Wednesday, November 26, 2014

বর্ধমান, বারাসতে গুদাম গড়ছে ফিউচার গোষ্ঠী

 ই-কমার্স ব্যবসা পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাবে বলে আশাবাদী ফিউচার গোষ্ঠীর লজিস্টিক ব্যবসা ফিউচার সাপ্লাই চেনের সিইও অংশুমান সিং৷ তিনি জানান, খুব শীঘ্রই গুদামঘর পরিকাঠামো গড়তে দেশে ১৫-২০ লক্ষ বর্গফুট জমিতে বিনিয়োগ করবে ফিউচার সাপ্লাই চেন৷ সিং জানান, সারা দেশে যথেষ্ট পরিমাণ গুদামঘর গড়তে ফিউচার সাপ্লাই চেন ‘৯+১১’ কৌশলে এগোচ্ছে ফিউচার গোষ্ঠী৷ ফিউচার সাপ্লাই চেন সারা দেশে ৯টি বড় শহরে গুদামঘর গড়বে৷ পাশাপাশি ১১টি উপশহরেও তৈরি হবে গুদামঘর৷ কেন্দ্রীয় সরকার পণ্য-পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু করলে পণ্য পরিবহণে যে ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন তা ২০১৬ সালের মধ্যেই তৈরি করে ফেলতে চায় ফিউচার সাপ্লাই চেন৷


অংশুমান সিং জানিয়েছেন, কলকাতাতে তো বটেই পশ্চিমবঙ্গের বারাসত এবং বর্ধমানেও পণ্য মজুত কেন্দ্র খুলছে ফিউচার সাপ্লাই চেন৷ তাদের আয়তন হবে পাঁচ লক্ষ বর্গফুট থেকে ৩০ লক্ষ বর্গফুটের মধ্যে৷ এ রাজ্যে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে সিং বলেন, ‘প্রতি বর্গফুট পিছু সংস্থার ২০০০ টাকা খরচ হয়৷ এটা স্রেফ বিল্ডিংয়ের খরচ৷ এর উপর জমি এবং অন্যান্য খরচ রয়েছে৷’ পূর্বাঞ্চলে কলকাতা-বারাসত এবং বর্ধমান ছাড়াও গৌহাটিতে গুদামঘর খুলছে ফিউচার সাপ্লাই চেন৷ এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পণ্য ডেলিভারির জন্য ফিউচার সাপ্লাই চেনের এক্সপ্রেস ব্যবসার সম্প্রসারণ করা হচ্চে বলে জানান অংশুমান সিং৷ তাঁর মতে, ই-কমার্স ব্যবসায় থার্ড পার্টি লজিস্টিক সংস্থাকে বরাত দেওয়ার প্রবণতা পণ্য-পরিবহণ ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে৷ তার কারণ বড় ই-কমার্স সংস্থা ছাড়া প্রায় সবাই থার্ড পার্টি লজিস্টিক সংস্থার উপর নির্ভর করে৷


ফিউচার সাপ্লাই চেনের প্রধান অংশীদার হল ফিউচার গোষ্ঠীর আর এক সংস্থা ফিউচার রিটেল লজিস্টিক৷ এ ছাড়া হংকংয়ের ফাং ক্যাপিটালের মালিকানা রয়েছে ফিউচার সাপ্লাইচেনে৷ সিং জানিয়েছেন, ফিউচার সাপ্লাই চেনের ৬৫ শতাংশ ব্যবসা আসে ফিউচার গ্রুপের বাইরে থেকে৷ ব্যবসায় ই-কমার্স সংস্থার অবদান শতাংশের হিসেবে এখন কম তবে তা দিন দিন বাড়ছে৷ ফিউচার গোষ্ঠীর বাইরে গাড়ির যন্ত্রাংশ, এটিএম মেশিন, ফার্মা, বৈদ্যুতিন যন্ত্র, পোশাক এবং হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রের সামগ্রী পরিবহণ করে থাকে ফিউচার সাপ্লাই চেন৷


Source: Ei Samay

Friday, June 13, 2014

বাধার চড়াই ঠেলে সাফল্যের শৃঙ্গজয় বারাসতের রিয়ার

 বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের উড়ানে সওয়ার ওরা৷ মেধার পথে কোথাও থাবা বসিয়েছিল দারিদ্র্য, কোথাও দুঃস্বপ্নের স্মৃতি৷ কিন্ত্ত সেগুলো পেরিয়েই উচ্চ মাধ্যমিকের আঙিনায় ঝলমল করছে বারাসতের রিয়া, নিমতার অনিরুদ্ধ, মাথাভাঙার অশোক, কালনার সৌরভ৷ মেধাতালিকায় স্থান পাওয়াটাই এখানে শেষ কথা হয়নি৷ বরং জীবনের যে কোনও ধরনের বাধার সামনে কী ভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই করা যায়, চার পড়ুয়ার মানসিকতায় ধরা পড়েছে সেই রহস্যেরই রামধনু৷


যেমন রিয়া ঘোষ৷ উচ্চ মাধ্যমিকে যুগ্ম ভাবে নবম স্থানে থাকা মেয়েটার যখন চার বছর বয়েস, অনেকে তাকে ঘরে তুলতে বারণ করেছিল৷ মা খুন হয়েছেন, সেই ঘটনায় বাবা হাজতে৷ রিয়ার জেঠিমাকে প্রতিবেশীরা বলেছিলেন, ‘ও মেয়েকে ঘরে রাখছ কেন? বিয়ে দেবে কেমন করে? অভাবের সংসারে বোঝা না-হয়ে যায়৷’ মানেননি জেঠিমা৷ আজ তিনি আঁচলে চোখ মুছে গর্বের সঙ্গে সবাইকে জানাচ্ছেন, রিয়া কারও বোঝা হয়নি৷ সব বাধা দূরে সরিয়ে বারাসতের মাধবপুরের রিয়া আজ কন্যাশ্রী!


অথচ কতটা দুঃসহ স্মৃতি বয়েছে সে৷ চোখের সামনে মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখেছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়েসে৷ পুলিশ এসে বাড়ি লাগোয়া গোয়ালঘর থেকে দেহ উদ্ধার করেছিল৷ মা-মরা মেয়েকে বাবা আগলে রাখবেন, এত ভালো কপাল রিয়ার ছিল না৷ স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে বাবা হারান ঘোষকেও জেলে যেতে হয়৷ রিয়ার জীবনটা তখন থেকেই ঝড়ের মুখে৷ ছ’বছরের বড় দাদাকে মামাবাড়ির লোকজন নিয়ে গিয়েছিল৷ নেয়নি রিয়াকে৷ দাদার পিছন পিছন বেশ খানিকটা দৌড়েছিল একরত্তি মেয়েটা৷ মামারা ফিরেও তাকায়নি৷ জ্যাঠতুতো দাদা দেখতে পায়, আটঘরা কালীমন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে ছোট্ট রিয়া৷ তার পর থেকেই জ্যাঠার ঘরে ভাগ্যজয়ের লড়াই শুরু রিয়ার৷ চার বছর পরে রিয়ার বাবা যখন ছাড়া পান, তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন৷ এখনও তিনি ‘বন্দি’ বাড়িরই একটা ঘরে৷ এত যন্ত্রণা সয়েও সেই মেয়ে প্রথম দশে?


উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সাংবাদিক বৈঠকে যখন কালীকৃষ্ণ গার্লস হাইস্কুলের রিয়া ঘোষকে নবম ঘোষণা করা হচ্ছে, তখন বাড়িতে বসে ভাগচাষি জ্যাঠা জয়দেববাবু চোখে জল নিয়ে বলছিলেন, ‘ভাবতে পারবেন না, কী ভাবে দিনে ২৬-২৭ কিলোমিটার সাইকেল ঠেঙিয়ে বারাসতে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছে মেয়েটা৷ উচ্চমাধ্যমিকে স্কুল থেকে শুরু করে কোচিং ক্লাস-- সবই মাধবপুর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের জেলাসদরে৷’ জেঠিমা মেনকাদেবীর কথায়, ‘ভোর চারটেয় উঠে টিফিন তৈরি করে দিতাম৷ খেয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যেত ভোরবেলাই৷ স্কুল, কোচিং সেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্তত রাত দশটা৷ ওর জ্যাঠা মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত অপেক্ষায়৷’ সে অপেক্ষা বৃথা যায়নি৷ মা-বাবার কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে যায় রিয়ার৷ তবু সে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখে৷ বলে, ‘বেসরকারি কলেজে পড়ানোর ক্ষমতা নেই জ্যাঠা-জেঠিমার৷ কিন্ত্ত ডাক্তার হতে চাই৷ দেখা যাক কী হয়’৷


এমন একটা অনিশ্চয়তার জীবন ছোট থেকে দেখেছে অনিরুদ্ধও৷ বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকে স্টেশন আধঘণ্টার পথ৷ অটোর ভাড়া থাকত না বলে হেঁটেই যেতে হত৷ তার পর শিয়ালদহে নেমে ফের কলেজ স্ট্রিট অবধি হেঁটে হেয়ার স্কুল৷ বাড়ি ফেরার সময়ও একই উপায়৷ গোটা পথে সঙ্গী বলতে দারিদ্র্য৷ নিমতার আলিপুর বাজারের সেই অনিরুদ্ধ রায়ই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চম৷ বাবা অসীম রায় প্রিন্টিংয়ের কাজ করে যা আয় করতেন, তাতে ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়াশোনা করানো প্রায় অসম্ভব৷ মা তাপসীদেবী যে কিন্ডারগার্টের্‌ন স্কুলে পড়াতেন, তা-ও বন্ধের মুখে৷ বারো বছর ধরে একটা ঘরে ভাড়া থাকা৷ সেই ঘরেই মায়ের রান্না, বাবার কাজ৷ তার মধ্যেই চলত অনিরুদ্ধর পড়াশোনা৷ প্রাইভেট টিউটরের কথা মাথাতেও আসেনি৷ একটা সময় বাবা-মা ভেবেছিলেন, আর হয়তো অনিরুদ্ধর স্কুলে যাওয়া হবে না৷ টাকা নেই৷ মাধ্যমিকের পর অনিরুদ্ধর পড়াই হত না, যদি না স্কুলের শিক্ষকরা আর্থিক ভাবে পাশে দাঁড়াতেন৷ যুদ্ধজয়ের এই দিনে তাই অনিরুদ্ধর ধন্যবাদ সেই শিক্ষাগুরুদের প্রতিও৷ বই-খাতা, পেন-পেন্সিল, প্র্যাকটিক্যালের সরঞ্জাম-- সবই তো শিক্ষকদের দেওয়া৷ আর কিছু স্বজনের সাহায্য৷ তাই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে একজন সফল শিক্ষক হতে চায় অনিরুদ্ধ৷ কৃতীর কথায়, ‘যাঁদের আদর্শ মেনে বড় হয়েছি, তাঁদের পেশাটা ভুলি কী ভাবে? ঋণশোধের কথা ভাবতে পারি না৷ কিন্ত্ত প্রতিসম্মান জানাতে শিক্ষকই হই৷ পড়ানোটা আমার বেশ লাগে৷’


প্রতিসম্মান দিতে চায় সৌরভ দাসও৷ নিজের মা’কে৷ কালনা শহরের এই মেধাবী ছাত্র মেধাতালিকায় নেই৷ ৮৭% পেয়ে নিজের স্কুল মহারাজা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সে প্রথম৷ যদিও শুধুই সেটা সৌরভের ‘পরিচয়’ নয়৷ তার সাফল্যের রুটিনে দু’বেলা গৃহশিক্ষকের সাহায্যে পড়া নেই৷ বরং রয়েছে জল তোলা, বাসন মাজার রোজনামচা৷ তার ফাঁকেই পড়াশোনা৷ একচিলতে টালি-টিনের চাল আর দরমার বেড়ার ঘরে মাকে নিয়ে বাস সৌরভের৷ মা সারা দিন ব্যস্ত বিড়ি বাঁধার কাজে৷ আর তাই সৌরভকেই হাত লাগাতে হত সংসারে৷ অথচ এমনটা না-ও হতে পারত৷ চায়ের দোকান ছিল বাবার৷ একটু কষ্ট হলেও সবই ঠিকঠাক চলছিল সৌরভের জীবনে৷ সে যখন ক্লাস এইটে, হঠাত্‍ বেপাত্তা হয়ে গেলেন বাবা৷ মা প্রথমে ছেলেকে জানাননি, এ সংসারে বাবার মন ছিল না৷ তবে হালও ছাড়েননি রিনা, সৌরভের মা৷ বিড়ি বেঁধে সংসার চালিয়েছেন৷ বন্ধ হতে দেননি ছেলের পড়াশোনা৷


আর তাই হয়তো রেজাল্টটা হাতে নিয়ে ছেলে বাড়ি ফিরতেই চোখের জল বাধ মানেনি রিনাদেবীর৷ তবে এ জয়ের কান্না৷ মায়ের কথায়, ‘স্বামী চলে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পাঁচ জনের কাছে হাত পেতে হলেও ছেলের পড়াশোনা চালাব৷ পাশাপাশি শুরু করি বিড়ি বাঁধার কাজ৷ রোজ ৫০০টা বিড়ি বাঁধলে মজুরি মেলে ৫০ টাকা৷ রোজকার খাবার আলুসেদ্ধ-ভাত৷’ সৌরভের মামা পাশে ছিলেন, স্কুলের শিক্ষকরাও বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছেন সৌরভকে৷ নাতির সাফল্যে গর্বিত সৌরভের ঠাকুমা বুলু দাস৷ চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, ‘ছেলে সংসারটাকে ভাসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল৷ ওর মুখ দেখতে চাই না আর৷ তবে নাতির জন্য ভীষণ খুশি হয়েছি৷’ ভবিষ্যতে ভূগোলের শিক্ষক হতে চায় সৌরভ৷ সে জানাল, ‘বাবার অভাব পূরণ করে দিয়েছে মা৷ তবুও ইচ্ছে আছে, বাবাকে একবার রেজাল্টটা দেখিয়ে আসব৷ জিজ্ঞাসা করব, আমরা কী দোষ করেছিলাম৷’ দোষ ছিল না মাথাভাঙার বিবেকানন্দ হাইস্কুলের অশোক বর্মনেরও৷ কিন্ত্ত জীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের ছায়াটাও ছিল না৷ মাত্র ৬ নম্বরের জন্য মেধাতালিকায় নাম তুলতে না-পারলেও লড়াইয়ের গরিমায় কৃষক বাবার মাথা তুলে দিয়েছে আকাশে৷ কোচবিহার জেলার শিকারপুর এলাকার বিজিকুটা গ্রামের বাসিন্দা অশোক৷ বাবা দেবীচরণ বর্মন নিজেদের বিঘা তিনেক জমিতে চাষ করে যে সামান্য আয় করেন, তা দিয়েই দু’বেলা দু’মুঠোর সংস্থান হয় পরিবারের৷ চাষের কাজে বাবাকে সাহায্য করত অশোক৷ সংসারের হাল ধরতে দোকানেও কাজ করতে হয়েছে৷ তবু ছেদ পড়েনি পড়াশোনায়৷ ৪৬১ পেয়ে সেই নাছোড় মনোভাবটাই দেখাচ্ছে অশোক৷


মাধ্যমিকে ভালো ফলের পর ছ’জন গৃহশিক্ষক বিনেপয়সায় তাকে পড়াতে শুরু করেন৷ শুক্রবার সেই শিক্ষকদের কাছেই নিজের রেজাল্টের খবরটা পেয়েছিল অশোক৷ ছাত্রের রেজাল্টে উচ্ছ্বসিত রসায়নের গৃহশিক্ষক মোস্তাফা সাফিক আমাল খন্দকার বলছেন, ‘এত দিনের পরিশ্রম সার্থক হল৷ অশোক খুব খেটেছে৷ প্রথম যখন এসেছিল, তখন গুছিয়ে কথা বলতে পারত না৷ নার্ভাস হয়ে পড়ত৷ সেই সব কাটিয়ে উঠেছে৷’


শুধু তো সেই বাধা নয়, বাড়ি থেকে দূরে ভাড়া করা ঘরে দিনের পর দিন থেকে শহরের স্কুলে পড়াশোনার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে অশোক৷ গ্রাম থেকে কখনও বাবা-মা এসে রান্না করে দিতেন৷ সেই ছেলেই এ বার চায় অধ্যাপক হতে৷ স্বপ্নের উড়ান তো এমনই হয়!

Source: Ei Samay

Monday, April 21, 2014

এভারেস্টে মৃত্যু মিছিল দেখে নিথর বারাসতের সুনীতা

 এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে একের পর এক নিথর দেহ দেখে একেবারে আঁতকে উঠছেন বারাসতের গৃহবধু সুনীতা হালদারের৷ বছর চল্লিশের এই মহিলা নয় বছরের ছেলে আর্যবীরকে রেখে গিয়েছিলেন এভারেস্ট৷ বাংলার কোনও মায়ের পক্ষে এটাই প্রথম অভিযান৷ তিনি আটকে রয়েছেন বেস ক্যাম্পে৷ তাঁদের ক্যাম্পের সামনেই নিথর দেহ৷


কেমন সে দৃশ্য? ফোনে বলতে গিয়ে কার্যত মুহ্যমান সুনীতা৷ এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে বললেন, ‘কপাল ভালো, তাই বেঁচে গেলাম৷ কারণ খুম্ব আইস ফলে সে সময় ধ্বস নেমেছিল, সে সময় আমাদের ওখানে যাওয়ার কথা ছিল৷ রুটিন মেনে শেরপারা তৈরি হয়েছিলেন৷ আবহাওয়া খারাপ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযান পিছিয়ে দিই৷ বাংলা থেকে যারা এভারেস্ট অভিযানে এসেছে, তাঁরা সকলেই ঠিক করেছি, আবহাওয়া ভালো হলেই তবে আবার অভিযানে যাব৷’


বলা হচ্ছে ১৩ জন মারা গেছেন তুষার ঝড়ে৷ কত জন মারা যেতে পারেন? প্রশ্ন শুনে সুনীতার কথাগুলো আর্তনাদের মতো শোনাল৷ ‘১৩ জনের মৃতদেহ তো বেস ক্যাম্পের সামনেই রাখা ছিল৷ হেলিকপ্টার এসে তা তুলে নিয়ে গিয়েছে৷ শেরপারা এসে বলছেন, আরও মৃতদেহ রয়েছে৷ বিদেশি অভিযাত্রীদের মরদেহ রয়েছে৷ সব মিলিয়ে ৪০-৫০ জন মারা গেছে বলে মনে হচ্ছে৷ আবহাওয়া ভালো হলে আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে৷ নেপাল ট্যুরিজমের কর্তারাও বলছেন, আবহাওয়া পরিষ্কার হলে আর দেহ পাওয়া যাবে৷ ’


পাহাড়ে এই দৃশ্য একেবারে অপরিচিত নয়৷ সুনীতার কথাতেও আরও পরিষ্কার৷ কিন্ত্ত কেউ বুঝে উঠতে পারেননি, এমন মর্মান্তিক দৃশ্য তাঁদের দেখতে হবে৷ আবহাওয়া ভালো হলে অভিযান কতদূর করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অভিযাত্রীদের৷ সুনীতার কথায়, ‘পাহাড়ে ওঠার জন্য রোপ একেবারে ছিন্নভিন্ন৷ তা ঠিক করা না হলে অভিযান করাই কষ্টকর হবে৷ তৈরি করতেও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে৷’


চলতি বছরে ১৪ জন পর্বতারোহী বাংলা থেকে গিয়েছেন এভারেস্টে৷ তার মধ্যে ১১ জন সাউথ কল দিয়ে, বাকি দু’জন নর্থ কল (চিনের দিকে) দিয়ে৷ সাউথ কল দিয়ে সকলেই ১০ এপ্রিলের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন বেস ক্যাম্পে৷ প্রায় আট দিন প্রবল ঝড় জলের মধ্যে দিয়ে বেস ক্যাম্পে বসে আছেন৷ কিন্ত্ত নর্থ কলের দিকে অভিযাত্রীদের কোনও খবর এখনও পাওয়া যায়নি৷


শনিবারও গোটা দিন টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে৷ প্রবল উত্‍কন্ঠার মধ্যে সুনীতা বললেন, ‘দুর্যোগের মধ্যেই সকলেই বসে রয়েছি৷ আজ এক শেরপার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ খারাপ আবহাওয়ার জন্য উদ্ধারের কাজ করাই যাচ্ছে না৷ কবে পরিষ্কার হবে, তা বোঝা না গেলেও আমরা হাল ছাড়ছি না৷’ বেস ক্যাম্প বসে ফোনে অন্য অভিযাত্রী দেবরাজ দত্ত বললেন, ‘খারাপ আবহাওয়াকে সঙ্গী করেই তো এভারেস্ট অভিযান৷’ দলের সকলেই হাল ছাড়তে নারাজ৷


সুনীতার স্বামী সুদেব হাজরা নিজেও পর্বতারোহী৷ তিনি বাড়িতে বসে ছটফট করছেন৷ বললেন, ‘সুনীতার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি বেসক্যাম্পের অবস্থা একেবারে সুবিধের নয়৷ তাপমাত্রা ক্রমশ নামছে৷ তারপর চোখের সামনে একের পর মরদেহ দেখতে পাচ্ছে, সব মিলিয়ে মনের অবস্থা আরও খারাপ৷ বাড়িতে ফোন করলে শুধু ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করে৷ জানি না, এখানে বসে আমি বা কী করতে পারি?’


Source: Ei Samay

Thursday, April 3, 2014

৩ হাজার টাকার বন্ডে জামিন পেলেন বারাসতের প্রার্থী পি সি সরকার জুনিয়র

 বারাসত আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বারাসতের বিজেপি প্রার্থী পি সি সরকার জুনিয়র। ব্যক্তিগত ৩ হাজার টাকার বন্ডে জামিন পেলেন বিজেপির জাদুকর প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে ৫০৯ ও ৩৫৪ এ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।


গতকালই পিসি সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে বারাসত থানায় এফআইআর দায়ের হয়। বারাসতে ভোটপ্রচারে বেরিয়ে কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বারাসত কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অশালীন মন্তব্য করেছিলেন।


তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়। জবাব চেয়ে পাঠায় কমিশন। কিন্তু পি সি সরকার জুনিয়রের নোটিসের উত্তর সন্তোষজনক নয় বলে জানান জেলাশাসক।


এদিকে, মদ্যপ অবস্থায় ভোটপ্রচারের অভিযোগ উঠল বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে। আসানসোল দক্ষিণ থানায় এফআইআর-ও দায়ের হয়েছে। যদিও বাবুল সুপ্রিয়র পাল্টা দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই তারকা প্রার্থী।


বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বাবুল সুপ্রিয়র। গত সপ্তাহে রোড শো চলাকালীন তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ হয়। আর এবার একেবারে থানায় অভিযোগ দায়ের হল আসানসোল কেন্দ্রের এই বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তিনি নাকি মদ্যপ অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করছেন! এই অভিযোগ জানিয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানায় এফআইআর করেছে সিটিজেন ফোরাম নামে একটি সংগঠন।


গায়ক প্রার্থীর দাবি, আগাগোড়া এটি একটি মিথ্যে অভিযোগ। তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন এই তারকা প্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে পুলিসের একাংশের ভূমিকা নিয়েও। প্রার্থীর দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যে মামলায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গোটা ঘটনা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়।


Source: Zee News