বারাসাতের ইতিহাস সুদূর প্রসারি এবং দুর্ভেদ্য। গুপ্ত যুগ থেকে শুরু করে বারাসাতের প্রেক্ষিত ইতিহাস পাওয়া যায়।
• বারাসাত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শহরটি সুন্দর বনের ‘ব’দ্বীপ আঞ্চল ছিল। তখন বারাসাতে বাঘ, কুমির তথা অন্যান্য বন্য যন্তু বাস করত। তার সাথে বাস করত বিভিন্ন প্রজাতির আদিবাসীরা।• ওই সময় বারাসাতে ‘সুবর্নবতী, লাবন্যবতী’ নামে দুতি নদী প্রবাহিত হত। যা বারাসাত কে উর্বর করেছে শস্য-শ্যামলায় ফলমূল বৃক্ষে পরিনত করেছে সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে সহায়তা করেছে, শত্রুর আগমনের পথ সুগম করেছিল। বর্তমানে নদী গুলি তার নামে ও চরিত্রে ভ্রষ্ট হয়ে ‘সুঁটি’ ও ‘নোয়াই’ নামে আত্যন্ত বিনষ্ট একটা অস্তিত্য রাখছে।
• বারাসাতের অদূরেই ‘দেগঙ্গা’ নামক জনপদ’টি তার নামের মধ্যেই বহন করছে ‘দ্বিগঙ্গা’, ‘দীর্ঘগঙ্গা’, ‘দ্বীপগঙ্গা’, ‘দেবগঙ্গা’ নামের নদী ও নদীবন্দরের বিলুপ্তির কথা বলে দেয়।
• চন্দ্রকেতুগড়ের খনা মিহিরের ঢিবি থেকে দু-কিলোমিটার উত্তরে ‘পদ্মা’ (এটি বাংলাদেশের পদ্মা নয়) এখনো বিদ্যমান। শুষ্ক জলখাদ ধরে হাঁটলে মিল্বে হারানো গতিপথের বালুকাস্তর। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রাচীন নগরীর প্রাণশক্তি ছিল পদ্মা, পদ্মাই ছিল চন্দ্রকেতুগড়ের সভ্যতা, সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মূখ্য প্রবাহ পথ।
• চন্দ্রকেতুগড়, বেড়াচাপা অঞ্চল ছাড়াও বারসাত সংলগ্ন হাটথুবা(হাবরা), মাধবপুর, বারাসাতস্থ দক্ষিণপাড়া আঞ্চলে কিছুদিন পূর্বেই উদ্ধার হওয়া বিষ্ণুমূর্তি ও বৌদ্ধ যুগের মৃৎপাত্র ও অন্যান্য দ্রব্যাদি, যা এই জনপদের প্রাচীন সংস্কৃতির পরিচায়ক।
• বর্তমানের কাজিপাড়ায় আধুনালুপ্ত সুবর্নমতী নদীর ধারে ‘জগদিঘাটায়’ ছিল প্রতাপাদিত্যের নৌঘাঁটি।
• আইনি আকবরি থেকে জানা যায়, আকবরের সেনাপতি মহারাজ মানসিংহের প্রতাপাদিত্য (১৬০০ খ্রিঃ যশোরের রাজা) পরাজিত হন এবং পরে তাদের আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রতাপাদিত্যের ব্রাহ্মান সেনাপতি সংকর চক্রবর্তীকে আকবর স্ত্রী যোধাবাইএর আনুরধক্রমে স্বসন্মানে মুক্তি দেওয়া হয়। এই সংকরের বাসস্থন ছিল বারাসাতে,যা এখনো বর্তমান বারাসাতের দক্ষিণপাড়ায়। ভক্তিমতী যোধাবাই -এর আনুরোধ ক্রমে তার সংকল্পে শঙ্কর চক্রবর্তী নিজ বাসস্থনে দুরগাপুজা করেন- ২৪ পরগনায় সেটি প্রথম দুর্গাপূজা এবং আজও বংশ পরম্পরায় পুজা হয়ে চলেছে।