকালে উঠেই স্নান করে প্রত্যেকে সেজেগুজে ‘রেডি’৷ দুপুরে খাওয়া দাওয়া, তার পর বড় বাসে চেপে বেড়িয়ে পড়া৷ ঠাকুর দেখতে৷ কাছে পিঠে নয়, দূরে৷ বারাসত ও মধ্যমগ্রাম ছেড়ে দু’ধারে কাশ ফুলের মহড়ার মধ্যে দিয়ে সেই বাস ওদের নিয়ে গেল সুদূর বনগাঁয়৷ কিশলয় ও নিজলয় হোমের আবাসিকদের এবছরের পুজোকে এমনই রঙিন করে তুলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ৷ এই দুই হোমের আবাসিকদের বাসে করে হাবড়া ও বনগাঁর পুজো দেখানোর আয়োজন করে তারা৷ প্রায় দু’শোর বেশি কুঁচোকাঁচাদের, দুই ভাগে অষ্টমী ও নবমীর দিন প্রথমে জেলা পুলিশ লাইনে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷ তারপর বাসে করে পুজো পরিক্রমা৷ সঙ্গে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ দুই হোমের আধিকারিকরা৷


কিশলয় হোমের সুপার মলয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে কয়েকবছর বাচ্চাদের নিয়ে বারাসতের কয়েকটা পুজো দেখানো হয়েছে৷ ওদের নিরাপত্তার ব্যাপার থাকে৷ তাই বেশি দূরে কোথাও যাওয়া যায় না৷ তবে বাসে করে ওদের ঠাকুর দেখতে যাওয়া এই প্রথম৷ জেলা পুলিশের জন্যই এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব হয়েছে৷ বাচ্চারা খুব আনন্দ করেছে৷” অষ্টমী ও নবমীতে হাবড়া ও বনগাঁর বিভিন্ন প্যান্ডেল ঘুরে দেখে এই কুঁচোকাঁচারা৷ উত্তর ২৪ পরগনায় দুর্গাপুজোয় বিখ্যাত বনগাঁর বড় বড় পুজো দেখে একেবারে তাক লেগে যায় তাদের৷


কেউ বলল, “এত বড় প্যান্ডেল, এত বড় ঠাকুর আগে দেখিনি কখনও৷” আবার কেউ বলে, “বাসের থেকে আকাশটা কত সুন্দর লাগছিল, আমাদের হোম থেকে তো এত সুন্দর লাগে না৷” জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “হোমের ছেলে ও মেয়েরা তো পুজোর সময় এই সুযোগটা পায় না৷ তাই আমরা চেয়েছিলাম ওদের পুজোটা একটু ভাল করে দেখাতে৷ পুলিশের যে সামাজির দায়িত্ব সেটাই একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে আমরা পালন করার চেষ্টা করেছি৷ বাচ্চারা যে আনন্দ করেছে এটাই আমাদের প্রাপ্তি৷”


Source: Sanbad Pratidin